এরকম স্বপ্ন দেখার কোনো মূলদ ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পেলাম না… মানুষের স্বপ্নের প্রতি তার নিজের কোনো নিয়ন্ত্রন থাকে না, কিন্তু অবচেতনের ভাবনা চিন্তাই অনেক সময় স্বপ্নের রূপ নিয়ে চোখের সামনে ঘোরাফেরা করতে চায়। ওই স্বপ্নটা দেখার পর কতদিন রাতে যে ঠিক করে ঘুমোতে পারিনি, সেটা গুনে দেখিনি, কিন্তু ভয়ের সিনেমা দেখেও কোনোদিন এত ঘুমের সমস্যা হয়নি…
আমার স্বপ্ন কি সত্যি হতে চলেছে ? আজ দু’টো ঘটনা ঘটল, যেটার সাথে আমার স্বপ্নের দুটো ঘটনার মিল রয়েছে। আজ ক্লাসে ঢুকতে দেরী হয়ে গেছিল। আমাদের ক্লাসটা অত্যন্ত ছোট, ১৫-২০ জনের বেশি লোক ধরে না। ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে ক্লাসে ঢুকে আমি লাস্ট বেঞ্চ-এ বসে পড়লাম। রোল কল-এর সময় ফার্স্ট বেঞ্চ-এ বসা সমীর হঠাৎ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আরে ! প্রতুল কখন এলি ? দেখতে পেলাম না তো ?”
কথাটা শুনে আমি প্রায় আঁতকে উঠলাম। আমাকে দেখতে পেল না ? সৌগত আর প্রীতীশ একটা করে চেয়ার সরে গেল, আমাকে জায়গা করে দিতে; তবু আমাকে দেখতে পেল না ?
দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল বাড়ি ফেরার সময়। মেট্রোতে ফিরছি, লোকের ওঠানামার ধাক্কাধাক্কিতে এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম, আমি মাঝখানে, আর আমার তিনদিকে তিনজন মহিলা দাঁড়িয়ে। যেমন আমার স্বপ্নে তিনটে খাটিয়ায় পড়ে ছিল তিনটি ধর্ষিতা মেয়ে… এক মুহুর্তের জন্য চোখে অন্ধকার দেখলাম যেন। ভয়ে ‘পেট্রিফায়েড’ হয়ে যাওয়া যাকে বলে, ঠিক সেটাই হয়ে গেছিলাম।
এসব কি হচ্ছে ? গতবছর ভারতে ধর্ষীতার সংখ্যা প্রায় ২৪,০০০। বাকি পরিসংখ্যান পড়িনি। ভাবছি যদি এই নিয়ে একটা লেখা লেখা যায়। মানে ধর্ষণ, কন্যাভ্রুন হত্যা, পণের জন্য নিপীড়ন, ইত্যাদি ইত্যাদি… ভারতে নারীর বর্তমান অবস্থা গোছের কিছু একটা… ভয় করছে… খুব ভয় করছে; আমার মা, বোন… প্রেমিকা; পারব তো এদের রক্ষা করতে ? আমার আশঙ্কার কথা অপর্ণার কাছে বললে, ও আমায় Distract করতে চাইল; বলল “ওসব নিয়ে ভাবলে মন খারাপ করবে…” করুক, করাই দরকার…

এভাবে রোজ রাস্তাঘাটে যা যা দেখছি, তাতে আমার পাগল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আজ মেট্রোতে তিনটে মেয়েকে দেখলাম। অবিকল আমার স্বপ্নের তিন ধর্ষিতার মতন মুখ। আমি জানি না কি হচ্ছে এসব… পাগলই হয়ে যাব বোধহয়। আবার একটা ‘দেজা ভ্যু’ ?
মাঝে মাঝে আমার মনে হচ্ছে, আত্মহত্যাই একমাত্র উপায়। এসব কথা অবশ্য অপর্ণাকে বলিনি। ওর মনে হচ্ছে আমি ওভাররিঅ্যাক্ট করছি। তা হয়তো করছি, কিন্তু চোখ নাক বুজে “ধনধ্যান্য পুষ্প ভরা…” গাওয়ার বান্দা আমি নই। এই পৃথিবীর পরিবর্তন আমার সহ্য হচ্ছে না। অনেক ভেবেও আমি কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না… কোনোভাবে এর প্রতিকারের উপায় কি নেই ? দিন দিন যেন আমার চারপাশের পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসছে।
আগে লিখেছিলাম যে এর প্রতিকারের কোনো উপায় নেই। কোনো সলিউশান নেই। কিন্তু আজ পেয়েছি। সবাইকে শেষ করে দাও। প্রত্যেকটা মানুষ, প্রতিটা পুরুষকে… সবাই আত্মহত্যা কর… মুক্তি পাবে… আমি আর পারছি না…
এতদুর পড়ার পর, আমি প্রায় পাঁচ-দশ মিনিট রোবটের মত, পাথরের মূর্তির মত শুয়ে রইলাম ডায়েরীটাকে বুকের ওপর নিয়ে। খবরের কাগজে ধর্ষণ, কন্যাভ্রুন হত্যা, এসবের খবর সবার ভ্রু কুঁচকে দেয় ঠিকই, কিন্তু এভাবে কতজনকে প্রভাবিত করে? এটা ২০১৪ সালের ডায়েরী। প্রতুল আজও বেঁচে আছে তো ? নাকি সে তার প্রতিকারের উপায় অনুযায়ী আত্মহননের পথই বেছে নিয়েছে ? অপর্ণা বলে যে মেয়েটির কথা লিখেছে, সে যদি ওর প্রেমিকা হয়, সে বা ওর বাড়ির লোক কি ওর মানসিক স্থিতির কথা জানত ? এবার আমারও ভয় হচ্ছে, পাতা ওল্টাতে…
শান্তির আশায়…
নীল…
Pingback: প্রতুলের ডায়েরী – শেষ কিস্তি – Libberish
👍
LikeLike