এরকম Disturbing আর Lucid স্বপ্ন আর জীবনে দেখেছি বলে মনে হয় না… রবিবার দুপুরে শুয়ে বই পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না, তখনই দেখলাম। সব কিছু পরিস্কার মনে আছে। ছোট, বড় সব ঘটনা… এক দুপুরে জীবনটা পালটে গেল যেন… দেখলাম, আমি মেট্রো করে যাচ্ছি, কিন্তু মেট্রোটা যাচ্ছে মাঠের মধ্যে দিয়ে, আর চারদিক খোলা… যেন হগওয়ার্টস এক্সপ্রেস… আর মাঠের চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে বড় বড় খুব সুন্দর দেখতে পাখি… হঠাৎ, আমার এক সহযাত্রী একটা পাখি ধরে সেটার গলাটা মুচড়ে ছিঁড়ে ফেলল, কিন্তু দেখলাম, একফোঁটাও রক্ত পড়ল না… লোকটি হাসি মুখে ছেঁড়া মুন্ডুটা হাতে ধরে রইল ট্রোফির মতন। আমি পাখিগুলোকে ভালো করে দেখব বলে নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে। আর আমি নামার পড়ই ট্রেনটা প্রচন্ড জোরে ছুটতে আরম্ভ করল। আমি দৌড়েও আর ট্রেনটা ধরতে পারলাম না। তারপর কিভাবে আর কখন যে কলেজে এসে পৌছেছি, সেটা জানি না।
কলেজে পৌছে দেখলাম, আজ বোধহয় কলেজ ভিসিট করতে কিছু লোক এসেছে। একটা লোক, আর তার সাথে কিছু চ্যালা-চামুন্ডা। লোকটাকে দেখে বিজনেসম্যান বলে মনে হল। গোটা ডিপার্টমেন্ট ঘুরে লোকগুলো এইচ ও ডি-এর ঘরে ঢুকে গেল। কেন জানি না, আমিও পেছন পেছন ঢুকতে গেলাম, কিন্তু দরজার গোড়ায় দাঁড়ানো সিকিওরিটি গার্ডটা আমাকে একটা হাত দেখিয়ে আটকে দিল। লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমিও আর কোন কথা বলতে পারলাম না… আমি কলেজ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম, সিকিওরিটির চেয়ারে বসে, সিকিওরিটির টেবলে মাথা গুঁজে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একটা মেয়ে কেঁদে চলেছে। আমি মেয়েটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, যে তার কি হয়েছে ? মেয়েটি উত্তর দিল-
-“হাত দিয়েছে…” সে কথাটা বলার সাথে সাথে ইশারায় নিজের বুকের কাছটা দেখিয়ে দিল। আর কথাটা শুনে আমার যেন মাথায় রক্ত চড়ে গেল…
-“কে ? কে দিল ? কোথায় গেল সে ?”
-“জানি না… পেছন থেকে…” এইটুকু বলে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মেয়েটি;
-“তুমি কেঁদ না, আমি দেখছি, তুমি এখানেই থাকো…”
আমি ছুটে বিল্ডিং থেকে বেড়িয়ে গেলাম, অ্যাডমিন্সট্রেটিং ব্লক-এর উদ্দেশ্যে ছুটতে শুরু করলাম। অদ্ভূত ব্যাপার হল, প্রাণপণে ছুটেও আমি সেই বিল্ডিং-এ পৌছোতে পারলাম না। আমার চারপাশে কিন্তু লোকে লোকারণ্য, সবাই ছুটছে, খেলছে, হাসছে, চিৎকার করছে, কিন্তু কেউ যান আমাকে দেখতে পারছে না… পেছন ফিরে তাকাতে দেখলাম, আমি আমার কলেজ বিল্ডিং-এর দোড়গোড়াতেই দাঁড়িয়ে আছি। সেটা দিয়ে আবার ভেতরে ঢুকতেই, দেখতে পেলাম, মেয়েটি সহ টেবিলটি উধাও হয়েছে, আর তার জায়গায় পাতা আছে তিনটে খাটিয়া। সেই খাটিয়ায় শুয়ে তিনটি মেয়ে, তাদের জামাকাপড়ের আর মুখের অবস্থা দেখলে বুজতে অসুবিধা হয়না কি হয়েছে তাদের। একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমি খুব ক্ষীণ কন্ঠে প্রশ্ন করলাম,
-“কে ?”
তার উত্তরে, মেয়েটা যে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল, সেটা আমি কোনোদিন ভুলব না… অত অবজ্ঞা, ঘৃণা আমি কক্ষণো কারোর চোখে দেখিনি। জ্বলন্ত সেই দৃষ্টি যেন আমাকে বলতে চাইছিল, তুমি… তুমি করেছ আমাকে ধর্ষণ… তুমিও এই পুরুষ জাতির প্রতিনিধি…
আমি দু’পা ছিটকে সরে এলাম… কেন, কিসের ভয়ে জানি না… দু’পা পিছিয়ে, পিছন ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে দোতলায় উঠে গেলাম। দোতলায় উঠে যেটা দেখতে পেলাম, সেটা যেন স্ট্যানলী ক্যুব্রিকের ‘আইজ ওয়াইড শাট’ ছবির একটা দৃশ্য। ঘরে একধিক মেয়ের গনধর্ষণ চলছে একের পর এক মেয়ের। আমি চিৎকার করে উঠলাম… এ আমি কিছুতেই হতে দেব না…

চারপাশের সব ধর্ষক তার জবাবে আমার দিকে তেড়ে এল… কেউ লাঠি, তো কেউ তলোয়ার নিয়ে। সবাই আমাকে ঘিরে ধরল। আমি চিৎকার করে চলেছি… একটা লাঠির বাড়ি মাথায় পড়ল। আমার স্বপ্নেও আমি হিন্দী ছবির নায়ক হয়ে উঠতে পারি না… তাই সবাই মিলে যখন আমায় বেদম প্রহার শুরু করল, তখন আমি ঘুম ভেঙ্গে চিৎকার করে উঠে বসলাম। দম বন্ধ হয়ে গেছিল আমার প্রায়…
এত অবধি পড়ার পর মনে হয়েছিল, এত বানিয়ে বানিয়ে খেটেখুটে কাউকে ডায়েরী লিখতে দেখিনি। আপনাদেরও তাই মনে হচ্ছে, তাই না ? সব বানানো ? কিন্তু, তারপর, আমার চোখে পড়ল হাতের লেখাটা। প্রতুলের হাতের লেখাটা মোটের ওপর সুশ্রী বলা চলে, কিন্তু এই স্বপ্নের জায়গাটুকুতে, সমস্ত হাতের লেখাটা কাঁপা কাঁপা, এলোমেলো…
শুধু ভাবুন, কারোর মনের মধ্যে কি চললে, সেখানে এরকম একটা স্বপ্নের জন্ম হতে পারে ? ডায়েরিটা ২০১৪ সালের (আগে বলা হয়নি), হঠাৎ মনে পড়ল, সেই বছরই তো দিল্লী, পার্কস্ট্রীট, কামদুনী… মিডিয়ার কভারেজ বেশী দেখার ফলাফল ? জানি না… হতে পারে প্রতুলকে আমি চিনি না, কিন্তু এরকম চিন্তা ক’জন করে ? জানি না… মনটা কেমন একটা হয়ে গেল, তাই ডায়েরীটা বন্ধ করে রাখলাম… আজ রাতে ঘুম হবে কি ?
শান্তির আশায়…
নীল…
Pingback: প্রতুলের ডায়েরী – শেষ কিস্তি – Libberish