দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – এই তো জীবন…
<<Read Previous Installment… Read Next Installment>>
সকালে পরিমল এর ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল রাগেশ্রীর। যথারীতি, মোজা নয়তো রুমাল কিছু একটা খুঁজে পাচ্ছে না। তাই রাত করে শোওয়া সত্ত্বেও সকালে সাতটার সময় ঘুমটা ভাঙ্গাতে হল। মাথা গরম হয়ে যায় রাগেশ্রীর।
-“কি হল ? চেঁচাচ্ছ কেন সক্কাল সক্কাল?”
-“আরে আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সটা পাচ্ছি না… হ্যাভ ইউ সীন ইট?”
-“আমি কি করে জানবো? তোমার পার্স-এ দেখো…”
-“পার্স-এ থাকলে কি আর তোমায় বলতাম ?”
-“পার্স-এ না থাকলে কোথায় থাকবে আমি কি জানি?আরে বাবা, তোমার ড্রাইভিং লাইসেন্স, হাউ শুড আই নো ইট ?”
পরিমল এবার বেশ বিরক্ত হয়েই বেরিয়ে যায়।
রাগেশ্রী বিছানায় উঠে বসে। ঘড়িতে প্রায় সাড়ে ন’টা। অন্যদিন হলে আর একটু ঘুমোনো যেত, কিন্তু আজ হবে না। আজ স্কুলের বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যেতে হবে। অনেকদিন পড়। এমনিতে যাদের সাথে আজকের এই দেখা, তাদের সাথে স্কুলে পড়াকালীন হৃদ্যতা থাকলেও, এখন একেবারেই নেই। কিন্তু দেখা যখন করতে যাবে, তখন বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হবে যে সে কত ভালো আছে অন্য সবার চেয়ে।
সারাজীবন দু’টো নীতি মেনে এসেছে রাগেশ্রী; এক, নিজে ভালো থাকো বা না থাকো, সবার কাছে প্রমাণ কর যে তোমার মত ভালো কেউ থাকলে পারে না;
আর দুই, অন্যদের নিজের থেকে খারাপ রাখো, মানে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা কর, যাতে তোমার নিজের অক্ষমতাটা প্রকাশ না পায়। অন্যদের খারাপ রাখা মানে, স্কুলে পড়াকালীন বন্ধুমহলে ঝগড়া লাগানো, আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখা।
এই করেই চলেছে, চালিয়েছে সারা জীবন। ছোটবেলায় খেলার ছলে প্রতিযোগীতায় বার বার নামতে নামতে কখন যে গোটা জীবনটাকেই প্রতিযোগীতা বানিয়ে ফেলেছে; সেটা বুঝতেও পারেনি রাগেশ্রী। তার সাথে সাথে নীজে দোষ করে সেই দোষে গোটা দুনিয়াকে দুষে তৃপ্তি পাওয়া, এই গুনটাও ভালোভাবে রপ্ত করেছে।
পরিমলের সাথে ১৪ বছর প্রেম করেছে; সেই স্কুলজীবন থেকেই। বিত্তবান ঘরের ছেলে পরিমল প্রেমিকার জীবনে কোনো কমতি রাখেনি। কিন্তু বিয়ের পর দু’জনেই বুঝেছে, সংসার কেমন কঠিন ঠাঁই। প্রেমিকার অকারণ জেদ, রাগ, যে কিছুক্ষেত্র সংবরন করা দরকার, আর পরিমলেরও যে কিছু ক্ষেত্রে ‘না’ বলা দরকার, সেই অভ্যাসটা ২ বছর বিয়ের পরও কারোর হল না।
বিয়ের আগে, একটা ছোটখাটো চাকরী করত রাগেশ্রী। বিয়ের ছ’মাসের মাথায় সেটা ছেড়ে দেয় সংসার গুছোবে বলে। বিয়ের আগে কিন্তু দু’জনেই চাকরী করবে, চাকরী করে নিজের শখ-সাধ নিজেরা মেটাবে বলে ঠিক করেছিল। কিন্তু বিয়ের ছমাস পর থেকেই, দু’জনের শখ সাধ মেটানোর দায় একা নিয়েছিল পরিমল।
বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ের, পরিমলের যৌথ পরিবারে মন টেঁকেনি। সংসারের কাজ, মানে রান্নাবান্না এসব করার মত ‘হাউসওয়াইফ’ সে হবে না জানত। রান্নাবান্না, এসব করাটা আসলে শখ, বা লাক্সারী… মাঝে মধ্যে করা যায়, রোজ রোজ করা অসম্ভব ব্যাপার। পড়াশোনা শিখেছে, আধুনিকা হয়েছে, সে কি শুধু রোজ রোজ হাঁড়ি ঠ্যালার জন্য?
অর্থটা যতই একধরনের হোক; ‘সংসার’ আর ‘লাইফস্টাইল’- দু’টো জিনিসের মধ্যে বিস্তর ফারাক। একটায় জমাট অন্ধকার ভরা হেঁসেল, আর অন্যটায় শপিং, পার্টি আর বুক ক্লাবের গন্ধ আছে…
রাগেশ্রী ‘লাইফস্টাইল’ চেয়েছে, সংসার না…
এসব কথা ভাবতে ভাবতে স্নানে ঢোকে সে। ক’দিন ধরেই মনমালিন্য চলছে পরিমলের সাথে। স্নানে ঢুকলেই পুরোনো কথা মনে পড়ে রাগেশ্রীর। তাই শাওয়ারের ঠান্ডা জলের ধারার নিচে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে পুরোনো কথা ভাবতে ভালো লাগে তার।
সমৃদ্ধা আর পল্লবীর বন্ধুত্ব দেখে মনে মনে হিংসা হত রাগেশ্রীর। তার ওপর আবার পল্লবী স্কুলের ফার্স্ট গার্ল। ক্লাস এইট থেকে প্রেম করত বলে তাকে ‘পাকা’ মেয়ের দলেই ফেলত ক্লাসের অধিকাংশ মেয়েরা, আর সে দলে সমৃদ্ধা, পল্লবী, এমনকি সঞ্চারীও ছিল…
সঞ্চারী… ওরকম একটা সুন্দরী মেয়ে তার সাথে স্কুলের বারো বছরে একটা ছেলের সাথেও নাম জড়ালো না? জড়াত না বললে ভুল বলা হবে; জড়াত, কিন্তু যার নাম জড়াত, তার ঠেঙ্গিয়ে প্রেমের ভূত ভাগিয়ে দিত সঞ্চারী। ওরকম সুন্দরী যদি রাগেশ্রী হত? তাহলে বোধহয় গোটা দিন আয়নার সামনে বসেই কাটিয়ে দিত।
তাদের সাথে আজ দেখা করতে যাচ্ছে রাগেশ্রী…
সঞ্চারীর বিয়ে হয়েছে কিছুদিন হল; পল্লবীর ও হবে হবে করছে… আর সমৃদ্ধা! যে কিনা এককালে ছেলেদের কথা শুনতে দশহাত ছিটকে যেত, যাকে একবার রাগেশ্রী ‘সন্ন্যাসী’ বলে গোটা ক্লাসকে হাসিয়েছিল, সে নাকি কোন এক ‘আদিত্য’র সাথে প্রেম করছে! ভাবা যায়!
স্নান থেকে বেরিয়ে তৈরী হতে হতে ফোন আসে পরিমল এর। অফিস পৌছে ফোন করছে। শুধু হুঁ আর হাঁ বলেই কথা শেষ হয়ে যায়। মনের কথা যেন ফোনের ঘেরাটোপ পেরিয়ে আর পৌঁছোতে পারে না…
অথচ, এরা দুজনেই এককালে রাতের পর রাত জেগে খুনসুটি, প্রেম, হাসাহাসি করে ভোরবেলায় ঘুমোতে গেছে। সত্যিই কি বিয়ের পর প্রেম জানলা গলে পালায়? নাকি চাহিদার আড়ালে মুখ লুকিয়েছে কিছুর অপেক্ষায়?
ড্রেসিং টেবলের সামনে বসে গালে ফাউন্ডেশন ঘষতে থাকে রাগেশ্রী… এমন সময় ফোন বেজে ওঠে; পল্লবী।
-“কি রে ? বেরোলি তুই ?”
-“না রে… এই বেরোচ্ছি… সকাল থেকে কাজ কম? অফিসের টিফিনের ডাব্বা থেকে রুমাল সব কিছু…”
-“তুই আগে বেরো, মা আমার! তোর সংসারের গল্প আমি পরে শুনব… কুইক…”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ… এই তো…”
ফোন ছেড়ে দেয় রাগেশ্রী। মনে একটা তৃপ্তিভাব; পল্লবী ফোন করল। সঞ্চারী করলে আরো ভালো হত। ওর যা মেজাজ, শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নিশ্চয় প্রলয় নাচন নাচছে! এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত রাগেশ্রী; সে সঞ্চারীর থেকে অনেক গুছিয়ে সংসার করছে।
মেক আপ শেষ করে নীচে নামে সে। গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার অপেক্ষা করছে; অনেক ঝগড়াঝাঁটির পর দ্বিতীয় গাড়ির ব্যবস্থা করেছে পরিমল। পেছনের সীটে বসে পড়ে রাগেশ্রী; গাড়ি গ্যারেজ থেকে বেরোয় এসির ঠান্ডা হাওয়া মেজাজটা ফুরফুরে করে দেয় তার…
এই তো জীবন, কালিদা…
To be Continued…
<<Read Previous Installment…. Read Next Installment>>
I know… It’s been a while… But give me time… This is not a random Blog post… Fiction, and it needs time. I made promises, and I will keep them. My Deadline is still 18th; I haven’t forgotten.
Sorry?! I Guess…
But please… there are so many things I need to say, in this story… Please…
Please bear with me…
Peace…
Neel…
Pingback: Cherry Bomb – Third Installment – Libberish