Wanderlust : Land of the Thunder Dragon – Part 6

ষষ্ঠ পর্ব : থিম্ফুতে দ্বিতীয় রাত

‘সিমপ্লি ভুটান থেকে বেড়িয়ে আমরা হোটেলের দিকেই ফিরছিলাম, এমন সময় একটা অদ্ভূত জিনিস দেখতে পেলাম। একটা আস্ত ফুটবল স্টেডিয়াম। হ্যাঁ, আকারে হয়তো আমাদের যুবভারতীর সাথে তুলনা করা বাতুলতা হবে, তবু, স্টেডিয়াম তো বটে। কৌতুহলী হয়ে সেখানেই ছেড়ে দিলাম গাড়িটা। পায়ে হেঁটে কিছুদুর গিয়ে যা বুঝতে পারলাম, প্র্যাকটিশ ম্যাচ চলছে মাঠে, তাই প্রবেশে কোনও বাধা-নিষেধ নেই। আমরা ঢুকে পড়লুম।

মানছি, সৌন্দর্য্যে এবং আশেপাশে হুরী-পরীদের ঘুরে বেড়ানো দেখে ভুটানকে স্বর্গ বলা গেলেও, আমাদের ঠিক ঢেঁকি তো বলা যায় না। তবু ‘সব খেলার সেরা’ যখন, তখন ধমনীতে বাঙ্গালি রক্ত যে ফুটবলের গন্ধ পেয়ে টগবগ করে ফুটবে না, এমন আশা করাও বৃথা। তাই গিয়ে বসে পড়লুম গ্যালারিতে। গ্যালারিতে বসেই মনটা ভরে গেল, ‘এ যে দৃশ্য দেখি অন্য’। আমাদের উল্টোদিকেই ‘রয়্যাল গ্যালারি’ যেখানে স্বয়ং রাজামশাই বসে পদকন্দুক উপভোগ করেন।

রয়্যাল গ্যালারি

সেখানে বসে বসেই খেলা দেখলাম, তারপর সেখান থেকে বেড়িয়ে আশেপাশের একটা পার্কে ঘুরে টুরে দেখে এসে আবার সেই স্টেডিয়ামেই বসলাম। সেই পার্কেই প্রথম দেখলাম, ভুটানের সাইকেল আরোহী পুলিস। এদের কাজ হল, পার্কে পার্কে খোকাখুকিরা বেলেল্লাপনা করছে কিনা, সেদিকে নজর রাখা। ধোবো ক্যামেরাতে ছবি তোলায় উৎসাহিত হয়ে পড়ল। তাকে হাতেখড়ি করার চেষ্টা কিছুক্ষণ করার পড়, অন্ধকার নেমে আসছে দেখে হোটেলে ফেরাই সাব্যস্ত করা হল।

হোটেলে ফেরার আগে একটা মেলা চলছে দেখে আমরা সেখানে একটু ঘুরতে গেলুম। আর ঘুরতে গিয়ে একটা সিনেমার পোস্টারে প্রোডাকশান কোম্পানির না ‘ছুন্ডু প্রোডাকসান্স’ এবং আর একটায় ‘পেমা চোদেন’ দেখে আমরা বেদম হাসছিলাম, এমন সময় একজন ভদ্রলোক এগিয়ে এসে আলাপ করলেন, এবং আমাদের চা খাওয়লেন। জানা গেল, তিনিও একজন প্রোডিউসার, কিন্তু তার কোম্পানির নাম ‘ছুন্ডু’ নয়, বা তার পিতৃদত্ত নাম ও পদবীও পেমা চোদেন নয়। দুঃখের বিষয়, অতিথিবৎসল সেই ভদ্রলোকের নাম আমার আজ মনে নেই।  

হোটেলে ফিরে সবাই ফ্রেশ হয়ে আবার UNO-এর আসর বসাবো বসাবো ভাবছি, এমন সময় আফরোজ একটি দাবী জানালো।

-“ভাই, কাল সারারাত আমি পাশের ঘর থেকে খাটের ক্যাঁচকোঁচ শুনে গেছি। আমি আজ রাতে এনকোয়্যারিতে বেরোবো…”

আমি এক পায়ে খাড়া। জীবন মানেই অ্যাডভেঞ্চার আর এমন অ্যাডভেঞ্চার আর কোথায় পাবো। কিন্তু কথা হল, রাত গভীর না হলে এরকম এনকোয়্যারিতে কোনও লাভ নেই। তাই এক-দু’দান UNO খেলে আবার বাইরে খেতে যাওয়া হল। খেয়ে দেয়ে এসে আবার বসা হল UNO নিয়ে। এবার ব্যাপার হল, বেড়াতে যাওয়ার স্মৃতিতে মজা, আনন্দ, হাসি, ঠাট্টা, সবই থেকে থাকে, কিন্তু বন্ধুরা মিলে বেড়াতে গিয়ে অনেকের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। এখন কেউ একজন এমন কিছু কাজ করেছিল এখনো অবধি, যে আমরা তার ওপর যারপড়নাই বিরক্ত ছিলাম। গভীরে না গিয়ে বলছি, কারণ কারোর ‘চরিত্রের গুপ্তহত্যা’ করতে তো আসিনি এখানে। আমরা মনে মনে প্ল্যান করেছিলাম, ‘আও কভি UNO-এর আসরে’। তোমাকে সেখানে দেখছি, বাছাধন।

আগেই বলেছি, UNO খেলাটায় এমনিতেই, ছোটখাটো পেছনে লাগা, হালকা ‘রিভেঞ্জ ড্রামা’ এসব চলতেই থাকে। এখন ৮ জনের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে যদি বাকি ৭ জন একজোট হয়ে যায়; তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে বৈকী। তাই খেলতে বসার পড় থেকে সে গুনে গুনে ১০ বার Wild+4 কার্ড খেল। এবং সবচেয়ে আশ্চর্য্যের কথা, সে মাথামোটার একবারও সন্দেহ হল না, যে আমি একা কেন এতবার কার্ড খাচ্ছি; আমার সাথে যারা বসে আছে, তারা তো একবার কি দু’বারের বেশী খাচ্ছে না। এবং অবশ্যই, UNO খেলার সহযোগী পেগগুলো যে খুব একটা সাহায্য করছিল না, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল।

আমরা আড়ালে, এবং প্রকাশ্যে হাসতে হাসতে তার ‘দূর্ভাগ্যও কতটা খারাপ’ ইত্যাদি বলছিলাম। এসব করতে করতে, বেজে গেছে প্রায় রাত ১টা। আফরোজেরই আবার মনে পড়ল, 

-“ভাই, আমাদের এনকোয়ারিতে বেরোনো হল না তো…”

এখন কথা হল, যে কোনও বুদ্ধিমান মানবসন্তান, যে বুঝতে পারছে, খাটের শব্দ, টিভির ওপর নকল ভুরু তারপর রিসেপশনে খুল্লামখুল্লা কন্ডোমের কথা লেখা আছে, সে হোটেল যে খুব একটা সুবিধার নয়, সেটা বলাই বাহুল্য। এখন থাকতে যখন হবে, তখন নির্বিঘ্নে আজকের পরে আর একটা রাত কাটিয়ে দিলেই ঝামেলা মিটে যায়।

এটাই যেকোনো ভদ্র, বুদ্ধিমান মানবসন্তানের ভাবা উচিৎ। কিন্তু সমস্যা হল, আমরা তো সবক’টা খচ্চর…

তাই সবার আগে বেরোলাম আমি। আমার পেছন পেছন লাহা। আমাদের আশেপাশের সবক’টা ঘরের দরজায় একটা একটা করে আড়ি পাতা শুরু হল। তিনটে দরজা পেরোনোর পড়, চতুর্থ দরজায় কান পেতে বেশ মন দিয়ে শুনে, আমি লাহাকে বললাম,

-“দেখতো, পানু-তে এরকম আওয়াজই শোনা যায় কিনা ?”

লাহা কান পাতল, তার মুখটা একটা লাজুক লাজুক দুষ্টু হাসিতে ভরে গেল তারপর। আমি বললাম,

-“বাকীদের ডাক…”

কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় লাইন পড়ে গেল। সবাই এক এক করে কান পেতে শব্দ শুনছে। তারপরই অর্ঘর আবিষ্কার,

-“ওরে গান্ডুগুলো, উল্টোদিকে সি সি টি ভি লাগানো আছে…”

ব্যস, সবাই একদৌড়ে যে যার ঘরে। বেড়াতে গিয়ে এরকম অভিজ্ঞতা আমাদের এই প্রথম। তাই একচোট হাহা হিহি করে, আবার শুতে যাওয়া হল যে যার ঘরে।

কারণ কালা আমাদের লম্বা প্ল্যান। প্রথমে পুনাখা, যেটা থিম্ফু থেকে অনেকটাই দুরে, তারপর দোচু লা পাস এবং মাউন্ট ‘জোমোলহাড়ি’। আর হ্যাঁ, এখন লেখার আগে নামটা গুগল করে দেখে নিতে হল, কারণ আমাদের ট্যুর প্ল্যানার ধোবো, নামটার মার্ডার করে দিয়েছিল। একবার বলছিল “ঝোলমুহাড়ি”, একবার বলছিল “ঝালমুড়ি” একবার বলছিল “ঝোলমুরি”; মানে যা ইচ্ছে তাই।

এছাড়া যাওয়ার কথা ছিল ‘চিমি আখাং’ চিমি আখাং হল, তিব্বতী এক ‘ফার্টিলিটি গডের’ মঠ। এখানে নাকি সন্তাহীন দম্পতিরা মানত করতে যায়। এ ব্যাপারে তখন একটু মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল আমাদের সবারই, কথা হয়েছিল, কাল অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করা হবে।

সারাদিনের ক্লান্তি, রাতের অ্যাডভেঞ্চার, আবার কালকের নতুন দিন কি অপেক্ষা করছে, এইসব ভাবতে ভাবতেই, ঘুমিয়ে পড়লাম সবাই।    

বৃহস্পতিবার লিখতে পারলাম না বলে দুঃখিত। তাই আজ ‘বোনাস কন্টেন্ট ‘হিসেবে, রইল আমাদের যাত্রাপথের ভিডিও। এটা ফুন্টশোলিং থেকে থিম্ফু যাওয়ার পথে, আগের দিন দেওয়ার কথা খেয়াল ছিল না…

ফুন্টশোলিং থেকে থিম্ফুর পথে…

শান্তির আশায়…

নীল…

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.