Wanderlust : Land of the Thunder Dragon – Part 10

দশম পর্ব : দ্যা লঙ্গেস্ট নাইট

তখনো গেম অফ থ্রোন্স শেষ হয়নি, তাই নাইট কিং মারা যাওয়ার সাথে, ভুটানের কি সম্পর্ক, সেটা যদি বুঝতে কষ্ট হয়, চিন্তা করবেন না, সেটা অচিরেই বুঝতে পারবেন।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা রওনা হয়ে পড়লুম। আমরা মানে আমি আর লাহা। কালো আকাশের চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল এ বৃষ্টি সহজে থামবার নয়। তবু, সব সিঁড়ি পেড়িয়ে যখন আমরা আবার কাফেতে এসে একটু বসে রেডবুলের দ্বিতীয় ক্যানটা গলাধঃকরণ করছি, তখন লাহা আমায় বলল,

-“নীলুদা, একটু বসে যাবে? অর্ঘদা রা এলে একসাথে নামা যেত…”

আমি আপত্তি জানালুম,

-“না রে, এখন বৃষ্টিটা থেমেছে, আবার নামলে তখন আমাদের নামা মুশকিল হয়ে যাবে, যা খাড়াই রাস্তা। এমনিতে ওয়েদার ভালো থাকলে নামতে নামতে কটা ভালো ছবি তুলতে পারব; তাতেও তো সময় লাগবে, না? ওরা আমাদের ঠিকই ধরে ফেলবে, চাপ নিস না…”

ছবির লোভে লাহা এককথায় রাজী হয়ে গেল। আমরা নামতে থাকলুম। বৃষ্টি নেই বলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, ছবি তুলে তুলে বেশ সময় নিয়ে, দুলকিচালে। মিনিট পনেরো পর, লাহা একবার ফোন করল, ধোবোকে।

-“তোমরা কোথায়, ধ্রুব দা ?”

উত্তরটা শোনা গেল না, কিন্তু লাহা বেশ গম্ভীর মুখে ফোনটা কেটে দিয়ে বলল,

-“বলল, পনেরো মিনিট আগে ক্যাফে ক্রস করেছে, আর ব্যাস্ত আছে, পরে ফোন করবে… নীলুদা, আমরাই তো পনেরো মিনিট আগে ক্যাফে ক্রস করলাম। এরা কি ট্রেকে জল মেশাচ্ছে নাকি ?”

লাহার কথা শেষ হতে না হতেই মেশবার জন্য জল আকাশ থেকে নেমে এল ঝমঝম করে। তাড়াতাড়ি ক্যামেরাগুলো ব্যাগে ভরে নিয়ে আমরা পথ চলতে থাকলাম। বৃষ্টি বাড়তে থাকল, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল। ঢালু রাস্তা দিয়ে জলের স্রোত নেমে যাচ্ছে, আর রাস্তায় চলে সত্যিই দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। রেইনকোট দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেয়ে ক্যামেরার ব্যাগটা ঢাকা ই বেশী প্রয়োজন মনে হল, আর ক্যামেরার ব্যাগ বাঁচাতে বাঁচাতে নিজে মাথা থেকে পা অবধি চুপচুপে হয়ে ভিজে গেলাম, আমি আর লাহা দু’জনেই।

আছাড় খাইনি ঠিকই, কিন্তু পা পিছলেছে বেশ কয়েকবার। তবু, কোনওরকমে নিচে নামতে থাকলাম, কারণ দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টি ধরার জন্য অপেক্ষা করাটাও সেইসময় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

বৃষ্টির দাপট কমল যদিও, তখন আমরা অনেকটাই নেমে এসেছি, রাস্তা আর খুব একটা বাকী নেই। এমনিতেও ট্রেক-এ ওঠার থেকে নামার সময় কম লাগে। আমাদের তখনো ২০-২৫ মিনিট লাগবে বলে আন্দাজ করছি, তখন আফরোজ ফোন করল লাহা কে।

-“কিরে ? তোরা কতদূর ? আমরা এইমাত্র নামলাম…”

আমরা পেছনেই আছি আশ্বাস দিয়ে আমার নামতে থাকলুম। কিন্তু মজার কথা হল, আমাদের পেছনের তিনজন তখনো এসে পৌছোয় নি। আমরা যখন নিচে পৌঁছোলাম, তখন বাজে সন্ধ্যে ছ’টা। আলো তখনো আকাশে জ্বলজ্বল করছে। নিচে নেমেই অর্ণব, হিমাদ্রী আর আফরোজের সাথে দেখা হল।

আফরোজের মুখ গম্ভীর। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করতে যেটা জানতে পারলাম, সেটা হল, সকালে যে ড্রাইভার আমাদের বলেছিল, সামান্য অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে সন্ধ্যেবেলা আবার পারো ফেরত নিয়ে যাবে, সেটা মোটেও ‘বিলাসিতা’ ছিল না। ব্যাপার হল, আগে থেকে বলে না রাখলে, এখান থেকে পারো শহরে ফিরতি গাড়ি পাওয়া অসম্ভব।

আফরোজ রেগে ধোবোকে বেদম গালাগালি করতে লাগল;

-“শালা ট্যুর কন্ডাকটার হয়েছে। কিচ্ছু জানে না যা পাচ্ছে করে যাচ্ছে…”

আমরা একটা-দু’টো গাড়ির সাথে কথা বলে রফা করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কেউই রাজী হল না। অর্থাৎ ব্যাপারটা যেদিকে এগোচ্ছে, সেটা হল, এখন পদব্রজে পারো ফেরা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। খাড়াই-এর কথা বাদ দিলে, শুধু দুরত্বেই আমাদের সারাদিনে ৮ কিমি হাঁটা হয়ে গেছে। তার ওপর আবারর ১৯ কিলোমিটার ? ভগবান তুলে নাও…

এই এত দুশ্চিন্তার মধ্যেও বাকী তিনজনের দেখা নেই। ফোন করলে বলছে, পাঁচ মিনিটে আসছি, একটু লেট হল বৃষ্টির জন্য, অনেক ঘটনা ঘটে গেছে।

সে তো ঘটতেই বাধ্য। এমনিতেই এই সফর যেরকম ঘটনাবহুল হচ্ছে, তার ওপর ধোবোদের বাঘের বাসার বাঘ বেড়িয়ে ‘ধাপ্পা’ দিয়ে গেলেও আমি আশ্চর্য্য হব না।

প্রায় ৭টা নাগাদ তিনজনের দেখা মিলল। তাদের মুখদর্শন মাত্রই আফরোজ আরও গম্ভীর হয়ে বলল,

-“এখান থেকে ফেরার গাড়ি পাওয়া যাবে না। তো তোরা কিভাবে ফিরবি ডিসাইড কর, আমি আর নীলোৎপল বেরোলাম।”

এই বলে আফরোজ হাঁটতে শুরু করল। গুরুদেবের আদেশ অমান্য না করে আমিও হাঁটতে শুরু করলাম।

শুনশান রাস্তা। একধারে পাহাড়, আর অন্যধারে বিস্তীর্ণ মাঠ, সারাদিন হাঁটার পরে, তখন আমাদের পা চলছে ‘অটোমেটিক’ মানে থামতেই চাইছে না। আমার আর আফরোজের মধ্যের দুরত্ব প্রায় ২০০ মিটার। বেশ কিছুক্ষণ চলার পর আফরোজ হঠাৎ থেমে গেল। আর আমার দিকে ঘুরে চিৎকার করে উঠল।

-“এর থেকে ভারতের যে কোনও গ্রাম ভালো !!!! রাতের সল্টলেক ভালো !!! শালা একটা গোরুর গাড়িও পাওয়া যায় না…”

আমি এ কথার কোনও উত্তর দিলাম না। হাঁটতে থাকলাম। কিছুক্ষণ বাদে একটা গাড়ি এল। তাতে চেপেচুপে বসে লাহা, হিমাদ্রী আর অর্ণব। অর্ণব খুব অপরাধ করে ফেলেছে, এরকম মুখ করে বলল,

-“তোমাদের ব্যাগগুলো দিয়ে দেবে?”

দিয়ে দিলাম। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে আমরা ভারমুক্ত হয়ে পথ চলতে থাকলুম। আরও বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর সন্ধ্যের অন্ধকার নেমে এল আর তখন হয়তো গুরু রিমপোচের করুণাতেই, হাজির হল একটা শেয়ার ট্যাক্সি, আর সেটাতে উঠে বুঝতে পারলাম, পাহার থেকে নাম্র পর আরও ১০ কিলোমিটার হেঁটে ফেলেছি আমরা।

হোটেলে পৌঁছোনোর পর, আফরোজ রাস্তার পর প্রথম মুখ খুলল,

-“ভাই, তুই অনেক ভালো ট্যুর প্ল্যান করিস… পয়সা খরচ হয় ঠিক আছে, কিন্তু এরকম হাঁড়ির হাল হয় না কারোর… এবার চল, খিদে পেয়েছে, আজ শালা পেট ঠেসে খাবো…”

যাই হোক, এমন সময় আমরা আবিষ্কার করলাম, আর এক বিপদ উপস্থিত হয়েছে। আমাদের ফ্লোরে আর একটি যে ঘর ছিল, মানে গতকাল রাতে যেখানে দু’টো মেয়ে এসে উঠেছিল, সেখানে এখন ৬-৭টি বৃহন্নলা। এবং তারা তাদের ঘরের দ্বার উন্মুক্ত করে স্বল্পবসন/বসনা হয়ে নৃত্য করছে, বাথরুমে কাপড় কাচছে, তাই বাথরুমের দরজা খোলার নাম নেই।

আমরা রিসেপশনে গিয়ে অভিযোগ জানাতে রুম সার্ভিসের লোক এসে ধমক ধামক দিয়ে বাথরুম খালি করালো; আর বলে গেল,

-“থোড়া অ্যাডজাস্ট কর লিজিয়ে, ছক্কা লোগ হ্যায় না…”

তা অ্যাডজাস্ট তো আমাদের করতেই হবে, মোগলের হাতে পড়িনি ঠিকই, খানা তো একত্রেই খেতে হবে।

তা ঘরে ভিজে জামা, জুতোর ব্যবস্থা করে রেস্তরাঁতে খেতে গেলাম। সারাদিনে অত হাঁটার পর, পেটে ছুঁচোয় ডন যে মারবে, সেটা অবধারিত, আর খেতে গিয়ে আমি যেটা করলাম, সেটা এ জীবনে একবারই করেছি। ‘ধর্ম’ তুললে তো লোকে বড্ড স্পর্ষকাতর হয়ে যায়, তাই ব্যাপারটাকে ‘সর্বজীবে সমান করুণা’ বলাই ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ বলে মনে হয়। আর এত ভনিতার কারণ হল, সেদিন আমি খেয়েছিলাম বিফ মোমো, সাথে পর্ক ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ম্যান্ডেটরী UNO খেলা, নাহলে তো পেটের ভাত হজমই হবে না আমদের।  তবে UNO-এর আসরে এবার সবাই মিলে ধোবোদের ধরা হল, এবং জানতে চাওয়া হল তাদের ওই সাংঘাতিক দেরীর ইতিহাস। এবং শোনা গেল এক কলঙ্কিত ইতিহাসের কথা। ওদের ওই দেরীর পেছনে রয়েছে যাকে বলে ‘এ সিরীজ ওফ আনফর্চুনেট ইভেন্টস…’

প্রথম ঘটনা, অর্ঘর অশীতিপর জুতোর দেহত্যাগ। তবু ধোবো আর অর্কর সাথে সামলে সামলে সে ভালোই নামছিল, এমন সময়, অর্ক আবিস্কার করে, ট্রেকের জন্য কেনা তার নতুন জুতো বিদ্রোহ করছে, অর্থাৎ, সে ঠিক ‘গ্রীপ’ পাচ্ছে না। অনেক জটিল, মানসিক গননার পর্, অর্ক তাই পায়ের ‘গ্রীপ’ বাড়ানোর জন্য, নতুন জুতোর সোলদুটোকে টেনে খুলে ফেলে। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। তখন আবার অর্ক গননা করে নির্ধারণ করে যে, সৃষ্টির আদিকাল থেকে, মানে হবুচন্দ্র রাজা এবং গবুচন্দ্র মন্ত্রীর রাজত্বের আগে অবধি, মানুষ কি জুতো পড়ত? অবশ্যই না… কিন্তু মানুষের পূর্বপুরুষ মানে ক্রোম্যাগনান বা নিয়ান্ডার্থালরা ক্রোশের পর ক্রোশ বীরদর্পে হেঁটে যেত খালি পায়ে। এই কথা মাথায় আসতেই, সে তাই জুতোর বাকী অংশ ভুটানের পাহাড়ে বিসর্জন দেয়। কিন্তু তাতেও অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয় না। মানে আদিম মানুষের পায়ের গঠনের সাথে আধুনিক হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স-এর পায়ের তফাত এবং তার পা যে জুতোর জন্য অভিযোজিত, সেটা সে বুঝতে পারে। তাই আকাশ ভাঙা বৃষ্টির মাঝে সে হতাশ হয়ে রাস্তার ধারে কাদায় বসে পড়ে। একদল ভুটানি তীর্থযাত্রী তার এই দূর্দশা দেখে তাকে বিদ্রুপ করলে, সে শুদ্ধ বাংলায় শ-কার ব-কার তুলে তাদের বাপ-বাপান্ত করা শুরু করে। এই সম্পূর্ণ মহাভারত শোনার পর, আমরা যে বেদম হেসেছিলাম, সেটা ভবলে এখনো পেটে বেদম ব্যাথা করে।

তখন বেজে গেছে প্রায় রাত দেড়টা, খেলা চলছে তখনো, ঢুলতে ঢুলতে, এ ওর গায়ে ঢলে পড়ে। সারাদিন বৃষ্টিতে ভেজার পর, আমার কিঞ্চিৎ জ্বর জ্বর ভাবে এসেছে। একটা পারাসিটামলও খেয়েছি। এমন সময় ঘরের দরজায় টোকা পড়ল।

আগেই বলেছি, সাহসটা আমার একটু বেশিই। তাই দরজাটা আমিই খুললাম। দেখি, সেই বৃহন্নলা বাহিনীর এক সদস্য দাঁড়িয়ে দরজার বাইরে…

-‘খৈনি মিলেগা ? খৈনি ?”

কি আবদার! রাত দেড়টার সময় দরজার ধাক্কে খৈনি চাইছে।

আমি বেশ রেগেমেগেই বললুম;

-“নেহী, হাম খৈনি নেহি খাতে, আপ যাইয়ে।”

আর কিছুক্ষণ বসার পর, বুঝতে পারলাম, জ্বরভাবটা পুরোপুরি জ্বরে পরিণত হয়েছে। তাই আমি প্রস্তাব দিলাম,

-“ভাই, আমি পাশের ঘরে শুতে গেলাম। তোরা বাইরে থেকে দরজা লক করে দে। রাতে যখন শোয়ার হবে, এসে শুয়ে পড়বি, আমাকে আর তুলিস না ঘুম থেকে, শরীর ভাল লাগছে না।”

কথামত আমি শুয়ে পড়লাম, আর লাহা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে UNO-এর আসরে ফেরত গেল।

রাত তখন কত হবে জানি না, অঘোরে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ অর্কর চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল।

-“না না, আমি এসব সহ্য করব না, এভাবে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট, আমি কাল সকালেই থানায় গিয়ে এফ আই আর করব…”

আমার জ্বরটা কিছুটা কমেছিল। আমি বেশ বিরক্ত হয়েই বললাম,

-“তা সকালে এফ আই আর করবি তো এখন এমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?”

এই বলে আমি আর কোনও কথায় আমল না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে যখন ঘুম ভাঙল, তখন আর জ্বর নেই। উঠে পাশের ঘরে গিয়ে শুনলাম কালকের বৃত্তান্ত। আমি শুতে যাওয়ার পর, আর এক বৃহন্নলার আবির্ভাব ঘটেছিল। সেবার দরজা খোলার দায়িত্ব পরে হিমাদ্রির ওপর। সে দরজা খুলতেই, তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে, ঘরে ঢুকে, তারা আমাদের এক প্যাকেট পট্যাটো চিপ্স, আর এক বোতল জল সাবার করে চলে গেছে।

হিমাদ্রি অপমানিত, আর ধোবোও প্রচন্ড গম্ভীর। পুলিসে না গেলেও, সে রিসেপশনে অবশ্যই যাবে অভিযোগ জানাতে। হোটেল থেকে বেড়িয়ে রিসেপশনের দিকে যাব, এমন সময় একদল লোক চোখ কপালে তুলে আমাদের বলল,

-“আজব লোক বটে আপনারা! ভোরবেলে অমন ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হল, গোটা হোটেল খালি করা হল, আর আপনাদের ডেকে ডেকে কোনও সারা পাওয়া গেল না মশাই ? হোটেলটা ভেঙে মাথায় পড়লে তো আর ঘুম আমনিতেও ভাঙত না…”

সবই গুরু রিমপোচের দয়া !

আর একদিন বাকী ভুটানে, তবে ভুটান ভ্রমণের ‘পিনাকল’ ছিল এই ট্রেক। দেখুন, গল্পের বাকীটুকু কেমন লাগে…

শান্তির আশায়,

নীল…

Advertisement

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.