অজুহাত…

এ পৃথিবীতে, অজুহাতের থেকে সোজা জিনিস বোধহয় আর কিছু নয়… এই যেমন ধরুন না, আমার ল্যাপটপ খারাপ হয়েছে বলে আমি অজুহাত দিলাম, এই শনিবার ব্লগ লিখতে পারব না…

ভালো লাগছে না, তাই আজ জিম-এ গেলাম না, ভালো লাগছে না তাই ঘরে বসে সারাদিন ঘুমালাম।

আর এরকম নানান অজুহাত দিতে দিতে আমরা ভুলে যাই দায়িত্ব নিতে… দায়িত্ব কাকে বলে… দায়িত্ব নেওয়া মানে যেমন দায়িত্ব পালন, তেমনই নিজের দোষ স্বীকার করাটাও… মানে ইংরেজীতে যাকে বলে-

“Taking Responsibility of your actions…”

এটা তো আজকাল কারোর থেকে আশা করাই বৃথা… আসলে নিজের দোষ স্বীকার করতে যে সাহসটা লাগে, সেটা অধিকাংশ লোকেরই থাকে না… অনেকে মনে করে দোষ স্বীকার করাতে সম্মানহানী হয়ে গেল (দোষ করাতে হল না ); অনেকে কাছে ছোট হয়ে গেলাম; ইত্যাদি ইত্যাদি।

তো, অজুহাত জিনিসটা আজকাল, সবার কাছে চিরন্তন হয়ে গেছে। ধরুন আপনি মদ্যপান করেন। আপনার অ্যালকোহলের স্বাদ ভালো লাগে, বা আপনি ওই টলমল নেশা নেশা ব্যাপারটা পচ্ছন্দ করেন। খুব ভালো… আপনার লীভার, আপনার জীবন, আপনি মদ খাবেন না ফিনাইল, সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু, আপনি লোকের কাছে ‘অজুহাত’ দিচ্ছেন;

-“মদ না খেলে আমার ঘুম আসে না…”

বা

-“মদ না খেলে আমি কবিতা লিখতে পারি না…”

এগুলোর থেকে ফালতু কোনো অজুহাত আর কিছুই হতে পারে না। এবার ধরুন আপনার কোনো ভালো বন্ধু, বা ছোটবেলার বন্ধু, সে আপনাকে বলল,

-“ভাই, মদ্যপান করিস না…”

সে মনে করেছে তার এ কথাটা বলা উচিত সে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী বলে, আপনি ভাবলেন

-“আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে…”

আপনি বন্ধুটির সাথে ঝগড়া জুড়ে দিলেন, তারপর যখন সে বন্ধুটি আপনার ব্যবহারে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বিদায় নিল, আপনি সকলকে অজুহাত দিলেন

-“আসলে, আমার সাথে সবাই টিকতে পারে না, সবাই তো আর প্রকৃত বন্ধু হয় না…

সেই তো…

আপনি চান সেইসব বন্ধু, যারা আপনার আপাত নীজঃধ্বংসী কাজে আপনাকে সমর্থন করবে… যারা আপনার ভালো মন্দের কথা না ভেবে বলবে,

-“না ভাই, সব ঠিক করছিস… আমি তোকে কোনোদিন ‘জাজ’ করি ?”

আসল কথা হল, আপনার বন্ধু নয়, ‘মোসায়েব’ দরকার। যারা আপনার ইগোতে প্রত্যহ জাপানী তেলে মালিশ করে সেটাকে আইফেল টাওয়ার করে ফেলবে।

আমি আগেও বলেছি, এবং বার বার বলছি, আমাদের বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিন দিন সংজ্ঞাহারা হয়ে ম্যাদামারা হয়ে যাচ্ছে। আমরা বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু আমাদের ভুল ধরিয়ে দেবে বা ভালোমন্দের বিচার করে দেবে, সেরকম কাউকে চাই না। হ্যাঁ ভালোমন্দের বিচারটা অবশ্যই আপেক্ষিক, কিন্তু যে আপনার ছোটবেলার বা খুব কাছের বন্ধু, সে যদি আপনার কোনো সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, তাহলে সেটা নিয়ে একবার না ভেবে দেখে তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক সমীচীন কাজ হচ্ছে ? ভেবে দেখুন…

শান্তির আশায়,

নীল

পুনশ্চ – অজুহাত বড় খারাপ জিনিস… এই যে দেখুন না, আমি ল্যাপটপ খারাপ হওয়ার অজুহাতে এক সপ্তাহ আগে অজুহাত নিয়ে শুরু করা লেখাটা এই সপ্তাহের অজুহাতে কেমন বন্ধুত্বের অজুহাত দেখিয়ে আবার চালিয়ে দিলাম ?

যাই হোক…

১৮ তারিখ লিবারিশের দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকী… সে উপলক্ষে কিছু ঘটনা ঘটবে, শিগগিরই জানতে পারবেন…

Advertisement

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.