তৃতীয় পরিচ্ছেদ – সারপ্রাইজ !!!
<<Read Previous Installment Read Next Installment >>
পল্লবীর ঘুম ভাঙে মোবাইলের ডাকে। বিপ্লবের ফোন, রোজকারের মতো; চোখটা কোনরকমে খুলে ফোনটা কানে তোলে সে।
-“হ্যালো!”
ওপাশ থেকে গানের শব্দ ভেসে আসে…
-“রাই জাগো রাই জাগো গো…”
-“আচ্ছা, হয়েছে, বুঝেছি… উঠছি তো, লোকে কি চোখ খুলেই দড়াম করে উঠে বসবে নাকি ?”
-“না, সেটা বলিনি… কিন্তু মহাশয়া যে বলিয়াছিলেন তাহার বিদ্যালয়ের বান্ধবীদের সহিত পূনর্মিলন জাতীয় একটি অনুষ্ঠান আছে…”
-“এবার আমি বলি ? দোকানে কার্ডগুলো ছাপাতে দিস না, তোকে আমি বিয়ে করতে পারব না…”
-“সে কিইইইইই !!! কেনওওওওও ???”
-“আর নাটক করিস না; একবার লোকগীতি, একবার ‘কাষ্ঠ গদ্যে বাক্যালাপ’! এসব মাঝে মাঝে নেওয়া যায় না! স্টুডেন্টদের সামনেও এমন করিস? আপ্লায়েড ম্যাথের প্রফেসর, না ভাঁড় ভাবে তোকে?”
-“ফর ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমি আমার কোনো ছাত্র/ছাত্রীর সাথে প্রেম করি না,তাই লোকগীতি আউট অফ কোয়েশ্চেন; আর তারা আমাকে (গলা খাঁকড়ে) রীতিমত ভয় পায়…”
-“হা হা হা হা হা !!! জোক অফ দ্যা ইয়ার ! তোকে নাকি স্টুডেন্টরা ভয় পায়, এত ভয় পায় যে জয়েনিং এর দিন ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র ভেবে ইন্ট্রো দিতে বলেছিল…”
-“ও সব সাজানো ঘটনা; কলেজে আমার দাপটে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়!”
-“জানি, তোর স্টুডেন্টগুলো সবকটাই গরু, পিথাগোরাস থিওরেম জিজ্ঞেস করলেও আমতা আমতা করে। কিন্তু, প্রশ্ন হল বাঘটা কে ?”
-“কেন ? এস কে বি ?
-“এস কে বি নাকি তোকে ভয় পায় ? হেসে বাঁচি না। তুই থাম। তোর ক্লাস নেই এখন?”
-“ম্যাডাম, আজ আমার অফ ডে! আজ কে তো অন্তত রেহাই দিন! আমি ক্যামেরা নিয়ে বেরোচ্ছি, সাঁতরাগাছি যাব।”
-“ওওওওও রাইট… ঠিক হ্যায়। চল, আমি উঠি; বাকিগুলোকে তাড়া না মারলে কেউ বেরোবে না…”
-“ঠিক হ্যায়… চল… একটা মুচু দে…”
-“তোর এই ন্যাকামোগুলো না নেওয়া যায় না; শুনলে মনে হবে কেউ ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস লিখছে…”
-“(দীর্ঘশ্বাস) আর কি! এখনই এই! বিয়ের পর কপালে শুধু ঝাঁটা লিখিতং…”
পল্লবী কিছু কথা না বলে চুপ করে যায়… কি যেন ভাবে একমুহূর্ত; তারপর বলে ওঠে
-“বাবু…”
-“বল!”
-“বাবা এখনো মুখটা গোমড়া করে আছে; বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে গেল, বিয়েতে মত দিল; সবই… কিন্তু যেন প্রতি পদে পদে মনে করিয়ে দিচ্ছে, যে তোকে বাবার একটুও পচ্ছন্দ নয়…”
-“এটা নিয়ে এত চাপ নিচ্ছিস কেন বলতো? আমাকে পচ্ছন্দ করেন না; ওকে ! আরে বাবা বিয়েতে মত তো দিয়েছেন! উনিও বোঝেন যে আমরা একসাথে ভালো থাকবো। উই উইল বি হ্যাপি টুগেদার। আর তাই সবটা ওনার মনমতো না হলেও উনি মেনে নিচ্ছেন…”
-“কিন্তু পরে যদি…”
-“আবার পরে যদি? পরে যা হবে সেটা দেখা যাবে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এই ব্যাপারটাই বড্ড গজকচ্ছ লাগে আমার; কিন্তু তোর বাবার আর আমার যে বেসিক মিল টা আছে সেটা ভুলে গেলি?”
-“কি বেসিক মিল?”
-“ওই যে! উনি আমাকে পচ্ছন্দ করেন না, আমিও ওনাকে পচ্ছন্দ করি না…”
-“এই, তুই যা তো! গিয়ে ওই পাখির পেছনেই দৌড়া… কাজকর্ম নেই, সারক্ষণ খালি ভাঁড়ামো! যা ভাগ…”
হাসতে হাসতে ফোন ছেড়ে দায় পল্লবী। আজ তার বন্ধুদের তার বিয়ের খবরটা জানিয়ে সারপ্রাইজ দেবে। বিপ্লবের সাথে ইউনিভার্সিটিতে আলাপ; আর সেখান থেকেই প্রেম। মাস্টার্স আর পি এইচ ডি করে এখন দু’জনেই চাকুরিজীবি; বিপ্লব একটা কলেজে পড়ায় আর পল্লবী একটা কোম্পানিতে অ্যানালিস্ট। তথাকথিত সচ্ছল ঘরের মেয়ে পল্লবীর সাথে ছোট থেকে দারিদ্র আর কষ্টের সাথে লড়াই করে বড় হওয়া বিপ্লবের বিয়ে দিতে, পল্লবীর বাবার একটু আপত্তি ছিল; কিন্তু বিপ্লবের বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে অবশেষে গোমড়া মুখে হলেও মেনে নিয়েছেন তিনি।
বাবার এই গোমড়া মুখটাকেই বড্ড ভয় পল্লবীর; কখন কি বলতে কি বলে দেবেন; এইসব ভেবেই মাঝে মধ্যে চিন্তায় পড়ে যায়। প্রেম করে যারা বিয়ে করছে, তাদের সবচেয়ে বড় চিন্তা, অন্তত আমাদের দেশে যেটা, সেটা হল নিজেদের পরিবার নিয়ে। দু’টো পরিবারের মিল হবে তো? কোনো সমস্যা হবে না তো?
এসব ভাবতে ভাবতে বন্ধুদের কথা মনে পড়ে যায়।তার বিয়ের খবর শুনে সমৃদ্ধার কি রিঅ্যাকশন হবে, সেটা ভেবে মনে মনে হাসে পল্লবী। তখনই পর পর ফোন করে সমৃদ্ধা আর রাগেশ্রী কে। রাগেশ্রী যথারীতি তার ব্যাস্ততার কথা জানাতে ভোলে না, স্বামী নিয়ে, সংসার নিয়ে। এরপর সঞ্চারীকে ফোন করে পল্লবী; ফোন বেজে বেজে কেটে যায়। ফোন আর চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে, বাথরুমের দিকে যায় পল্লবী।
জীবন নিয়ে তার অভিযোগের কোনো জায়গা নেই। ঘর থেকে বর, কোনোটাই ফেলনা নয়। কলেজের প্রফেসর বিপ্লব সরকারের একটাই দোষ, সবসময় ভাঁড়ামো করা। তা না হলে এরকম স্বামী পাওয়া যে কোন মেয়ের কাছেই ভাগ্যের ব্যাপার। বাবাও সেটা বোঝে বলেই বিয়েতে মত দিয়েছে। মুখ গোমড়া করে থাকার হাজারটা কারণই তো থাকতে পারে!
স্কুলের দিনগুলো মনে পড়ে যায় পল্লবীর; তার আর সঞ্চারীর দৌরাত্মে সমৃদ্ধা স্যার-ম্যাডামদের কাছে গালাগাল খেত, আর মুখ গোমড়া করে স্কুলবাসে উঠলেই পল্লবী আর সঞ্চারী দু’জনে দু’দিক থেকে জাপটে ধরে ‘রাগ করিসনা ভাই’ বলে অত্যাচারের ভঙ্গীতে আদর করত।
সঞ্চারীর কথা ভেবে মাঝে মাঝে অবাক লাগে পল্লবীর। অমন ডাকসাইটে সুন্দরী মেয়ে, সারাজীবন কারোর ধার ধারেনি, সে বাবা-মায়ের এক কথায় একটা অত্যন্ত কনজারভেটিভ ফ্যামিলির একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করে ফেলল?
কি ভেবে যে এমন সিদ্ধান্ত নিল, কে জানে!
সঞ্চারীর বিয়েতে অনেক মজা করেছিল ও আর সমৃদ্ধা। বিয়ের সময় তো আর জিজ্ঞেস করা যায় না, কেন বিয়ে করছিস! তবে মিথ্যে বলবে না, সঞ্চারীর বরটিকে দেখতে শুনতে মন্দ হয়নি; লম্বা, ফর্সা। মানে একেবারে ‘প্রোটোটাইপ’ সরকারী চাকুরে নয়। দু’জনকে মানিয়েছিল বেশ। বিয়ের পর সঞ্চারীর সাথে আবার এই প্রথম দেখা। বিয়ের পর একটু ঘরকুনো হয়ে গেছে মেয়েটা। আজ অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে তাকে।
মুখচোরা সমৃদ্ধাও নাকি প্রেম করছে আজকাল। ছেলেটির নাম আদিত্য। এইটুকুই জানে। আজ জমিয়ে ওর লাভ স্টোরিটা শুনতে হবে।
স্নান করে মা আর বাবার সামনে গিয়ে একবার মুখটা না দেখালেই নয়। তাই ‘মা এলাম’, ‘বাবা এলাম’ বলতে বাবা বলে উঠলেন,
-“তুমি মেট্রো করে যাবে তো? দাঁড়াও, আমি বেরোনোর সময় ড্রপ করে দেব।”
এ কাজটা রোজ অফিস যাওয়ার আগে বাবা করেই থাকেন। আজও কোন এক ক্লায়েন্ট অ্যাটেন্ড করতে অফিসে ছুটতে হবে তাকে।
বাবা মেট্রো স্টেশনে নামানোর আগে রোজের মত আজও বললেন;
-“সাবধানে যাবে, আর দয়া করে বেশী রাত কোর না, তোমার মা না খেয়ে বসে থাকবে…”
একগাল হেসে মেট্রো স্টেশনের ভীড়ে মিলিয়ে যায় পল্লবী।
এসকেলেটর দিয়ে নামতে নামতে, আবার ফোনটা বেজে ওঠে; বিপ্লব।
-“এবার কি চাই?”
আবার গান ভেসে আসে;
-“প্রথমত, আমি তোমাকে চাই…”
-“পাবি না। আর কিছু?”
-“দ্বিতীয়ত, আমি সাঁতরাগাছি পৌছে গেছি।”
-“ভালো, এবার তোমার দ্বিতীয় গার্লফ্রেন্ড কাঁধে করে ঘোরো, পাখির পেছনে…”
-“আরে রামোঃ! দ্বিতীয় গার্লফ্রেন্ড কি রে? প্রথম বউ বল…”
-“হ্যাঁ ! সেই তো! আমিই তো তোমার দ্বিতীয় পক্ষ! গাধা কোথাকার… যা পালা… আর ডিস্টার্ব করবি না! সারাদিন অনেক গল্প করার আছে…”
-“ও কে, ম্যাডাম… বাই বাই…”
মুখে আবার একগাল হাসি নিয়ে প্লাটফর্মে গিয়ে দাঁড়ায় পল্লবী। আজ মনটা বড্ড ফুরফুরে লাগছে। স্কুলের বন্ধুদের জন্য কি? নাকি আবার অকারণ চারটে বাজে কথা বলে তাকে হাসানোর জন্য বিপ্লবই দায়ী?
যাই হোক, আজ আবার নিজেকে ফ্রক পড়া স্কুলের মেয়ে ভাবতে বড্ড ইচ্ছে করছে তার।
To be Continued…
<<Read Previous Installment Read Next Installment>>
I’m picking up the pace, haven’t I ? I hope you liked the previous two installments; I think I’ll be able to complete this within six installments(at least).
Peace…
Neel…
Pingback: Cherry Bomb – Second Installment – Libberish
Pingback: Cherry Bomb – Fourth Installment – Libberish