ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – উপসংহার
-“হাইইইইইইই !!! কি রে আমাকে ছাড়াই তো জাঁকিয়ে বসেছিস। ব্যাপার কি ? কেমন আছিস সব? বাব্বা সঞ্চারী কি সুন্দর লাগছে তোকে !!! ”
ততক্ষণে রুমাল চোখ মুছে ফেলেছে সমৃদ্ধা। আর তাই রাগেশ্রীর ফেটে পড়া উচ্ছাসে সহজেই ঢাকা পড়ে গেল আগের সব সিরিয়াস, গুরুগম্ভীর আলোচনা।
-“আর বলিস না রে… আসলে পরিমল অফিসে বেরোনোর আগে এটা দাও, ওটা দাও করে এমন মাথা খারাপ করে না, কি বলব…”
-“আগে তুই বস তো… তারপর তোর সংসার-সংগ্রাম শোনা যাবে…”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ, এইতো… তাই বেরোতে দেরী হল… তারপর সেই শিয়ালদার জ্যাম পেরিয়ে এতদুর আসা…”
-“শিয়ালদা? কেন তোর শ্বশুরবাড়ি তো যোধপুর পার্কে ?
-“ওওওও… তোদের বলা হয়নি না ? ৩ মাস হল আমরা বাইপাসের ওপর একটা ফ্ল্যাটে শিফট করেছি। আসলে পরিমলদের জয়েন্ট ফ্যামিলির ওই বিরাট বাড়িতে আমার কেমন নিজেকে আউট-অফ-প্লেস মনে হত। তারপর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, খুড়শ্বশুর-তার বউ… তাদের ছেলেপুলে অত দেওর-ননদ… সবাই উঁকিঝুঁকি মারছে। একফোঁটা প্রাইভেসি নেই; কথায় বলে না, বিয়ের পর প্রেম পালায় জানলা দিয়ে। সেইটাই হতে বসেছিল… তারপর পরিমলকে বলে বোঝালাম অনেক… তাই এই ফ্ল্যাটটা। একদিন আসিস… দেখবি কেমন সুন্দর করে সাজিয়েছি।”
সঞ্চারী বলল,
-“এবার একটু দম নে। জল খাবি? বাবা রে… তোর কথা বলা বেগ দেখছি কোনদিন বোল্টকে ছাড়িয়ে যাবে।”
সবাই হেসে ফেলে। রাগেশ্রী একটু ‘অফেন্ডেড’ হল বোঝা গেল। কিন্তু সেটা সে বেমালুম চেপে গেল। কথা ঘোরাবার জন্য বলল,
-“তারপর… পল্লবী, তোর কি খবর বল… বিপ্লববাবুর খবর কি?”
-“হ্যাঁ রে… সেটা বলতেই আরো আমার আসা…”
কথাটা বলতে বলতে হ্যান্ডব্যাগ হাতড়ে কতগুলো কার্ড টেনে বের করল পল্লবী…
-“২৭শে এপ্রিল। এবার তোরা বিপ্লববাবু বলবি, না জামাইবাবু; সেটা তোরা ডিসাইড করে নিস…”
সঞ্চারীর চোখ মুখ সবার আগে চকচক করে উঠল…
-“বলিস কি? আরে কঙ্গো কঙ্গো কঙ্গো কঙ্গো…
রাগেশ্রীও মুখ খোলে,
-“কংগ্রাচুলেশনস পল্লবী, আমিও ভাবছিলাম এই খবরটা কবে পাব…”
সমৃদ্ধা জড়িয়ে ধরে পল্লবীকে। আর মুখে কিছু বলে না।
কার্ডটা হাতে দিতে গিয়ে পল্লবী দেখে সমৃদ্ধা এখনো মুখের হাসিটা ধরে রেখেছে। কার্ড বিতরন পর্ব শেষ হলেই আবার রাগেশ্রীই মুখ খোলে।
-“আচ্ছা, তুই যে বলছিলি, কাকু এ বিয়েতে আপত্তি করছিল, তো… মেনে নিলেন?”
-“হ্যাঁ, আমি জেদ ধরে বসেছিলাম, আর যাই হোক, ছেলে হিসাবে বিপ্লব তো আযোগ্য নয়। তাই বাবা শেষমেশ মেনে নিতে বাধ্য হল…”
-“আরে জিও… আচ্ছা, বিপ্লবের বাড়িতে কে কে আছে রে?”
-“ওর মা, বাবা… দিদির বিয়ে হয়ে গেছে।”
-“বাহ বাহ… একমাত্র ছেলে… কোন চিন্তাই নেই, একমাত্র ছেলের বউ হলে গুছিয়ে সংসার করতে পারবি।”
এ কথার পর সঞ্চারী আর পল্লবী একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মুচকি হাসে।
রাগেশ্রী সেটা দেখতে পায় আর বলে ওঠে;
-“না না, এটা হাসির কথা নয় রে। তিনভাইয়ের সংসারে থাকা যে কি চাপ, সেটা আমি ছাড়া কেউ বোঝে না। সব ব্যাপারে হয় ওর বৌদির অ্যাডভাইস শোনো, না হয় সব কাজের সমালোচনা শোন। এক শাশুড়ি তো আছেই, তার ওপর আবার দু’টো চ্যাঁ আর ভ্যাঁ যদি থাকে, লাইফ একেবারে হেল হয়ে যায়। দেখ, বাবা, মা আমাকে অনেক স্বাধীনতা দিয়েছিল; আর সেটা আমায় দিতে পেরেছিল কারণ মা বিয়ের পর বাবাকে নিয়ে আলাদা করে সংসার পেতেছিল বলেই। ”
এবার হঠাৎই, সমৃদ্ধা কথা বলে ওঠে…
-“আচ্ছা রাগেশ্রী, জয়েন্ট ফ্যামিলি মানেই কি খারাপ? আচ্ছা ধর একটা বড় সংসার, মা-বাবা-ভাই-বোন… আমরা মেয়েরা তো একটা কথা প্রায়শই বলে থাকি, যে শাশুড়ি কেন একটা মেয়েকে নিজের মেয়ে ভাবে না, বা ভাবতে পারে না… আচ্ছা, আমরাও তো দেওর, ননদ না ভেবে ভাই-বোন ভাবতে পারি না…”
রাগেশ্রী চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে,
-“ওসব কথাতেই শুনতে ভালো লাগে, আর বাংলা সিরিয়ালে দেখতে। কানের কাছে ঘ্যানঘ্যানানি শুরু হলে না, তখন সব গাত্রদাহতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। যখন কানের কাছে বরের বাপ-মা ‘এটা কোর না’, ‘সেটা কোর না’ ‘এখানে যেও না’, ‘সেখানে যেও না’ বলতে থাকবে, তখন বুঝবি, কত ধানে কত চাল।”
এবার সঞ্চারী হেসে উঠে বলে,
-“বাব্বা, তুই তো একেবারে প্রতিবাদী ভাবমূর্তি হয়ে উঠেছিস দেখছি! আচ্ছা, আমি মানলাম, যে একটা মেয়েকে তার মা-বাবা যেভাবে বড় করেছে, সেটাই তার লাইফস্টাইল, আর সে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সেটা বদল করবে কেন? এবার ভাব, তার ছেলেটির লাইফস্টাইল কিন্তু তার মা বাবার দেওয়া, পুরোটাই। এবার, একটা মেয়ে সেই ছেলেটিকে নীজের বলবে, সমস্ত অধিকার ফলাবে, আর তার লাইফস্টাইলের কিছুটা আপন করে নেবে না, এটা কি উচিত কথা?”
-“ও, মানে সমস্ত দায়িত্ব মেয়েটার, তাই তো?”
-“আমি সেটা কখন বললাম? তুই তো আমায় কথাটা শেষ করতেই দিলি না। দেখ, একেবারে আদর্শ অবস্থা হল, দুজনেই মিলে মিশে যাবে, দু’জনের লাইফস্টাইল, দুজনের ফ্যামিলি সব মিলে মিশে একটা বড়, হাসিখুশি, যৌথ পরিবার তৈরী হবে। যার মধ্যে দু’জোড়া বাবা-মা, ভাই-বোন, বিয়াই-বোনাই সব ইঙ্কলুডেড। আর যৌথ পরিবারে সবাই সবার কাজে একটু নাক গলাবেই। সেটাকে প্রাইভেসির অভাব ভাবলে ভাব, কিন্তু এটা ভুললে চলবে না, সবার জীবনেই ভালো আর খারাপ সময় আসে। ভালো সময়ে যেটা তোর ‘ইনভেসন অফ প্রাইভেসি’ বলে মনে হচ্ছে, খারাপ সময় সেই লোকগুলোই কিন্তু তোর হাসপাতালের লাউঞ্জে বসে থাকবে নাওয়া খাওয়া ভুলে, তোর একদিন হাঁড়ি না চড়লে, তোর মুখের গ্রাসটাও তুলে দেবে নিজে খাওয়ার আগে।”
-“মরি মরি… আমার বরের অত খারাপ অবস্থাও নয় যে মুখে গ্রাসের কথা ভাবতে হবে।”
-“হা কপাল! আমি এত কথা বললাম, আর তোর কানে গেল শুধু ভাতের কথাটাই?”
এবার যেন রাগেশ্রীর বিরক্তিটা গলায় প্রকাশ পায়।
-“তোর প্রবলেম কি বলত সঞ্চারী, আমাকে নিয়ে? সেই স্কুল থেকে দেখে আসছি, আমার সব কথার সমালোচনা না করলে তোর পেটের ভাত হজম হত না… এমনকি এতদিন পরে দেখা আর তুই…”
-“আমার ভুল বুঝিস না, ভাই। তুই একটা কথা বললি, আমি আর উত্তরে মতামত দিয়েছি কেবল। অন্য কথা বল।“
পল্লবী এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচে…
-“হ্যাঁ… বল বল। এত কঠিন কথাবার্তা বড্ড বদহজম হয়ে যাচ্ছে আমার।”
-“সমু, তুই বরং তোর আদিত্যর গল্প বল, শুনি। কি করে সে ?”
এবার পল্লবী আর সঞ্চারী একবার দু’জনে দু’জনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। কিন্তু তার আগেই সমৃদ্ধা উত্তর দিতে শুরু করে দিয়েছে;
-“ও একটা আই টি কোম্পানীতে চাকরী করে রে… তবে ইচ্ছে আছে পরে নিজের একটা পাবলিশিং কোম্পানি খুলবে।”
-“ওওওওও… হ্যাঁ, আসলে আই টি-এর বাজার খারাপ তো, অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছে তাই। নীজের ব্যবসার ব্যাপারই আলাদা। এই দেখ না, পরিমল ওর বাবার ব্যবসাটাকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছে! এককালে তো ওর পকেটে ৫০ টাকাও থাকত না… আর এই তো গত জন্মদিনে আমাকে গাড়ি গিফট করল…”
সঞ্চারী আর পল্লবী আবার একটু মুখ চাওয়া চাওয়ি করে একটা মৃদু ‘বা!’ বলে চুপ করে গেল।
-“অনেক ভাগ্য করে এরকম বর পেয়েছি রে… বিশ্বাস কর, ৯ বছর প্রেমের পর বিয়ে… এখনো মনে হয় এই তো দু’দিন হল প্রেমে পরলাম।”
-“তুই অনেক ভাগ্যবান, বুঝলি। আমার তো বিয়ের আগেই পুরোনো লাগছে… তার ওপর যা মাথামোটা… ভাট বকে বকে মাথা ধরিয়ে দেয়… এই তো… আজকে সাঁতরাগাছি গেছে ছবি তুলতে; সক্কালবেলা ফোন করে বক বক করে মাথা ধরিয়ে দিল… মাঝে মাঝে ভাবি কি দেখে প্রেমে পড়লাম। আগে বেস হ্যান্ডু হ্যান্ডু লাগত, এখন তো মুখ দেখলে ভোঁদড় ছাড়া কিছু মনেই হয় না…”
পল্লবীর এরকম কথায় সবাই হা হা করে হেসে ওঠে। পল্লবীও হাসতে হাসতে বলে,
-“আরে তোরা জানিস না, কিরকম… কলেজের লেকচারার, প্রথমদিন কলেজ গেছে, ক্লাসে ঢুকতেই লোকে ফ্রেসার ভেবে বলে ইন্ট্রো দে…”
সঞ্চারী উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল -“তারপর, তারপর?”
-“তারপর আর কি? বাবু ইন্ট্রো দিতে শুরু করলেন ‘আমার নাম বিপ্লব চক্রবর্তী, আমি তোমাদের অ্যাপ্লায়েড ম্যাথস-এর ফার্স্ট পেপার পড়াব…’ স্টুডেন্টরা চাপ খেয়ে একাক্কার কান্ড। ”
সবার দ্বিতীয় দফা হাসির দমকের মাঝেই রাগেশ্রী বলে উঠল,
-“আসলে কিছু কিছু ছেলেদের মধ্যে ওরকম একটা ব্যাপার থাকে… আলুভাতে, ভাই-ভাই… তাই লোকে লেকচারার কেও ফ্রেসার ভেবে ফেলে… কিছু ছেলের মধ্যে একটা ইনহেরেন্ট মাচো-ম্যান ব্যাপার থেকে থাকে… আর সত্যি বলতে ক্লাস টেনের ছেলেদের মধ্যে এই ব্যাপারটা পরিমলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ছিল… তাই তো আমি ওর প্রেমে…”
এবার সমৃদ্ধা বলে ফেলে…
-“বাব্বা… তোর তো সত্যিই প্রেম একেবারে টাটকা হয়ে রয়েছে…”
-“হুঁ হুঁ… বাবা… আগেই বলেছিলাম, গোছানো সংসার… প্রেমের বাসস্থান… দিনরাত শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির ফাইফরমাস না খাটতে হলে প্রেমে অনেক সময় দেওয়া যায়। আচ্ছা, সঞ্চারী… তোর ম্যারেড লাইফ কিরকম? শশাঙ্কদা কেমন? রোম্যান্টিক? ”
-“হ্যাঁ… তা একরকম বলতে পারিস। তবে পরিমলের মত অত নয়… আসলে আমিই সারাদিন ঘরের কাজ সামলে ওকে সময় দিতে পারি না…”
-“ইসস… দিস ইজ নট ফেয়ার… লোকটা দিনরাত খেটে মরছে, তারও তো একটু মনে রং ধরানোর দায়িত্ব তোর থাকা উচিত, তাই না ?”
সঞ্চারী চুপ করে থাকে… শশাঙ্কর মনে রং ধরানোর চেষ্টা সে এককালে করত ঠিকই, কিন্তু তারপর সে বুঝেছে কালো ক্যানভাসে রং চড়িয়ে আর যাই হোক ছবি আঁকা যায় না…
রাগেশ্রী ততক্ষণে তার মনোযোগ আবার ফিরিয়েছে সমৃদ্ধার দিকে।
-“দেখিস ভাই… তোর আবার প্রথম প্রেম তো, বেশী ভেসে যাস না… ভালো করে খোঁজ খবর নিস… আমাকে তো পরিমল প্রোপোজ করার পর আমি আগে বন্ধুদের থ্রু দিয়ে ওর বাড়ির খোঁজ খবর নিয়ে, তারপর হ্যাঁ বলেছিলাম… আসলে…”
-“আমার কাল ব্রেক আপ হয়ে গেছে রে… অন্য কথা বল…”
সমৃদ্ধার মুখ দিয়ে কথাটা বেরোনো মাত্র পল্লবী আর সঞ্চারী কি করবে ভেবে পেল না… কিন্তু রাগেশ্রী এতই প্রশ্ন করছিল, যে সমৃদ্ধা থাকতে না পেরে কথাটা বলে ফেলেছে। কিন্তু রাগেশ্রী এবার গোটা দুনিয়ার জ্ঞান একসাথে দিতে আরম্ভ কর…
-“ও মা… সো স্যাড! কি করে হল? কবে ?”
-“কালকে…”
-“কালকে! ও মাই গড! আর এতবড় কথাটা তুই আমাদের কাছে চেপে যাচ্ছিলি? আমরা না তোর কোন ছোটবেলার বন্ধু ?”
-“না… এমনিই… ওসব কথা বাদ দে… অন্য কথা বল…”
-“হ্যাঁ… লেটস মুভ অন… আসলে তুই আস্তে আস্তে বুঝতে পারবি, নট এভরিওয়ান ইজ মেড ফর রিলেশনশিপ্স… কিছুদিন পর…”
এবার রাগেশ্রীর কথায় একটা বড় ধাক্কা পড়ল… সঞ্চারী প্রায় চিৎকার করে উঠল;
-“শাট আপ! হাউ ডেয়ার ইউ! একটা মেয়ে, তার গতকাল ব্রেক আপ হয়েছে, আর আজ তাকে তুই এই জ্ঞান দিচ্ছিস? তোর এমপ্যাথি তো কোনকালেই ছিল না, সিন্স হোয়েন ডিড ইউ বিকেম স্যাডিস্টিক ?”
পল্লবী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু রাগেশ্রীও উল্টোদিকে উত্তর দিতে শুরু করে দিয়েছে?
-“স্যাডিস্টিক? আমি কি ভুল বলেছি? সবার অত মনের জোর থাকে না, ৮-৯ বছর একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার, তারপর সেটাকে বিয়ের পিঁড়ি অবধি নিয়ে যাওয়ার, সেটাই বলেছি…”
–“তোর কি ধারণা গোটা পৃথিবীতে একাই প্রেম করেছিস, আর প্রেম করে বিয়ে করেছিস?”
–“না, সে কথা আমি একবারও বলিনি আমি শুধু বলেছি, অনেক কপাল করে পরিমলের মত…”
–“আরে তো যা না, তোর বরের কোলে গিয়েই বসে থাক না, আমাদের সাথে মরতে এসেছিস কেন…”
–“ফাইন! গো অ্যান্ড বি হ্যাপি উইথ ইয়োর শিটি প্যাথেটিক লাইফ…”
রাগেশ্রী উঠে গট গট করে বেরিয়ে যায়। আর সমৃদ্ধা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। সঞ্চারী আর পল্লবী তাকে সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। সঞ্চারী ব্যাগ থেকে রুমাল বার করে সমৃদ্ধার চোখ মুছিয়ে দেয়।
-“কাঁদিস না, সমু… প্লিজ… চোখ মোছ…”
সঞ্চারী একটু ধাতস্থ হতে না হতে হঠাৎ পল্লবী কাঁদতে শুরু করে দেয়… শব্দ হয় না, শুধু চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। সঞ্চারী এবার একটু অবাক হয়ে গিয়েই বলে ফেলে
-“আরে! তোর আবার কি হল?”
সমৃদ্ধাও কান্না ভুলে গয়ে পল্লবীর দিকে অবাক হয়ে তাকায়। পল্লবী মুখ খোলে…
-“আমি জানি না… জানি না আমার বিয়েটা কতটা সুখের হবে… বাবা বিয়েটা মেনে নিয়েছে ঠিকই; কিন্তু বিপ্লবকে নিয়ে বাবার অনেক সমস্যা আছে… আর তাই বিপ্লবও বাবাকে খুব একটা উঁচু নজরে দেখে না…”
সঞ্চারী পালা করে দু’জনের চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলে,
-“রি-ইউনিয়নের দিনে রাজ্যের কান্না নিয়ে বাবুর এসেছেন আমার রুমালে মুখ লুকোতে… বাবা রে বাবা… দাঁড়া, তোরা বস তো একটু…”
সঞ্চারী কোথাও একটা চলে যায়, কিছুক্ষণ বাদে হাতে তিনটে আইস্ক্রিম নিয়ে এসে হাজির হয়। দু’জনের হাতে দু’টো চালান করে তারপর একটা নিয়ে বসে বলে,
-“আইসক্রীম আর কান্না, দু’টোই তাড়াতাড়ি শেষ কর, আমার জরুরী কিছু কথা আছে…”
পাঁচ মিনিট বাদে, তিনটে আইসক্রীমের শূন্য কাপ টেবলে নেমে আসার পর, সঞ্চারী মুখ খোলে;
-“বাবার ক্যানসার ধরা পড়ার পরই, বাবা আমার বিয়ে দিতে চান। একটাই ছেলে দেখেছিলেন, আমি অপচ্ছন্দ করিনি। শশাঙ্ক আর আমার সংসারটা কিন্তু মোটেই সুখের নয়। আমি ভেঙ্গে বলছি না, ধরে নে রাগী স্বামী-দজ্জাল শ্বাশুড়ি গোছের কিছু একটা… শুধু বাবার কথা ভেবে… না, বাবাদের কথা ভেবে; আসলে শশাঙ্কর বাবাও আমায় বড্ড ভালোবাসেন… আমি সব ভুলে ‘ভাল আছি’ এই ভেবে বাকি জীবনটা কাটাতে রাজি হয়ে গেছি… কেন? আমার মনে হয়েছে, তাই… আমি চাইলেই বাবার অমতে নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজে নিতে পারতাম… কিন্তু নিই-ই নি… আই হ্যাভ মেড মাই চয়েস, অ্যান্ড আই উইল হ্যাভ টু লিভ উইথ ইট…”
পল্লবী আর সমৃদ্ধার মুখে একটা থতমত ভাব জমে আছে… সঞ্চারী সেদিকে তাকিয়ে আবার বলা শুরু করে…
-“আর চয়েসের কথা যখন উঠল, তখন বলি। সমু, তুই আজই আদিত্যকে ফোন করবি, আর বলবি যে ওর বাবা মা কেন, তুই সাক্ষ্যাৎ যমরাজের সঙ্গেও ঘর করতে রাজি আছিস, যদি ও তোর সাথে থাকে, ব্যাস। আর পল্লবী, তুই আর এক গাধা; বুঝলি! বিয়ের কার্ড ছাপা হয়ে গেছে, আর উনি কাঁদতে বসেছেন… কি হবে বিয়ের পর? যা হবে হবে… ভুলে যাস না, বিপ্লবদা কিন্তু তোর পাশেই থাকবে; যাই হয়ে যাক না কেন।“
-“কিন্তু…”
-“আবার কিন্তু? ওরে মাথামোটা সমু, তোর আর আদিত্যর মনে হচ্ছে, বিয়ের পর যদি ওর মা-বাবার সংসারে গিয়ে মানিয়ে না নিতে পারিস; যদি সুখে না থাকিস, তাহলে কি হবে? একবার ভাব তো, যদি সারাজীবন আলাদা থাকতে হয়, সেটা কতটা সুখের হবে? হ্যাঁ হয়তো আমার মত রদ্দি পচা জীবন হবে না, বা হয়তো রাগেশ্রীর মত পাটরাণীর আরামেও তোরা থাকবি না, কিন্তু একবার ভাব তো? যে লোকটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস, তাকে ছাড়া সারাজীবন থাকতে পারবি? বুকে হাত রেখে বলত? জীবন যতই কঠিন হোক, মনে রাখিস, দিনের শেষে একজনের বুকের আশ্রয়ে লুকোনোর যে আনন্দ, সেটা অনেকটা এই কান্নাকাটির শেষে আইস্ক্রিমের মত…”
কথা শেষ করে সঞ্চারী… কিছুক্ষণ নীরবতা… তারপর হাসি ফোটে… প্রথমে পল্লবীর, তারপর সমৃদ্ধার…
The END
I know… “I’m Late” will be an understatement. But the story concluded. I might have rushed the ending a little bit. But it had to end, after all…
From Next Saturday, Libberish returns to it’s original format. Each Saturday… Like a clockwork.
Now that the whole story ended, Please let me know your thoughts in the comments below.
Also, Thank You, for Tolerating me for this long…
Peace…
Neel…
Pingback: Cherry Bomb – Fifth Installment – Libberish