চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সংসার…
<< Read Previous Installment… …Read Next Installment>>
শশাঙ্ককে কাল রাতেই বলেছিল সঞ্চারী, বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বেরোবে। শুনে মৃদু ভ্রু কুঁচকেছিল শশাঙ্ক। কোনো উত্তর দেয়নি। রাতে বিছানায় শোয়ার সময় আর একবার বলেছিল সঞ্চারী;
-“কি গো! যাবো তো?”
-“যাও! তবে আবার হঠাৎ কোন বন্ধুর জন্য দরদ উথলে উঠল, সে বুঝছি না।”
-“কোন বন্ধু আবার কি? ওই তো সমৃদ্ধা, পল্লবী… বিয়ের সময় তো দেখেছ।”
-“বিয়ের সময় আমি হাজার জন লোকের সামনে দাঁত বার করে হেসেছি। তার মানে এই নয়, যে তাদের প্রত্যেকের বায়োডাটা আমার মুখস্থ থাকবে…”
সঞ্চারী চুপ করে যায়। একটু বাদে আবার বলে-
-“তুমি কাল অফিস বেরোবার আগে, মা কে একটু বলে যেও না গো…”
ঘুমজড়ানো স্বরে শশাঙ্ক একটা হালকা ‘হুঁ’ বলে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল। একটু বাদে সঞ্চারীও ঘুমিয়ে পড়ে। সক্কাল থেকে রাত অবধি সংসারে খাটনি তার কম যায় না।
সকালে শশাঙ্ককে অফিস পাঠানোর আগে আর কিছু বলে না সঞ্চারী। স্নান করে তৈরী হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিল, তখন ঘরের দরজায় তার শাশুড়িমায়ের আবির্ভাব হয়।
-“কোথায় বেড়োচ্ছো, বউমা ?”
প্রশ্নটা শুনেই বুঝতে পারে সঞ্চারী, যে শশাঙ্ক মাকে তার বেড়োনোর কথা বলে যায়নি।
-“আমার স্কুলের বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি, মা… আপনার ছেলেকে বলা আছে তো…”
-“ব্যাস, তাহলেই তো মাথা কিনে নিয়েছ!”
গজ গজ করতে করতে চলে যান ‘সংসারে মন নেই, খালি টো টো করে ঘোরা…’ ‘আমার হয়েছে যত জ্বালা…’ ইত্যাদি বলতে বলতে।
মেক আপ করতে করতে আয়নার দিকে তাকিয়ে হাসে সঞ্চারী। তার বন্ধুরা যদি এই ঘটনাটা দেখতে পেত, তাহলেই বুঝতে পারত স্কুলের সঞ্চারীর সাথে আজকের সঞ্চারীর কতটা তফাত। যে সঞ্চারী কাউকে ছেড়ে কথা বলত না। সে এখন লক্ষ্মী ‘হাউসওয়াইফ’ হয়ে কম্প্রোমাইজ করতে শিখেছে।
এরকম জীবন হবে, সেটা তার সম্পর্কে কেউ ভাবতে পারেনি। সঞ্চারীও ভাবেনি একসময়। তারপর বাবা একদিন একতাড়া রিপোর্ট তার সামনে ধরে ছলছল চোখে বলেছেন-
-“কোলন ক্যানসার। ডাক্তারবাবু বললেন ছ’মাস আগে ধরা পড়লে ভালো হত।”
সঞ্চারী কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে। তারপর বাবা বিয়ের কথা বলতে, দু’বার ভাবেনি। শশাঙ্ককে না দেখেই হ্যাঁ বলে দিয়েছিল। তার উত্তরে বাবা বলেন;
-“ছেলেটাকে একবার দেখবি না, মা?”
-“কি দরকার, বাবা? তোমার পচ্ছন্দ যখন, তুমি কি আমার খারাপ চাইবে?”
-“ও, তার মানে, আমি অসুস্থ বলে তুই শুধু আমার মুখ চেয়ে…”
বাবাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে সঞ্চারী বলেছিল,
-“বাবা, প্লিজ… আচ্ছা, আমি দেখা করব। প্রমিস…”
দেখা করেছিল সঞ্চারী, শশাঙ্কর সাথে। সুপুরুষ, শিক্ষিত, আর বাবা পচ্ছন্দ করেছেন তার মানেই ছেলে সুচাকুরেও বটে। সঞ্চারী আপত্তি করেনি। আর সঞ্চারীকে অপচ্ছন্দ করবে, এরকম ছেলে এখনো ভূভারতে নেই।
ধুমধাম করে বিয়ে করেছিল সঞ্চারী। বন্ধুদের ডেকে, হইচই করে। বাবার অসুখের কথা বন্ধুদেরও বলেনি। খালি একটা শর্ত দিয়েছিল বাবাকে, তার বিয়ে হয়ে গেলে, চিকিৎসায় যেন কোনও গাফিলতি না করে বাবা। বাবা সে কথা রেখেছেন। কেমোর প্রভাবে দূর্বল হলেও, আগের চেয়ে বেশ কিছুটা সুস্থ, অন্তত ডাক্তাররা সেটাই বলছেন।
শশাঙ্কের স্ত্রী হয়ে, সংসার করতে এসে সঞ্চারী বুঝেছিল, শশাঙ্কের মা যতই বলুন,
-“তুমি বাড়ির মেয়ের মত থাকবে…”
আদপে তা হয়নি। শাশুড়ি বউমাকে সার্কাসের অভীজ্ঞ রিংমাস্টারের মতোই শাসন করে সংসারের আকার মতো ভেঙ্গেচুরে গড়ে নিতে উঠে পড়ে লাগেন। তবে, তার কাজে গড়ার চেয়ে ভাঙাটাই বেশী হত। শশাঙ্কের বাবা, ভোলাভালা, ঠান্ডা মাথার মানুষ; স্ত্রী এবং এখন ছেলের মুখের ওপর কোনো কথাই বলেন না। আর বলতে গেলে ধমক খেয়ে চুপ করে যান। স্ত্রীর মেজাজ সারাজীবন সহ্য করেছেন মুখ বুজে। তাই বউমা ধমক খেলেও প্রতিবাদ করতে পারেন না। ওনার ওপর দয়া হয় সঞ্চারীর। আর শশাঙ্কর মত মাতৃভক্ত ছেলে আর দুটো হয় না। মায়ের দোষ না দেখা, এবং স্ত্রীয়ের অতিরিক্ত দোষ দেখা, দুটোতেই সে সিদ্ধহস্ত।
বাপের বাড়ি যাওয়াতেও নিষেধাজ্ঞা। গেলেও একবেলার বেশী নয়। সেসবও মুখ বুজে সয়ে নিয়েছে সঞ্চারী। কারণ যে একবেলার জন্য সে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে গেছে; তখন সে বাবাকে হাসতে দেখেছে। প্রাণ খুলে, মনের আনন্দে। তাই সেও হেসে হেসে বলেছে…
-“থাকতে তো চাই, বাবা; কিন্তু তোমার জামাই, এমন হ্যাংলার মত করে, একবেলা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারে না…”
কথাগুলো বাবার হাসির সাথে হাসি জড়িয়ে বলতে গিয়েও চোখের কোণে জল এসে পড়ে তার।
কিন্তু এসব কথা, চার দেওয়ালের বাইরে যায় না কক্ষনও। সঞ্চারী চায় তার বাবা যতদিনই বাঁচবেন, এটা জেনে বাঁচুন, যে তার মেয়ে সুখে আছে, শান্তিতে আছে।
শাশুড়ির বারণ আর কুসংস্কার মানার মত মেয়ে সে ছিল না। কিন্তু আজ সে কোন কিছুতেই না বলে না। সে চায় না তার বাবার কানে কোনো বিরূপ কথা যাক। সঞ্চারীকে কিছু বলবেন না তিনি। কিন্তু নিজেকে দুষে দুষে তিনি মরমে মরে যাবেন।
সুন্দর মুখটার চোখের কোলে কালি পড়ছে, ধীরে ধীরে। মেক-আপ করার কোনওদিনই পক্ষপাতী ছিল না সঞ্চারী। এই নিয়ে স্কুলে একদিন তো রাগেশ্রীর সাথে তুমুল ঝগড়াও করেছিল।
-“তোর ওই ময়দা মাখা তোরই থাক বাবা। আমার পোশায় না…”
রাগেশ্রী বেশ ঝাঁঝের সঙ্গে বলেছিল,
-“যাদের রূপের অহংকার বেশী হয় না, তারাই এসব কথা বলে। জানে নীজের জীবনে ছেলের কোনো অভাব হবে না…”
-“তা অভাব হবে কেন ভাই! সব ছেলে তো আর ময়দা কিনতে রাস্তায় বেরোয় না, যে তোর বদনের সামনে দাঁড়িয়ে ওজন করে বাড়ি নিয়ে গিয়ে লুচি ভাজবে…”
গোটা ক্লাস হেসে উঠেছিল সেদিন সঞ্চারীর কথায়। সেই থেকে রাগেশ্রী কথা বলত না সঞ্চারীর সাথে।
এ হেন সঞ্চারী আজ নানাবিধ রাসায়নিক রং ঘষে ঘষে আয়নার দিকে বার বার তাকিয়ে দেখছে,
“চোখের তলার কালিটা বোঝা যাচ্ছে না তো?”
মাঝে মাঝে নিজেকে চিনতে কষ্ট হয় সঞ্চারীর। তখন স্কুলের অ্যালবামটা খুলে দেখে। পল্লবীর কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে সমৃদ্ধার কথা।
একটা ছেলে একবার সমৃদ্ধার পেছনে পড়ে, রোজ স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। সমৃদ্ধা বাড়ি ফিরতে ভয় পেত। শেষে সঞ্চারী তার কলার ধরে দু’গালে দুই চড় লাগাবার পরদিন থেকে আর আসেনি।
সেই সমুর সাথে বিয়ের পর এই প্রথম দেখা। কতদিন যে গল্প হয়নি।
মেক আপ শেষ করে শাশুড়ি কে প্রণাম করতে, তিনি দায়সারা একটা ‘এস’ বলে টিভিতে মন দেন।
বসার ঘরে কাগজ-মগ্ন শশুড়মশাইকে প্রণাম করতেই তিনি বলে উঠলেন,
-“রি-ইউনিয়ন? বা বা বা বা… যা যা, একটু হাওয়া বদল করে আয় মা। এমন খান্ডার শাশুড়ি লোকে অনেক কপালের ফেরে পায়…”
তারপর চারদিকে তাকিয়ে দেখে নেন, কথাগুলো ‘খান্ডার’ শাশুড়ির কানে গেল কিনা। সঞ্চারি ওনার হাবভাব দেখে হেসে ফেলে।
-“হাসছিস মা? তুই জানিস, কত যায়গায় মানত করেছি, হে প্রভু, আমার একটা অ্যাফেয়ার করিয়ে দাও, আমি ওই আগ্নেয়গিরিকে ডিভোর্স দি। সে তো হলই না, উপরন্তু ওই হিটলারগর্ভার একখানা ছেলে হয়ে গেল…”
সঞ্চারি কোনরকমে হাসি চেপে বলল,
-“আমি গেলাম, তোমার সাথে আমিও কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যেতে পারব না…”
এই বলে সে বেরিয়েই যাচ্ছিল, তাকে ডেকে পাশে বসালেন রতনবাবু।
-“কি করে পারিস, মা? আমি মেরুদন্ডহীন, বুড়ো ভাম… কিন্তু তুই? তোর…”
হাতের পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছতে হয় তাঁকে।
শালোয়ারের ওড়না দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিয়ে, সঞ্চারী বলে ওঠে-
-“তোমাদের জন্য পারি, বাবা… তোমার জন্য, বাপীর জন্য। তোমরাই আমার শক্তি। প্লিজ এরকম করে কেঁদো না… রাস্তায় বেরোচ্ছি না?”
তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ব্যাস্ত হয়ে ওঠেন রতনবাবু…
-“ও হ্যাঁ… যা যা… দেরী করিস না। আর সাবধানে যাস, মন দিয়ে আড্ডা দিস, আর একটু বাড়ির কথা কম ভাব… যা…”
ট্যাক্সিতে ঊঠে সঞ্চারীর মনে হয়, অনেক কপালগুনে এরকম বাবা পেয়েছ… তাও একটা না, দু দু খানা। আচ্ছা, শশাঙ্ক বাবা হিসাবে কেমন হবে? খুব কড়া?
এসব হাবিজাবি ভাবনার মাঝখানেই ট্যাক্সি এগিয়ে চলে ব্যাস্ত কলকাতার রাস্তা দিয়ে…
To be Continued…
<< Read Previous Installment… …Read Next Installment>>
I’m late… I know… But this story is growing on Me… Things have changed drastically since I began. I know I have three more days only to finish this, and I promise I will.
But, the good news is… ‘I’ve figured out the beginning…’ So, one less thing to worry about.
Thanks for your Patience !!!!
and… Happy Independence Day !!!
Peace…
Neel
Pingback: Cherry Bomb – Third Installment – Libberish
The first date is the time when you are going to meet the individual
for happy. It provides me with pleasure to write about Mr.
A person’s self image depends on how he sees himself. https://Www.Judysbook.com/BusinessReferral.aspx?refer=918.credit%2Fdownloads%2F82-download-ntc33&bizId=27306912&ciId=12469271
LikeLike
Pingback: Cherry Bomb – Fifth Installment – Libberish