Somewhere In the Jungle of North Bengal… Part XI

Seasons change with the scenery

Weaving time in a tapestry

Won’t you stop and remember me

At any convenient time?

Paul Simon and Art Garfunkel

||১১||

সর্বেশ্বর বটব্যাল শেষবারের মতো ‘বনলক্ষ্মী টিম্বার ওয়ার্ক্স’-এর বন্ধ দরজাটার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলেন। কাল রেজিস্ট্রি, আর তার পরেই পাকাপোক্তভাবে তালা ঝুলে যাবে বনলক্ষ্মীর দরজায়। আর তার ক’দিন পরেই এই ছোট্ট কাঠ চেরাই কলের কোনও চিহ্নই থাকবে না এখানে; বিলাসবহুল রিসর্ট উঠবে, অনেক ট্যুরিস্ট-এ গমগম করবে চারদিক। আর বনলক্ষ্মীর ভাঙা পাঁজরের ওপর গড়ে ওঠা সেই রিসর্টে কেউ মনে রাখবে না একজনের মরে যাওয়া স্বপ্নের কথা। একদল শ্রমিকের কথা, যারা রোজ হাসিমুখে সকাল থেকে সন্ধ্যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তিল তিল করে একটা সুন্দর জীবন গড়ে তোলার কথা ভাবত।

মালিক হিসাবে কখনো গা জোয়ারির আশ্রয় নিতে হয়নি সর্বেশ্বরকে; তিনি এখানকার ভূমিপুত্র না হলেও, এখানকার সরল সাদাসিধে লোকগুলোকে ভালবেসে, তাদের সাথে মানিয়ে নিয়ে নিজেও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শ্রমিকেরা তাঁকে বড়দা বলেই ডাকত। অকৃতদার সর্বেশ্বরও তাদের সাথে মিশে গেছিলেন, পালপার্বনে নিমন্ত্রনরক্ষা করতে যেতেন। লোকগুলোকে তিনিও বড় ভালোবেসে ফেলেছিলেন। প্রথমে ভেবেছিলেন বনলক্ষ্মী বিক্রি হয়ে গেলে আশেপাশে কোথাও একটু জায়গা কিনেই থেকে যাবেন; কিন্তু যতবার মনে হচ্ছে চোখের সামনে একদল লোক এসে টুকরো টুকরো করে তার সাধের কারখানাটা ভেঙে ফেলবে, ততই আর এখানে থাকার ইচ্ছেটা চলে যাচ্ছে।

-“এত্তো কি সোচ করছেন, সারবো বাবু ?”

পাশ থেকে উদয় হলেন লাহোটি রিয়াল এস্টেটের সঞ্জয় লাহোটি। বাবার হোটেল ব্যবসার উত্তরাধিকারী, এবং বাবার কথামতো সেই কোম্পানির হয়ে সর্বেশ্বরের সাথে কথা বলতে এসেছে সোজা মুম্বই থেকে। জোয়ান ছেলে, কিন্তু মুখ দেখলে খুব ধূর্ত এবং কুটিল মনে হয়; আসলে সব ব্যবসাদার তো আর সর্বেশ্বরের মতো নয়; কারোর কাছে টাকা, প্রফিটের গুরুত্ব অনেক বেশী হয়।

-“না, কিছু না, আসলে লাহোটি জি, মায়া পড়ে গেছে বড্ড…”

-“মায়া পড়ে গেলে ফায়দা হোবে কেমুন কোড়ে ? আরে সোচিয়ে, আপ কা স-মিল কা তো কল্যাণ হো চুকা হ্যায়; ও ইউনিয়ন এমুন ঘোটালা করেছে, এখুন তালা খুললে তো জেল আপকো জানা পড়েগা…”

-“সে তো বুঝছি…”

-“দেখেন, হো সাকতা হ্যায় কি ইউনিয়ন কা ইয়ে ঘোটালেকে পিছে কোই দো-চার আদমী হ্যায়; জো পার্টির প্যায়সা লিয়ে সব চক্কর চালাচ্ছে; লেকিন উস লিয়ে জিতনা পেটি খিলানা পড়েগা; সে তো আপনি পারবেন না; অর ইয়ে ভি দেখুন, ডিউটি আওয়ার্সে একটা ছেলের মওত ভি হোয়ে গেছে…”

মৃদু মাথা নেড়ে সর্বেশ্বর চুপ করে যান। লোক কে বিশ্বাস করার ফল এটাই হয়। বিশু যখন তার বড় ছেলে মনীলাল কে এনে কারখানায় ঢোকাতে চায়, তখন প্রথম দেখেই সর্বেশ্বরের সন্দেহ হয়েছিল;

-“হ্যাঁ রে, তোর ছেলের বয়েস কত ? ১৮ পার করেছে তো ?”

-“হ্যাঁ বড়দা, এই ২ মাস আগে ১৮ পার করল…”

লোকটার মুখের কথায়, আর তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা জেনে কাজে রেখে দিয়েছিল সর্বেশ্বর। পাহাড়ে লোকের বয়স বোঝা একটু মুশকিল। কিন্তু কাজে ঢোকার দু’মাসের মাথায় যে সে ছেলে স-মিলের মধ্যেই দুর্ঘটনায় মারা যাবে, এবং তখন জানা যাবে ছেলেটির বয়স ১৬, এটা আন্দাজও করতে পারেননি সর্বেশ্বর।

শ্রমিকদের মধ্যে ১০০ শতাংশই মালিককে দেবতার চোখে দেখত না; কিছু কিছু সুযোগসন্ধানী সবসময়ই ছিল। এখন লেবার ইউনিয়নের সে রকমই কিছু লোক এই ঘটনার পরে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার মদতে জলঘোলা করতে শুরু করে; এবং মনীলালের বাবাকে একটা ভালোরকম অর্থ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, শ্রমিক অসন্তোষ চরমে ওঠে, এবং কারখানার দরজায় তালা ঝোলে; এ হেন অবস্থায় লেবার ইউনিয়নের এক জনদরদী নেতাই একদিন পরামর্শ দিয়ে এলাকার ‘দাদা’র সাথে সর্বেশ্বরের দেখা করায়; তিনি আকারে ইঙ্গিতে বোঝান, তার ঝুলিতে মোটা মোটা কয়েকটা বান্ডিল ফেললে তিনি ব্যাপারটাকে সামলে নিতে পারেন। না হলে কারখানা তো খুলবেই না, উলটে থানা-পুলিস-আদালত এমনকি জেল অবধি গড়াতে পারে ঘটনাটা।

স্থানীয় থানার অফিসারের সাথে বিশেষ সখ্যতা ছিল সর্বেশ্বরের। তিনি বেশ দুঃখের সঙ্গে জানালেন এখন রুলিং পার্টি তার হাত-পা বেঁধে রেখেছে। দিন দিন সমস্যা বাড়তে থাকল; সর্বেশ্বর বুঝে গেলেন, যে পরিমাণ উপঢৌকন চাওয়া হচ্ছে, তা যদি কোনওভাবে জোগাড়ও করে ফেলা যায়, তারপর আর এই স-মিল খুলে রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না; আর তখনই রিসর্ট তৈরীর প্রস্তাব সহ লাহোটি রিয়াল এস্টেটের আবির্ভাব।

হয়তো সর্বেশ্বরের আড়ালেই রফা হয়ে গেছে পার্টি ফান্ডে কত যাবে সে নিয়; কিন্তু ভেবে আর লাভ কি ? এখন সাধের বনলক্ষ্মী স-মিল হাতছাড়া না করে রেহাই নেই। এসব ভাবতে ভাবতেই, বনলক্ষ্মীর সীমানা ছেড়ে নিজের আপাত বাসস্থানের দিকে রওনা হন তিনি। বনলক্ষ্মীর সীমানার মধ্যেই তার ছোট্ট একটা বাংলো ছিল; কিন্তু মালিকানা হাতবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই সব জিনিসপত্র, খাটবিছানা গাড়িতে তুলে কলকাতা পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন আছেন তাঁর বন্ধু বিনয়ব্রতর বাড়িতে। বিনয়ব্রতর কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট আছে, আর সেখানেই আপাতত ছ’ মাসের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকার বন্দোবস্ত করেছে; বিনয়ব্রত বংশানুক্রমে চা বাগানের মালিক; টাকা জীবনে অনেক দেখলেও অর্থপিশাচ হতে পারেনি, আর সেইজন্যই বোধহয় দু’জনের এত মিল।

বিনয়ের বাড়ির রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ একটা কাজ মনে পড়ে যায় তাঁর। আর রাস্তা বদলে তিনি চলতে শুরু করেন কুলিবস্তির দিকে। এখানে সে এসেছে বহুবার; কখনো এর বাড়ি, কখনো ওর বাড়ি, পালে পার্বনে। কুলিবস্তির ভেতরে একটা সংকীর্ণ কোণে; টিনের একটা দরজায় গিয়ে টোকা দেয় সর্বেশ্বর।

-“বিশু আছিস নাকি রে ? বিশ্বনাথ ?”

দু’ একবার টোকা মারার পর, বিশ্বনাথের বৌ দরজা খুলে দেয়। সর্বেশ্বরকে দেখে ঘরে ঢোকায় সে। বিশ্বনাথ তার ছোট ছেলেটার সাথে বসেছিল; উঠে এসে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে একটা টুল এগিয়ে দিল, আর নিজে উবু হয়ে বসল তাঁর পায়ের কাছে।

-“কাল লেখাপড়া হয়ে যাচ্ছে রে, বিশু…”

কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা কেঁপে যায় সর্বেশ্বরের। বিশুর চোখটাও ছলছল করে ওঠে।

-“আমি সামনের মাসেই বোধহয় চলে যাচ্ছি…”

এবার বিশু হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে;

-“বড়দা… আমি জানতুম নে এরম হবে বড়দা… আমার ছেলেটা, কাঠকল, আপনি… সব চলে গেল বড়দা।”

অনেক চেষ্টা করে চোখের জল আটকায় সর্বেশ্বর।

-“কাঁদিস না রে, কাঁদিস না… সবই অদৃষ্ট, নাহলে ওরকম জোয়ান ছেলে…”

বলতে বলতে কাঁধের ঝোলাটা নামিয়ে সেটায় হাত ঢুকিয়ে দু’টো মোটা মোটা টাকার বান্ডিল বের করে বিশুর দিকে এগিয়ে দেন তিনি। বিশু কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়তে থাকে জোরে জোরে; কোনো উত্তর দেয় না। একটু ধমকের সুরেই বলে ওঠে সর্বেশ্বর।

-“শোন, পাগলামো করিস না; বড়দা বলে ডেকেছিস যখন, তখন ছোট ছেলেটার কথা ভেবে এগুলো রেখে দে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, খাবি কি তাহলে ?”

বিশু বাচ্চা ছেলের মতো ফোঁপাতে ফোঁপাতে টাকাটা হাতে নেয়।

-“আমি চলি; যার কাছে বিক্রি হচ্ছে, আমি তাকে বলে দিয়ে যাব যাতে হোটেল চালু হলে তুই একটা কাজ পাস ওখানে; তবে সেই ভরসায় বসে না থেকে অন্য কাজের চেষ্টাও করিস। বৌমা আর ছেলেটার খেয়াল রাখিস। কি নাম যেন ওর ?”

-“রতন, বড়দা… বড়টা মণি, আর ছোটটা রতন…”

এই বলে আবার কেঁদে ফেলে সে। সর্বেশ্বর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার কাঁধে একটা মৃদু চাপড় মেরে উঠে পড়েন।

মণিলাল আর রতনলাল। চোখের সামনে মনির ভয়ঙ্কর মৃত্যু দেখেছে তার বাবা; এখন কত বিনীদ্র রজনী যে কাটাতে হবে, কেউ জানে না। বড় গাছের গুঁড়ি ইলেক্ট্রিক স এক ওপর বসাতে গিয়ে, টাল সামলাতে না পেড়ে মণিলাল স-এর ব্লেডের ওপরই পড়ে যায়। তারপরের দৃশ্যটা হলিউডি হরর ছবিও অত ভালোভাবে দেখাতে পারে না, যেটা সেদিন ঘটেছিল। দিনটার কথা ভাবলে এখনো আতঙ্কে শিউরে ওঠেন সর্বেশ্বর নিজেই।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর, বিনয়ের সাথে কথা হচ্ছিল বসে বসে,

-“কোলকাতায় গিয়ে মানাতে পারবি তো তুই ? শেষ ২২টা বছর এই জঙ্গলে কাটালি; আর এখন হঠাৎ একেবারে শহরে…”

-“প্রথম প্রথম হয়তো অসুবিধা হবে রে; রাতে ঘন্টিপোকার বদলে বাস আর গাড়ির হর্ণ; আর জানলা দিয়ে জোরালো আলোর তেজ… ঘুমের অসুবিধা তো প্রথম প্রথম হবেই। তারপর, দেখা যাবে… অভ্যাসে কি না হয়…”

-“থেকে যেতে পারতিস; এখানে লিভিং কস্ট অনেক কম, এত ভালো পরিবেশ, পলিউশনও কম…”

-“ভেবেছিলাম, কিন্তু পারব না, ভাই; চোখের সামনে বনলক্ষ্মীকে নষ্ট হতে দেখতে… হতে পারে চেরাই কল, হতে পারে গাছ কাটতাম, কিন্তু কতগুলো লোকের জীবন জড়িয়ে ছিল বল তো ? আর এখন স্বার্থপরের মত নিজের আখের গুছিয়ে নিয়ে কেটে পড়ছি।”

-“তা নয়ত কি করতিস ? সব টাকা দান খয়রাত করে নিজে ভিক্ষে করে মরতিস ? বি প্র্যাকটিকাল, সাবু… বিশ্বনাথের ফ্যামিলিকে দিয়েছিস, দে ডিজার্ভ দ্যাট। কিন্তু বাকি যে নির্লজ্জ লোকগুলো তোর মত মালিক পেয়েও কারখানা বন্ধ করার পরিকল্পনাটা করল, দে ডোন্ট ডিজার্ভ ইয়োর জেনেরসিটি।”

সর্বেশ্বর চুপ করে যায়। বিনয়ব্রত বুঝতে পারেন, শুধু একটা চেরাই কল নয়, জীবনের একটা বড় অংশকে কাল টাকার অঙ্কে মেপে বিসর্জন দিতে চলেছেন তাঁর বন্ধু । এ দুঃখ কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়।

ঠিক চারদিন বাদে সর্বেশ্বর কোলকাতা রওনা হয় রেজিস্ট্রির পরের দিন থেকেই প্রাণ অতিষ্ট হয়ে ওঠে যেন, আর সাতদিনের মাথায় একগাদা বুলডোজার এসে বনলক্ষ্মী টিম্বার ওয়ার্কস-কে নিশ্চিহ্ন করে দেয় উত্তরবঙ্গের বুক থেকে। হয় নতুন রিসর্টের শিলান্যাস; কাজ চলতে থাকে পুরোদমে। আরো দেড় বছরের মাথায় একটা ঝাঁ চকচকে রিসর্টের উদ্বোধন হয়। খুলে যায় ‘লেপার্ডস নেস্ট রিসর্ট অ্যান্ড লিজার – অ্যা প্রোজেক্ট অফ লাহোটি রিয়াল এস্টেট’। লোক সমাগম শুরু হয়, টুরিস্ট থেকে কর্পোরেট রিট্রিট, সবেতেই উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা রিসর্ট হয়ে ওঠে ‘লেপার্ডস নেস্ট’।

মালিক সঞ্জয় লাহোটি জীবনের প্রথম প্রজেক্টের মায়া ছাড়তে পারে নি; বাবার মৃত্যুর পর, বড় ভাই-এর সাথে কোম্পানি সামলাতে সামলাতে গোটা ভারতে আরও অনেক নতুন প্রোজেক্ট করার পরও, মাঝে মাঝেই লেপার্ডস নেস্ট-এ কয়েকটা দিন কাটিয়ে যেত সে; তখন প্রতি রাতে স্কচের ফোয়ারা ছুটত, এস্কোর্ট আর স্থানীয় কিছু স্তাবকদেরও আনাগোনা লেগে থাকত। কিন্তু এর মধ্যেই একটা ঘটনা ঘটে গেল; সেবারও সঞ্জয় অনেকদিন পরে এসেছে, আগের রাত্রে উদ্দাম পার্টি হয়েছে লেপার্ডস নেস্ট-এ।

পরদিন সকালে থানায় অভিযোগ যায় এইরকম, স্থানীয় দু’টি মেয়ে লেপার্ডস নেস্ট-এ রুম সার্ভিসের কাজ করত।প্রতিদিন রাত দশটায় ডিউটি শেষ করে তারা বাড়ি ফিরলেও, কাল রাতে তারা আর ফেরেই নি।

ও সি নিরঞ্জন লাহা এনকোয়ারি শুরু করলেন। রিসর্ট-এ সবাইকে জেরা করা হল, লাহোটি সহ। কথায় বোঝা গেল রাতে লাহোটির ঘরে স্থানীয় তিন চার জন লোক ছিল, এবং খাবার ও পানীয় ওই মেয়েদু’টিই নিয়ে যায়। সঞ্জয় লাহোটি গভীর জলের মাছ, উকিল এবং আইনের মারপ্যাঁচে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রইল। কিন্তু বাকী তিনজনের পকেটের জোর না থাকায়, লাহা দারোগার হাতে বেধড়ক ঠ্যাঙ্গানি খাওয়ার পর তারা স্বীকার করল, সেদিন রাতে আকন্ঠ মদ্যপানের পর, লাহোটি সহ তারা চারজনে মেয়েদুটিকে ধর্ষণ এবং খুন  করে লেপার্ডস নেস্টেরই বাউন্ডারী ওয়ালের পেছনে পুঁতে দিয়েছে। কথামত লাশদু’টোও পাওয়া গেল। নিরঞ্জন বাবু কেস সাজালেন, এবং যথারীতি আইনের গোলকধাঁধার প্যাঁচে লাহোটি জরিমানা দিয়েই খালাশ হলেন, যেখানে বাকী তিন মূর্তিমান জেলে গেল। এদের মধ্যে একজন বনলক্ষ্মীর লেবার ইউনিয়নের প্রাক্তন সভাপতিও ছিল।

সঞ্জয় লাহোটি বেঁচে গেলেও, বাঁচল না লেপার্ডস নেস্ট; এরকম ঘটনা ছড়ানোর পর লোক আসা কমতে লাগল, নানা গুজব রটতে থাকল লোকমুখে; এমনকি জমির দামও পড়ে গেল। তাই শুরু হওয়ার চার বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেল লেপার্ডস নেস্ট। লাহোটি রিয়াল এস্টেটের বড়কর্তা অজয় লাহোটি ব্যাপারটিকে ব্যাড ইনভেস্টমেন্ট বুঝে এবং কোম্পানির গুডউইল ফেরানোর জন্য, নামমাত্র খরচে ৯৯৯ বছরের জন্য গোটা লেপার্ডস নেস্ট বনদপ্তরের কাছে লীজ দিয়ে ঝাড়া হাত পা হয়ে গেলেন।

মাত্র ছ’ বছর। তারমধ্যেই সব ভোজবাজীর মতো পাল্টে গেল চোখের সামনে দিয়ে। এককালের রম রম করে চলা স মিল প্রথমে ভেঙে রিসর্ট, আর তারপর সেই রিসর্টের চাকচিক্য মুছে গিয়ে এখন একটা আধা ধ্বংসস্তুপ হয়ে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলের কোথাও একটা জলজ্যান্ত কলঙ্কের মত রয়ে গেল লেপার্ডস লেস্ট। সর্বেশ্বর কোলকাতা থেকে অনেকদিন পর যখন আবার এলেন, একদিন রাতে তখন জায়গাটার অবস্থা দেখে চোখে জল এল তঁড়। এককালে যেখানে তার কটেজটা ছিল, সে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। সামনের বহুদিনের পরিচিত জঙ্গলটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হল, এখনো যেন জঙ্গলের ভেতর থেকে কাঠ চেরাইয়ের শব্দ ভেসে আসছে, বনলক্ষ্মীর আত্মা যেন কেঁদে বেড়াচ্ছে ওই জঙ্গলে।   

কি মনে হচ্ছে ? কিছু আন্দাজ করা যাচ্ছে কি ? ভাবুন, ভাবুন… অনেক সময় আছে…

<<———————– Read Previous Installment

Advertisement

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.