And into the forest I go, to lose my mind and find my soul.
John Muir
||১৪||
কারো পৌষ মাস, আর কারো সর্বনাশ। সাখামের বনবাংলোতে ডরমিটারী নেই বলে, সুদৃশ্য ডবল বেড রুমগুলো খুলে দেওয়া হল সবার জন্য, আর তাই শ্বেতাংশু আর মৈনাক এক ঘরে গেলেও, অসীমাভকে ব্যাজার মুখে আকমলের সাথে থাকার ব্যবস্থা করতে হল। রাতে আজ ডুয়ার্সে আসা ইস্তক প্রথম পাঁঠার মাংসের দেখা মিলল। অনুপ্রিয়া তো বেশ নাক সিঁটকে “আমি রেডমিট খাবো না” জাতীয় কথাবার্তা বলতে বলতেও শেষে আর উপায় নেই দেখে শেষে আঙুল চাটতে চাটতে ঘরে যায়। শ্বেতাংশু আর মৈনাক ঘরে ঢুকেছে কি ঢোকেনি, দরাজায় টোকা পড়ল; খুলতেই অসীমাভ ইশারায় তাদের ডেকে নিয়ে সোজা তারাদার ঘরের দরজায় পৌছে টোকা দিল।
-“কি ব্যাপার ? এসো, ভেতরে এসো…”
-“আরে আগের দিন কথাটা শেষ হল না তো, সেইজন্যই…”
-“কি কথা ?”
-“আরে, আগের দিন বললে না তো, রিসর্টটা, মানে লেপার্ডস নেস্ট বন্ধ হয়ে গেল কেন ?”
-“ও, বস…”
সবাই বসার পর, বুক থেকে যেন অনেকদিনের জমিয়ে রাখা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, তারাদা শুরু করল;
-“চোখের সামনে দেখলাম, জানো তো… ক’য়েক বছরের মধ্যে সব কেমন ওলোট-পালোট হয়ে গেল। কাঠকল বন্ধ হওয়ার পর, জায়গাটা কিনল বোম্বের কোন এক হোটেলিয়ার-এর ছেলে, রিসর্ট বানালো। রমরম করে চলতে থাকল হোটেল, এলাকার ঠাটবাটই বদলে গেল। হোটেলের মালিক; নামটা এখনো কেউ ভোলেনি, সঞ্জয় লাহোটি, একদিন রাতে দলবল মিলে হোটেলের রুম সার্ভিসে কাজ করা দু’টি মেয়েকে গ্যাং-রেপ করে খুন করার পর এভিডেন্স মেটাতে রিসর্টের পাঁচিলের পেছনে লাশ দুটো পুঁতে দিয়েছিল। বড়লোকের ছেলে, পয়সা খাইয়ে ঠিক বেড়িয়ে গেল, এখনো বহাল তবিয়তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে; ফেঁসে গেল ওর সঙ্গীসাথীরা।”
‘গ্যাং-রেপ’, ’খুন’, ‘পাঁচিল’ এই কথাগুলো শুনেই মৈনাকের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। অসীমাভ আর শ্বেতাংশুর মুখও থমথমে। তারা দা কিন্তু তখনো বলে যাচ্ছে;
-“তারপর থেকেই ফরেস্ট ডীপার্টমেন্টের হাতে। সাধারণত কলেজ বা স্কুলের এক্সকার্সানে ভাড়া দেওয়া হয়; নাহলে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোকজন পিকনিক করে বছর বছর।”
-“তা এই যে কলেজ স্টুডেন্টরা এসে থাকে, তো এদের কোনো…” -মৈনাকের কথা শেষ হওয়ার আগেই, বাংলোর ছাদে একটা খড়খড় দুপদাপ শব্দ পাওয়া গেল।
সবাই চমকে উঠে কি করবে ভাবছে, এমন সময় বাংলোর বাইরে থেকে হৈ হল্লা আর ক্যানেস্তারা পেটানোর শব্দ পাওয়া গেল; ওরা সবাই তারা-র ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখল গোটা বাংলোর সবাই জেগে উঠেছে, আকমল ছাড়া। স্যারের পেছনে পল্লবী, অনুপ্রিয়া এবং সমীরা। সবাই মিলে বাংলোর দরজার কাছে পৌঁছোতে দেখা গেন বাংলোর দুই কেয়ার টেকার একজন একটা ক্যানেস্তারা আর একজন একটা ধাতব গামলা নিয়ে বেদম পেটাচ্ছে আর তারঃস্বরে চেঁচাচ্ছে। ওদের দরজার কাছে দেখে বলল,
-“বাহার মত নিকলিয়ে, লেপার্ড ঘুস আয়া হ্যায় বাংলা মে…”
তারা দা দরজা দিয়ে বেরোলো, তার পেছন পেছন মুখ বাড়াল অসীমাভ আর মৈনাক। দেখা গেল, ক্যানেস্তারা পেটানোর শব্দে, একটা বড় সড় কুকুরের মতো জন্তু, যেটার গায়ে ছিটছিট ভর্তি, সেটা বাংলোর চাল থেকে লাফিয়ে নেমে জঙ্গলে মিলিয়ে গেল।
-“দুর… এ কেমন লেপার্ড ?” -হতাশ হল অসীমাভ।

-“জুভেনাইল… লেপার্ডের বাচ্চা…” -উত্তর দেয় তারাশঙ্কর।
এবার সবাই আবার যার যার ঘরে ফেরত গেল। শুধু অসীমাভ গিয়ে ঢুকল শ্বেতাংশু আর মৈনাকের ঘরে।
-“তাহলে, মৈনাক বাবু… একটা কেন-র উত্তর পাওয়া গেল তো ?”
মৈনাক কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর বলে ওঠে;
-“ভাই, কালকে আমরা তার মানে সত্যি করেই প্রথম ভৌতিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম !”
-“কালকে প্রথম ? কেন তার আগের ঘটনা গুলো কি খরচের খাতায় ?”
-“না, মানে ভাব… হ্যাঁ, জানি আমিই কাল বলেছিলাম ভূতের পেছনে কি কেন খোঁজার কোনো মানে হয় না… কিন্তু, দু’টো মেয়ে খুন হল, আর তাদের আত্মা…”
-“অতৃপ্ত আত্মা বল… নাহলে জমছে না…” -ফোড়ন কাটে শ্বেতাংশু।
-“যাই হোক। তার মানে একটা কেন-র উত্তর পাওয়া গেল। এবার দেখা যাক, কপালে কি আছে…”
অসীমাভ শুতে চলে গেল। মৈনাক আর শ্বেতাংশু শুয়ে শুয়ে বেশ অনেকক্ষণ গল্প করল, আর তারপর ঘুমিয়েও পড়ল। ওদের ঘুম ভাঙল খুব ভোরে; বাংলোর ছাদে বৃষ্টির শব্দে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে; মৈনাক ঘড়ি দেখল, ঠিক ভোর চারটে বাজছে। মনে হল ভাগ্যিস কাল সার্ভের কাজটা শেষ হয়ে গেছে, না হলে আজ কাজও হত না; উলটে বসে বসে সময় নষ্ট হত। বৃষ্টির শব্দ উত্তরোত্তর বেড়েই চলল; কিন্তু মিনিট দশেকের মধ্যেই সেই প্রচন্ড শব্দও কানে সয়ে গেল আর আবার ঘুমিয়ে পড়ল দু’জনে।
আবার ওদের ঘুম ভাঙল দরজায় টোকায়। বৃষ্টির তখনো বিরাম হয়নি, দরজা খুলতেই অসীমাভ বলল,
-“স্যার বললেন ব্রেকফাস্ট করে তৈরী হয়ে থাকতে; বৃষ্টি একটু ধরলেই বেরিয়ে পড়তে হবে।”
এমন সময় অসীমাভর পেছনে পল্লবী উদয় হল;
-“তোদের সাথে একটু কথা ছিল; ভেতরে চল তো…”
অসীমাভ ঘরে ঢুকলে পল্লবীও ঢোকে, এবং দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি দিয়ে দেয়, সেটা দেখে অসীমাভ ভুরু কুঁচকে তাকায় তার দিকে।পল্লবী সোজা এসে খাটে বসে বলল,
-“কথাটা শুনে দাঁত বার করে হাসবি না…”
-“আরে কি হয়েছে আগে বলবি তো…” -উত্তর দেয় অসীমাভ।
-“বলছি, আমাদের রিসর্টে, তোরা আনইউজুয়াল কিছু দেখেছিস বা ফিল করেছিস কি ?”
-“রিসর্টে, কেন বল তো ?”
-“আমি জানি না… দু’দিন আগে রাতে যেদিন বৃষ্টি হল, সেইদিন থেকে আমাদের ঘরে… মানে আমি জানলার ঠিক পাশেই শুই, আমি শুনতে পেয়েছি আমার জানলার আশেপাশে কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলে, হাসে…”
-“কাউকে দেখতে পাসনি ?”
-“না… আমি প্রথম দিন ভেবেছিলাম, তোরা তিন গাধায় বোধহয় ভয় দেখাবার প্ল্যান করছিস। জানলা দিয়ে বাইরে আলো ফেলেও কিছু দেখতে পাইনি। কিন্তু এটা রোজই হচ্ছে… আর ভালো করে শুনলে বোঝা যায় গলাগুলো মেয়েলি।”
ওরা সক্কলেই জানে, রিসর্টের যে পাঁচিলের পেছনে ওরা গত পরশু রাতে গলাগুলো শুনেছে, মেয়েদের থাকার ঘরটা সেটার কাছেই।
-“হুম… বুঝলাম… আলো একদিনই ফেলে দেখেছিস ?”
-“হ্যাঁ ভাই… একদিন যখন কিছু পেলাম না, তখন দ্বিতীয় দিন আর চেষ্টা করিনি… মনে মনে হাসছিস তো ? ভালো… আমি গেলাম…”
-“আরে দাঁড়া না… চটিস কেন… আর কিছু দেখতে বা শুনতে পেয়েছিস ?”
-“না… কেন…”
-“কারণ… আমাদের তিনজনেরই ধারণা, লেপার্ডস নেস্ট-এ সত্যিই কিছু একটা গন্ডগোল আছে… কিছু জিনিস আমরাও দেখেছি বা শুনেছি; তোদের বলিনি তোরা প্যানিক করবি বলে…”
-“সেই তো… বড় এলেন রে আমার স্টিরিওটাইপ করনেওয়ালা… আমাকে বলতে কি হয় ? আমাকে কি অনুপ্রিয়া আর সমীরা পেয়েছিস নাকি ?”
ওরা তিনজনেই হেসে ফেলে। এবার মৈনাকই মুখ খোলে;
-“আরে সরি ভাই… আসলে আমাদেরও মনে হয়েছিল তখন সবাইকে বললে কে কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে; কে হাসাহাসি করবে… তাই চেপে গেছি।”
-“তাহলে আমাদের কোর্স অফ অ্যাকশন কি ?”
-“কোর্স অফ অ্যাকশন মানে ? হ্যাঁ, মানলুম, শ্বেতাংশুর একটা দাড়ি আছে, কিন্তু কোনও অ্যাঙ্গেল থেকে কি ওকে ওঝা মনে হয় ? নাকি আমাকে আর মৈনাককে স্যাম আর ডীন উইনচেস্টার ? যে জিওলজি ছেড়ে দিয়ে ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ করব।”
-“অসীম… সিরিয়াসলি… তোর এই রদ্দি সেন্স ওফ হিউমারটার জন্যই না, কোনও মেয়ে তোর ত্রীসিমানায় ঘেঁষে না…”
অসীমাভ হয়তো এর তীব্র প্রতিবাদ করত, কিন্তু দরজার ধাক্কার সাথে সাথে স্যারের চিৎকার শোনা গেল;
-“ওরে কুম্ভকর্ণের জ্ঞাতী-গুষ্টি… আর কত ঘুমাবি রে ?”
অসীমাভ দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলতেই স্যার বললেন,
-“বলি কি বাবারা এবং মা; দয়া করে খেয়ে জিনিস গুছিয়ে নিয়ে আড্ডাটা বসাও… নাহলে বৃষ্টি থামলে বেরোনো যাবে না…”
স্যারের কথায় একগাল হেসে সবাই প্রাতঃরাশের টেবলে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ হতে না হতেই বৃষ্টি একটু কমে; আর সেই সুযোগেই রওনা দেয় ওরা। এবার তিনজনের সাথে গাড়িতে ওঠে আকমল আর স্যার। গাড়িতে যেতে যেতে তাই ভূততত্ত্ব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় হয় না। কাজ নিয়েই আলোচনা হয়। এই ক’দিনের কাজের যা ডেটা জমেছে, সেটা পারলে আজই সাজিয়ে নিতে হবে; এখনো একদিন লেপচাখা আর অন্তত তিনদিন জয়ন্তীর দিকে কাজ বাকী আছে। সেটা মিটে গেলেই ফিরতি পথে রওনা দেওয়া যাবে।
সারারাত বৃষ্টির ফলে রাস্তার খারাপ অংশ খারাপতর হয়ে পড়েছে; জায়গায় জায়গায় জল জমে গাড়ি চলাটা করেছে আরও কঠিন। তাই ফেরার সময়টা বেশীই লাগল। বেরিয়েছিল প্রায় ন’টায়, আর প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ লেপার্ডস নেস্ট পৌঁছল ওরা। তখন বৃষ্টি থেমে গেলেও, মেঘ কাটেনি। পৌছে স্নান টান করে ডাটা সাজানোর নামে, চারজনে ভূতের গল্পের পসরা সাজিয়ে বসল।
তিনজনের মুখ থেকে আসা ইস্তক সব ঘটনা শুনে পল্লবী বলল
-“ওরে বাবা রে ! এতকিছু ঘটে গেছে ?”
-“শুধু তাই নয়, আমি আগেরদিন, মানে শ্বেত আর অসীমকে বলার সময় একটা বড় পয়েন্ট মিস করে গেছিলাম…”
-“কি পয়েন্ট ?” -অসীমাভ আর শ্বেতাংশু সমস্বরে প্রশ্ন করে;
-“কালো কুকুর… যেদিন আমি ওই পায়ের ছাপ দেখেছিলাম বা শব্দটা শুনেছিলাম সেদিন ঘর থেকে বেরিয়ে একটা কালো রঙের কুকুর দেখেছিলাম আমি। আমাদের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট-এর কুকুরগুলো যেখানে ভয়ে কাঁপছে, ওই কুকুরটা চুপ করে বসেছিল; আর তার যা বীভৎস চেহারা ! অনেকটা ‘হাউন্ড অফ বাস্কারভিল’-এর মত।
-“হ্যাঁ… একটা একটা করে ছাড়ো… যেন ধারাবাহিক উপন্যাস চলছে…” -বিদ্রুপ করে দাঁতে দাঁতে চিপে বলে অসীমাভ।
এবার পল্লবী বলে,
-“ভাই, যাই বল, আমার কাছে কিন্তু ব্যাপারটা খুবই ডিস্টার্বিং; মানে এই গ্রাউন্ডে তিন তিনটে মৃত্যু… সেখানে আমরা থাকছি !”
-“থাঙ্কস, কথাটা মনে করানোর জন্য…”
এই বলে অসীমাভ দরজা থেকে মুখ বার করে হুঙ্কার দিল –“রতন !!! অ্যাই রতন !!!”
উল্টোদিক থেকে সাড়া এল, “যাই দাদাবাবু…”
রতন মিনিট দু’য়েক পড়ই ঘরের দরজায় আবির্ভূত হল।
-“আমারে ডাকছিলেন, দা’বাবু ?”
-“হ্যাঁ, একটু বোস তো… তোর সাথে কথা আছে…” -অসীমাভ উওর দেয়।
-“বলেন…”
রতনকে প্রথম প্রশ্নটা মৈনাকই করে;
-“হ্যাঁ রে, তুই যে এখানে একা একা থাকিস, রাতে ভয় করে না ?”
রতন হেসে উত্তর দেয়,
-“না দা’বাবু… আর কেউ থাকেনে বটে, কিন্তু আমার ভয় করেনেকো…”
-“কেন, তোর ভয় করেনা কেন ?”
-“আমার বড়ভাই, মানে দাদা… আমি যখন এইট্টুনি, এখেনে তখন হোটেল ছিল না; কাঠকল ছিল। সেই কাটকলে দাদা চিরে মরে গে’ছল। তাই লোকে এখেনে রাতে থাকেনে’ক; কিন্তু আমার ভয় করে না… আমারই দাদা, যদি মরে পিশেচ হয়েও থাকে, আমার কিছু ক্ষেতি করবেনে কো…”
রতন গোটা কথাটাই হেসে হেসে বলল; বাকীরা অবাক হয়ে গেল একটা ছেলের এই অদ্ভূত বিশ্বাস আর সরলতা দেখে…
-“তুই কোনোদিন কিছু দেখিস নি এখানে ?”
-“ও সে ছেড়ে দ্যান দাদাবাবু… ওসব বলতে নেইকো… আমি ঠাকুর নাম করি, সব কেটে যায়…”
এরপর অনেক চেষ্টা করেও, রতনের মুখ থেকে সে কি দেখেছে সেই সংক্রান্ত একটাও শব্দ বের করতে পারে না কেউ। কিন্তু কথায় কথায় কোন ঠাকুরের নাম করে বলতে রতন তাদের চেনা কোনও দেবতার নাম বলে না।
সে বলে সে “গরাম”-এর নাম করে… গরাম ঠাকুরের…
লেখা এবার আস্তে আস্তে যবনিকার দিকে এগোচ্ছে… আর সত্যি বলছি, এতদিন ধরে লেখাটা লিখছি; সেই জানুয়ারি থেকে… শেষের দিকে এসে একটু মন খারাপ লাগছে… আবার একটা আনন্দও হচ্ছে গল্পটা শেষ হচ্ছে বলে; গল্পটা পরিণতি পাচ্ছে বলে।
Pingback: Somewhere In the Jungle of North Bengal… Part XV – Libberish