Wanderlust : Land of the Thunder Dragon – Part I

আমার ব্লগ শুরুর পর থেকে, আমি ট্র্যাভেলগ লিখেছি তিনবার। একবার আমার প্রথম একা ট্রেক করার, দুই যখন ভাইরা মিলে ড্রাইভ করে দীঘা গেলাম, আর তিন যখন গত বছর বন্ধুরা মিলে পুরী-ভূবনেশ্বর ঘুরে এলাম। তো পুরীটা ছাড়া, আমি ব্লগে লিখেছি সারাদিনের অভিজ্ঞতা, সন্ধেবেলায় এসে। আর সারাদিনের ঘোরাঘুরির পর, মাথা আর হাত দিয়ে যা বেরিয়েছে, ঠিক তাই ব্লগে ছেপে দিয়েছি, একেবারে হাতে গরম, আর বেশিরভাগ সময়েই রাখঢাক না করেই।

কিন্তু এবারের গল্পটা অন্যরকম। কারণ আজ থেকে পাঁচ বছর আগে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলো মনে করে লেখা এবং যা মনে পড়ছে না সেখানে আপন স্মৃতির বদলে মাধুরী ঢালা… সেটাকে তো ঠিক আর ট্র্যাভেলগ বলে যায় না; তাই সেটা ভ্রমণকাহিনী বলাই শ্রেয়। এখন মজার কথা হল, ২০১৫ সালে সেই যে ভূটান গেছিলাম (হ্যাঁ, ভূটান কিন্তু বিদেশ; আমি মিথ্যে বলি না।) সেই যাত্রার সামান্য অংশ; মানে মূলত ট্রেনযাত্রাটা আমি আগেই বর্ণণা করে দিয়েছি ‘Somewhere in the Jungle of North Bengal’-এ। তাই সেই জায়গাটা বাদ দিয়ে আমার যাত্রা শুরুর অন্যদিকটা একটু বেশী বলব।

কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, এই লেখাটায় আমি বিন্দুমাত্র রাখঢাক করব না… যা ঘটেছিল, ঠিক কি ভুল সেটা আপনাদের বিচার্য্য, কিন্তু কিচ্ছু আমি গোপন করব না। শুধু একটা জিনিস ছাড়া… এই গল্পে একটি নারী চরিত্রকে দেখা যাবে; যাঁকে আমি দীর্ঘ সময় ধরে চিনতাম; আর তিনি আজ সুখে শান্তিতে ঘরকন্যা করছেন বর এবং কন্যা দুই নিয়ে; তাই সে সংসারে আগুন লাগানোর কাজ আমি করব না।

তবুও, একটা কথা মনে রাখবেন, আজকের আমি আর আজ থেকে পাঁচ বছর আগের আমি অনেকটাই আলাদা ছিল; আজ যে আমি গত তিন বছর ধরে নারীস্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা নিয়ে ব্লগে গলা ফাটাই, তার অনেক কার্যকলাপ আপনার পচ্ছন্দ নাও হতে পারে; সেরকম মনে হলে আমাকের জানান, ‘যে ভাই, তোমার এই কাজটা ভালো লাগল না…’ তবে, আমি মনে করি মানুষ একদিনে আদর্শবাদী হয়ে ওঠে না, তার জন্য অনেক ধাপ, অনেক বাধা পেরোতে হয়; আর ভুল মানুষমাত্রেরই হয় আর নিজের ভুলগুলো শুধরে এগিয়ে চলাটাই জীবনের সারমর্ম, এটাই আমি মনে করি…

আর সবশেষে বলতে চাই, আমার ভুটান যাওয়াটা অপ্রত্যাশিত ছিল, এবং খুব প্রয়োজনীয় ছিল আমার আজকের মানুষটা হয়ে ওঠার পেছনে। তাই চলুন, স্মৃতির পাতা উল্টে, চলে যাই ফুন্টশোলিং হয়ে থিম্ফু, তারপর পুনাখা আর সবশেষে পারো…

দলবল – (C) Neelotpal Sinharoy

  

প্রথম পর্ব : ফোনে ফোনে কি না হয় ?

-“প্লিজ, আমাকে ছেড়ে যাস না… তোকে হাতজোড় করে রিকুয়েস্ট করছি… তুই ছেড়ে চলে গেলে… আমি… আমি সুইসাইড করব…”

এক-দু মুহূর্তের নিস্তব্ধতা আর তারপর উল্টোদিক থেকে একটা কাঁপা কাঁপা নারীকন্ঠ উত্তর দিল;

-“প্লিজ এরকম করিস না… প্লিজ সুইসাইড করিস না… দেখ পুলিস কেসে আমার নাম জড়ালে আমার চাকরী চলে যাবে…”

আবার ক’য়েক মুহূর্তের নীরবতা, তারপর ইচ্ছে করেই একটা অতিনাটকীয় জোকারসুলভ হাসি হেসে উঠলাম আমি… জ্যাক নিকোলসনের স্টাইলে, হিথ লেজার নয়…

-“সরি… আমারই ভুল হয়েছে… ভয় নেই, করব না আত্মহত্যা, যাবে না তোর চাকরী।”

বলে ফোনটা রেখে দিলাম। মনের মধ্যে তখন গব্বর সিংরূপী আমজাদ খান দু’হাত তুলে চেঁচাচ্ছে,

-“অব তেরা ক্যায়া হোগা রে কালিয়া ?!?!?”

হওয়ার আর কি? ছয় বছরের প্রেমের পরিণতি যদি এই হয়, তাহলে আর কি-ই বা করার থাকে? হয় জামাকাপড় ছিঁড়ে দেবদাস-মজনু হয় যাও, আর তারসাথে দরজায় কড়া নাড়া সেমিস্টারের সাথে সাথে, নিজের মাস্টার্স ডিগ্রিটাও জলাঞ্জলি দিয়ে দাও। কিন্তু লাভ কি হবে? যিনি চাকরী বাঁচাতে আমাকে আত্মহনন থেকে বিরত থাকতে বললেন, তিনি থোড়াই এসে আমায় ঘুম থেকে টেনে তুলে বলবেন, যে গত ২-৩ মাস ধরে চলা মেলোড্রামাটা আদতে মেলোড্রামাই, আমার স্বপ্নের দুঃখবিলাস।

তাই আপাতত, এম এস সি ডিগ্রিটা হাতানোর দিকেই মনের চিন্তাটাকে কেন্দ্রীভূত করা উচিৎ বলে মনে হল। প্রথমে থিওরি, আর তারপর প্রজেক্ট ডিফেন্স। আর থিওরিটা নিয়ে অতটাও চাপ নেই, হয়ে যাবে; মূল হল প্রজেক্টটা তৈরী করে সেটাকে প্যানেলের সামনে গুছিয়ে বলা। কাঠি করার লোক তো সে প্যানেলে কম নেই।

আমার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ছিল বালিগঞ্জ-এ। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার পাঁচ বছরের সম্পর্কের শেষ দু’বছর এখানেই কাটিয়েছি। ডিপার্টমেন্ট ‘অ্যাটমোস্ফেরিক সায়ান্স’ মানে আবহাওয়া বিদ্যা। আর আমার প্রজেক্ট গাইড ছিলেন এস কে এম স্যার, মানে ডক্টর সুব্রত কুমার মিদ্যা। শুরুতেই যে ‘ফোনীয়’ ঘটনার কথা বললাম, তার ঠিক দু-তিন দিন পরের কথা; আমি প্রজেক্টের কাজ নিয়ে স্যারের ঘরে ঢুকছি, ঢুকেই প্রীতমের সাথে দেখা। আমার ইউনিভার্সিটিতে ওই দু’টিই বন্ধু ছিল; এক সৌরভ, মানে সৌরভ পাইন; আর দ্বিতীয় হলেন কাঁথী-নিবাসী শ্রী প্রীতম দাস মহাপাত্র। তা প্রীতম বসন্তের শুরুতেই বসন্তরোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে ছিল আজই ফিরেছে। তাকে দেখে মুচকি হেসে তার পাশে বসে ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করছি; এমন সময় সে বলল,

-“ভাই, আমি এসেই শুনছি তোর ব্রেক-আপ হয়েছে… কি করে হল?”

এর উত্তরে আমি একটা মৃদু কাঁধ ঝাঁকিয়ে চুপ করে গেলাম।

-“এ শালা অভিশপ্ত ডিপার্টমেন্ট… সবার ব্রেক আপ হয়ে গেল; আমার হল, তোর হল… অরুনাভ…

প্রীতমের কথা শেষ হতে না হতে, ঘরের অপরপ্রান্ত থেকে স্যারের গলা শোনা গেল…

-“লোকের জীবনে একবার করে তো অন্তত হয়…”

আমি বিস্ফারিত চোখে, এবং আশঙ্কিত মনে স্যারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,

-“কি হয়, স্যার?”

স্যার অম্লানবদনে উত্তর দিলেন,

-“ওই যে, পক্স… একবার তো হয়ই জীবনে…”

আমি পেটের থেকে মুখের দিকে রওনা দেওয়া হাসিটা চাপতেই দ্রুত প্রীতমের দিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম আর দু’জনে একচোট হেসে নিলাম তারপর।

-“তোমরা কাজ কর, আমি ক্লাসটা নিয়ে আসি…” বলে স্যার বেড়িয়ে গেলেন।

আর স্যার বেড়িয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠল আমার মোবাইল। কলার আইডি তে নাম উঠেছে ‘আফরোজ এহসান’। ইনি আবার আমার কলেজের মানে বি এস সি-এর বন্ধু। তখন তিনি প্রেসিডেন্সির ছাত্র।

-“হ্যালো ?”

-“ভাই ভুটান যাবি?”

-“ভুটান? কবে ?”

-“আরে আমাদের সেমিস্টারের পর, জুনের এন্ড-এ মানে ২০-২১ তারিখ নাগাদ। তাড়াতাড়ি বল, আমরা শেয়ালদা-এর টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছি…”

আমি ওপর দিকে তাকালাম, ঝুলভর্তি সিলিং ছাড়া কিছুই চোখে পড়ল না, ডানদিকে দরজা, আর বাঁদিকে প্রীতমের দাড়িভর্তি বদনটাও একবার দেখে নিলাম, এর থেকে কি উপলব্ধি হল জানি না; বললাম,

-“কেটে ফেল…”

বাড়িতে কবে বলব, জানি না। আফরোজ ছাড়া কে কে সঙ্গে যাচ্ছে, তা-ও জানি না। ক’দিনের জন্য যাচ্ছি, জানি না। শুধু জানি, এক মাস পর, সেমিস্টার শেষ হলে, আমি ভুটান যাচ্ছি।

একটু হালকা চালেই শুরু হল, কিন্তু চিন্তা করবেন না… লেখা সাথে সাথে গতি, এবং ভার দু’টোই বাড়বে…

শান্তির আশায়…

নীল…

Advertisement

2 thoughts on “Wanderlust : Land of the Thunder Dragon – Part I

  1. Arundhati Kundu

    কাঠি করার লোক তো সে প্যানেলে কম নেই।—-ফিলিং নস্টালজিক।

    Liked by 1 person

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.