||৯||
ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে বরাদ্দ করা তিনটে হুডখোলা জীপের মধ্যে সবথেকে বড়টা নিয়ে যাওয়াই সাব্যস্ত হল। কারণ তারা দা এবং দিলীপ বাবু দু’জনেই বললেন, স্পেশাল পারমিশানের ফলে একটার বেশী গাড়ি নিয়ে যাওয়াটা বিড়ম্বনার পর্যায়েই চলে যাবে, আর একটা জীপে যখন সবাই ধরেই যাবে, তখন চিন্তার কোনও কারণ নেই।
সারাদিনের কাজকর্মের মধ্যে, আজ বার বার মৈণাকের রাতের ঘটনা মনে পড়ে যেতে লাগল। কাল রাতের ঘটনাটা খুলে কাউকে বলতে পারেনি সে। কারণ স্যার হেসে উড়িয়ে না দিলেও, উনি হ্যালুসিনেশন বা কালচারাল শক-এর মতই কিছু আবার বলবেন বলে মনে হয়। সেটাতে কতটা মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে ? কিন্তু যে ভাবে বার বার, একই ধরণের জিনিস ঘুরে ফিরে দেখছে সে, তাতে মাঝে মাঝে সত্যিই মনে হচ্ছে একটা কিছু অলৌকিক, অপ্রাকৃত ঘটনা ঘটে চলেছে তার চারপাশে। সবই তার মনের ভুল নয়, হতে পারে না। দুপুরে রোদ পড়তে শুরু করার সাথে সাথেই চারপাশের পরিবেশের মধ্যে একটা অস্বস্তি কেমন যেন জমাট বাঁধতে শুরু করল আবার। মৈনাকের খালি মনে হতে থাকল, অন্ধকার নামার সাথেই যেন আবার ওই পায়ের শব্দটা তাকে ধাওয়া করে আসবে পেছন পেছন। দিলীপবাবু আজ জঙ্গলে যাবেন সার্চ পার্টি নিয়ে। তাহলে কি বেআইনি কাঠ চোরেরা ধরা পড়বে আজ ? সেটা হলে মনে একটু শান্তি পাওয়া যাবে বলে মনে হয়।
কাজকর্ম শেষ করে দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সবাই এতই উত্তেজিত, যে ঘুম কারোরই হল না; সবচেয়ে বেশী উত্তেজিত হল অসীমাভ। সে গোটা দুপুর ক্যামেরার ব্যাটারি চার্জ করে, আর লেন্স পরিস্কার করে কাটিয়ে দিল। মৈনাকের মনেও একটা চাপা উত্তেজনা, রাতে জঙ্গলে ঘোরার অভিজ্ঞতা হওয়াটা একটা বিরাট বড় ভাগ্যের ব্যাপার। দলের মেয়েদের মধ্যেও একটা চাপা উত্তেজনা খেলা করে চলেছে; অনুপ্রিয়া যদিও বলে চলেছে ‘ইটস নট সেফ… ইটস এগেইন্সট দ্য প্রোটোকলস… উই শুড কল দিস অফ…’। কিন্তু সে কথা শুনছে কে ? সমীরা যদিও মুখে কিছু বলছে না, কিন্তু মুখটা একটু শুকনো বলেই মনে হচ্ছে। পল্লবীর সেসব চিন্তা নেই, সে-ও সমান উত্তেজিত।
বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ, তারা দা এসে হাজির হল। সঙ্গে দিলীপ বাবুও এলেন। ড্রাইভার রাম দা কে সব বুঝিয়ে, তারা দার কাছে পারমিশানের কাগজ দিয়ে তিনি ‘গুড লাক’ বলে চলে গেলেন, আজ তো আবার তাঁকে দলবল নিয়ে জঙ্গলে তদন্তে বেরোতে হবে।
সন্ধ্যের অন্ধকার সবে সবে নামতে শুরু করেছে। বিকেল থেকে আকাশে একটু একটু মেঘ জমেছে, তবে এখনই বৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না, তাই জীপের হুডটা খোলাই রইল। লেপার্ডস নেস্ট থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যের রাস্তা ধরে মন্থরগতীতে চলতে শুরু করল জীপটা। ড্রাইভারের পাশে স্যার, পেছনে সবার সাথে তার দা। সরু রাস্তার বুক চিরে হেডলাইটের আলো আর সেই আলোতে দু’দিকের জঙ্গল কিছুটা দৃশ্যমান হয়েই আবার জীপের পেছনে মিলিয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তায় সবাই আগেও গেছে, কিন্তু দিনের বেলা। তবে রাতে এ যেন এক অপার্থিব অনুভূতি। ঘন্টিপোকার ডাকে মিলিয়ে গেছে জীপের ইঞ্জিনের আওয়াজ। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে; একটা বাঁক ঘুরতে হঠাৎ হেডলাইটের আলোয় একটা জন্তু দেখা গেল, রাস্তার ধার দিয়ে দুলকিচালে চলেছে হেঁটে হেঁটে, আর সেটা দেখে প্রায় আর্তনাদ করে উঠল সমীরা,
-“হায় দইয়া ! বাইসন !!”
সবাই চমকে উঠলেও, স্যার একটু ভালো করে দেখে উত্তর দিলেন,
-“ভালো করে দেখ মা, ওটা বাইসন নয়, গাইসন…”
কাছাকাছি যেতে দেখা গেল সত্যিই সেটা নিরীহ বাদামী রঙের একটা গরু।
-“না স্যার, আমার মনে হচ্ছে বাইসনের বাচ্চা…” -হাসতে হাসতে বলে ওঠে শ্বেতাংশু।
“হাতির বাচ্চা হলেও বা আটকাচ্ছে কে ?” – ফোড়ন কাটে অসীমাভ।
সমীরা মুখটা গোঁজ করে সেই যে বসে পড়ে, আর সীট থেকে ওঠে না। প্রায় পৌনে একঘন্টা পর, তারা পিচের রাস্তা ছেড়ে সন্তর্পণে জঙ্গলের ভেতরে ঢোকে। একটু ভেতরে ঢোকার পরই হেডলাইটের আলোয় একটা ছোট আকারের জন্তু, যেটা রাস্তা পেরোচ্ছিল, সেটা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেদিকে তাকিয়ে বিরস বদনে সমীরা বলে ওঠে,
-“হাঁ, ইস জঙ্গলমে গাই অর বকরী কে সিবাহ কুছ নহী মিলনে ওয়ালা…”
কিন্তু এ দাবী নস্যাত করে দিয়ে তারা দা চেনাল, হেডলাইট দেখে থমকে দাঁড়ানো বস্তুটা মোটেও ছাগল নয়, আসলে ‘বার্কিং ডীয়ার’।
এরপর সমীরার মুখের চেহারা কি হয়েছিল, সেটা না বলাই ভালো। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে একটু দুর চলার পরই তারাদা বলে উঠল,
-“এই আমরা খুনিয়ার এলাকায় ঢুকে পরেছি…”
এ কথাটা শোনামাত্র সবার বুক যে একটু কেঁপে ওঠেনি, সেটা বললে মিথ্যে কথা বলা হবে। রাস্তা খুবই খারাপ, আসলে রাস্তাও ঠিক বলা যায় না, গাছের মধ্যে দিয়ে মানুষ এবং হাতি চলাচলের ফলে একটা পথ তৈরী হয়েছে, এবং সেটা প্রচন্ড এবড়োখেবড়ো। তাই ঝরঝর শব্দ করতে করতে চলেছে জীপটা। এবং সেই শব্দে, জঙ্গলে গাছ ছাড়াও যে কিছু চলমান জীবিত কিছু নড়েচড়ে এদিক ওদিক সড়ে যাচ্ছে, সেটা বোঝা গেলেও, সে গুলো যে ঠিক কি জন্তু, সেটা বোঝা যাচ্ছে না মোটেই।

বোঝা গেল একটু পরেই, যখন জীপের গা ঘেষে হুড়মুড় করে দৌড়ে পালালো গোটা দু’য়েক স্পটেড ডীয়ার। ঘন জঙ্গল যেন আরও ঘন হয়ে আসছে ক্রমশ। আর কিছুক্ষণ চলার পর, রাস্তা এসে মিশল একটা ফাঁকা চওড়া জায়গায়। এবার থামানো হল জীপ। তারা দা জীপ থেকে নামল। দেখাদেখি অসীমাভও নামতে যাচ্ছিল, কিন্তু স্যার তাকে হাত ধরে টেনে আটকে দিলেন। তারা দাও মাথা নেড়ে বারণ করল তাকে নামতে। ঝিরঝিরে ঠান্ডা হাওয়া চলছে, আর জঙ্গলের এ ভেতরে পাতা নড়ার শব্দও হয়ে উঠেছে প্রবল। তারা দা চারপাশ একবার ঘুরে নিয়ে এসে বলব,
-“একটা জিনিস দেখবে ?”
সবাই বেশ কৌতুহলী হয়ে সমস্বরে ইতিবাচক শব্দ করতে না করতেই, তারা দার ইশারায়, রাম দা গাড়ির হেডলাইট নিভিয়ে দিল। অনুপ্রিয়া প্রথমে একবার একটা মৃদু আর্তনাদ করলেও, পল্লবী তাকে একটু ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল; আর তারপর আবার তারাদার গলা শোনা গেল।
-“কেউ কোনও শব্দ করবে না, এক্কেবারে চুপ। চারপাশে কি শুনতে পাচ্ছ, আর কি দেখতে পাচ্ছ, ভালো করে খেয়াল কর।“
প্রথমে যেটাকে ঘুটঘুটে, নিশ্ছিদ্র অন্ধকার মনে হয়েছিল, সেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখে সয়ে গেল। আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ। আর সেটার ফাঁক দিয়ে অগুনতি তারা, আর চাঁদের আলো, জঙ্গলের গাছের ফাঁক দিয়ে একটু একটু করে ভেতরে ঢুকছিল। সেটা পারিপার্শিক পরিষ্কার করে দেখার পক্ষে যথেষ্ট নয় ঠিকই, কিন্তু গাছের বহিরাকৃতি, এবং সামনে যে কত বড় বড় গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। তবে সেটাতে নিজের আশেপাশের লোকের মুখগুলোও ঠিক পরিষ্কার বোঝা যায় না। সবার মাঝে, একটা জীপের মধ্যে বসে থেকেই, নিজেকে বড্ড একা মনে হচ্ছিল তখন মৈনাকের। জীপের শব্দ অনেকক্ষণ বন্ধ হয়েছে, এখন ওই অন্ধকারের মধ্যে পাতার আওয়াজ, ঘন্টিপোকার আওয়াজ সব মিলিয়ে যে কোরাসটা তৈরী করেছে, সেটা রোজ রাতেই শোনা যায়, কিন্তু এখন শব্দটা অনেক অনেক জোরে। জঙ্গলের এই কোরাসের জলসায় প্রথম সারির সীটে যেন বসে আছে ওরা।
-“ওয়াও !!!”
অনুপ্রিয়ার মত অতবড় বেরসিকের মুখেও প্রশংসা শোনা গেল। স্যারও বোধহয় কিছু একটা বললেন, কিন্তু মৈনাকের কান সেদিকে ছিল না, সে একমনে এই অদ্ভূত সৌন্দর্য্যটাকে অনুভব করছিল। সেই মুহূর্তে কোনও ভয়, দ্বিধা মনে আসার কোনও প্রশ্নই ছিল না। কেমন যেন মনে হচ্ছিল পারলে বাকীজীবনটা এখানেই বসে কাটিয়ে দিলে মন্দ হয় না। কারোর সাথে সম্পর্ক নেই, কাউকে দু’বেলা ফোন করা নেই, কারোর কথা ভেবে রাতে বালিশ ভেজানো নেই…
-“রাম, এবার গাড়িটা ঘুরিয়ে নে, বেশীক্ষণ আর থেকে লাভ নেই…”
এই বলে জীপে চেপে বসল তারা দা। রাম দা জীপের হেডলাইটটা জ্বালাতেই এবার যে দৃশ্যটা দেখা গেল, সেটা দেখে সমীরা চিৎকার করেই দিত, কিন্তু অসীমাভ অসম্ভব ক্ষীপ্রতায় তার মুখ চেপে ধরল। বাকিরা কেউ শব্দ না করলেও, তাদের আত্মারাম যে খাঁচার দরজায় প্রবল ধাক্কা মারা শুরু করেছে, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। জীপের সোজাসুজি, গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল একটা বিরাট আকারের ভারতীয় গাওর বা বাইসন। চোখে আলো পড়ায় একটু বিরক্ত হয়েই এক দু পা পেছিয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু তারা দা আগেই বলেছিল, গাওরদের মত মাথাগরম এবং অনিশ্চিত মানসিকতার প্রাণী আর দু’টো হয় না, কয়েক বছর আগেই একবার টুরিস্টদের একটা গাড়ি চার্জ করে উলটে দিয়েছিল একটি গাওর।
-“আলো নেভা, ক্ষেপে যাবে… আস্তে আস্তে গাড়ি পেছো। তোমরা পেছনে দু-তিনটে ফ্লাডলাইট জ্বালাও…” -ফিসফিসে, কিন্তু অত্যন্ত দৃঢ় গলায় বলে উঠল তারাদা।
শ্বেতাংশু জীপের ঠিক মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে একটা ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে জীপের ঠিক পেছন দিকে মুখ করে ধরল। বাকি ডাইলে আর বাঁয়ে দু’টো আলো জ্বালিয়ে ধরল অসীমাভ আর মৈণাক।
-“পাশে আলো ফেলো, সামনে হেডলাইট জ্বালানো যাবে না এখন।”
তারাদার কথা অনুযায়ী খুব সন্তর্পণে গাড়ি ঘোড়ানো হল। কপাল খুবই ভালো বলতে হবে, কারণ এর মধ্যেও গাওরটা একচুলও নড়েনি। এবার আবার তারাদার গলে শোনা গেল;
-“রাম, টান গাড়ি, সোজা…”
জঙ্গলের ওই এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় জোরে জীপ চালানো, এবং সেই জীপে বসে একদিকে আলো ধরে থাকা যে কতটা কষ্টকর, সেটা প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া কারোর বোঝার কথা নয়; আর তাই এই ব্যাথাতুর ঘটনা কল্পনা করার হাত থেকে আমি পাঠকদের অব্যাহতি দিলাম। গাওরটা যে দাঁড়িয়ে রইল, এবং তেড়ে এল না, সেটা সৈভাগ্য ছাড়া আর কিছু তো বলা যায় না; তবে গাওরটার এই অতিরিক্ত শান্ত ব্যবহারের কারণটা জঙ্গল ছেড়ে বেরোনোর সময় বুঝতে পারল মৈনাক। পাশের জঙ্গলে আলো পরতে, সে দেখতে পেল, আর একটা গাওর, এবং তার সাথে দু’টো বাচ্চা। সক্কলে মিলে খুনিয়ার জঙ্গলে ফ্যামিলি পিকনিকে এসেছিল বোধহয়। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পড়ার পর, একটু থামল ওরা। ঘড়িতে সময় তখন প্রায় ৯টা। একটু ধাতস্থ হয়ে আবার রওনা দিল লেপার্ডস নেস্টের উদ্দেশ্যে। ফেরার পথে, আবার গা টা যেন একটু শিরশির করে উঠছিল মৈনাকের। লেপার্ডস নেস্ট-এ ঢোকার পর, কিন্তু অতটাও অস্বস্তি লাগল না। দিলীপ বাবুর এবং আর একটা অচেনা জীপ দাঁড়িয়ে তাদের রিসর্টের মধ্যে। মানে জঙ্গলে টহলদারি চলছে জোর। আজকের পরিবেশ কিন্তু স্বাভাবিক। জঙ্গলের শব্দ শোনা যাচ্ছে, ঘ্যাষঘ্যাষে শব্দটা আপাতত আর নেই, হাওয়াও দিচ্ছে বেশ।
ঘরের জানলা থেকে বাইরের জঙ্গলের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল মৈনাক। শ্বেতাংশু গান ধরেছিল…
“ছায়া ঘনাইছে বনে বনে… গগনে গগনে ডাকে দেয়া…”
মৈনাক চুপ করে অপেক্ষা করছিল, কখন আবার সেই শব্দটা পাওয়া যাবে, আজ সে আর কিচ্ছু লুকোবে না, তাহলে শ্বেতাংশু আর অসীমাভকে ডেকে নিয়ে গিয়ে দেখাবে সব। শব্দ শুরু হল না, শ্বেতাংশুর গানের সুরেই হয়তো, মেঘ ডেকে উঠল। এক ঝলক বাজের আলোয়, জঙ্গলটা একবার দৃশ্যমান হয়েই, আবার রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। অন্য কোনও অপ্রাকৃতের চিহ্নই নেই সেখানে। তাহলে কি সত্যিই, সব ভুল ?
এবার অন্য একটা শব্দ পাওয়া গেল। ‘টুং’ শব্দে একটা এস এম এস ঢুকল মৈনাকের ফোনে; তিয়াসা লিখেছে
“kmn achs ?”
<<——- Read Previous Installment
ইয়ে, সরি, এই কিস্তিটা লিখতে বড় দেরী হয়ে গেল… আসলে আমার মত টোটোকোম্পানি ঘরে বাঁধা পড়লে যা হয় আর কি… তবে চিন্তা নেই, ঘরে আছি যখন, লেখা এখন এগোবে, আর পেয়েও যাবে শিগগির শিগগির…