পঞ্চম পরিচ্ছেদ – আজ আবার সেই পথে…
<< Read Previous Installment… …Read Final Installment>>
পল্লবীই প্রথম দেখতে পায় সমৃদ্ধা কে। আর প্রায় ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে…
-“আরে ভাই ভাই ভাই ভাই…”
তার আলিঙ্গনের ঠ্যালায় প্রায় উলটে পড়ে যাচ্ছিল সমৃদ্ধা। কোনোরকমে সামলায়। তারপর হাসতে হাসত একটা প্রতি-আলিঙ্গন করে বলে,
-“আপনে জাসবাতো পর কাবু রাখিয়ে বেগম… তারপর বিপ্লবদা আমার গর্দান নেবে, তুই আছাড় খেয়ে হাত পা ভাঙলে।”
-“হ্যাঁ, আর তুই মাজা ভাঙলে তো আদিত্য বাবু আমায় পুজো করবে… ফুল চন্দন দিয়ে…”
আদিত্যর কথা উঠতেই মুখটা এক মুহুর্তে গম্ভীর হয়ে যায় সমৃদ্ধার। কিন্তু পল্লবীকে সেটা বুঝতে না দিয়ে সে বলে ওঠে,
-“বাকিরা কই? সঞ্চারী, রাগেশ্রী… আচ্ছা, আমাকে বল তো, খামোখা রাগেশ্রীকে ডাকার কি দরকার ছিলা এখানে? জানিস তো, ওকে কারোর পোশায় না…”
-“আরে বাবা। দোষটা আমারই। হোয়াটস্যাপ-এ মেসেজ করে করে জ্বালাচ্ছিল, মুখ ফস্কে; থুড়ি হাত ফস্কে মিটের কথাটা বলে ফেলেছি। তখন ভদ্রতার খাতিরে ইনভাইট করতে হল…”
সমৃদ্ধা, একটা অদ্ভূত চোখে, ঘাড়টা বেঁকিয়ে পল্লবীর দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর বলে,
-“হাত ফস্কে, একটা মিটের কথা, বেরিয়ে গেল… তাই না ? মানে লোকে বেশী পড়াশোনা করলে এই হয়… তারপর বাজার থেকে পাকা ফল কিনবে বলে পাকা শসা কিনে আনে…”
পল্লবী একটা কৃত্রিম রাগের ভান করে বলল,
-“দেখ সমু, এটা কিন্তু ‘বিলো দ্যা বেল্ট’ হয়ে গেল। সেটা একবার হয়েছিল, তাও ক্লাস টুয়েল্ভ-এ…”
-“কাকিমা কি যেন বলেছিলেন? শসা দেখে?”
-“কিছুই বলেনি, নেচে নেচে গান গেয়েছিল… ‘ধন্য ধন্য বলি তারে…’ ”
এবার দুজনেই এত জোর হেসে ওঠে, যে আশেপাশের পথচলতি লোকজন হাঁ করে তাকিয়ে দেখে ওদের দিকে…
দু’জনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার একবার মুচকি হেসে ফেলে…
পল্লবী বলে ওঠে,
-“চল বন্ধু, কেটে পড়ি… এরা আমাদের অন্য গ্রহের মানুষ ভাবছে…”
দু’জনে এসকেলেটরে করে ওপরে উঠতে থাকে, সাউথ সিটির ফুড কোর্ট-এর দিকে। উঠতে উঠতে পল্লবী ফোন করে রাগেশ্রীকে, ফোন বিজি পায়; আর সঞ্চারী জানায় সে এসে পড়েছে। ফুড কোর্ট-এ লোকজন থেকে দূরে, জুতসই একটা টেবলে বসতে না বসতেই সঞ্চারী ফোন করে জানায় যে সে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েছে, ফুডকোর্টের দিকে আসছে।
৫ মিনিটের মধ্যেই সঞ্চারী এসে পৌছায় আর সমৃদ্ধা আর পল্লবী দু’জনেই পালা করে তাকে জড়িয়ে ধরে।
-“বাব্বা! বিয়ের পর তো আরও সুন্দরী হয়ে গেছিস দেখছি! বরের আদরে আদরে, নাকি?”
-“থাম তো তোরা… সরকারী অফিসারদের আর বঊকে আদর করার সময় থাকে না…”
পল্লবী চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে,
-“ওই দেখ… মেয়ে শো-অফ করছে…”
সঞ্চারী এক চাঁটী কষিয়ে দেয় পল্লবীর মাথায়… তারপর হেসে ওঠে… আর মেকআপের পেছনে লুকিয়ে থাকা চোখের কোনের কালিটাও যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাঁচে।
-“হ্যাঁ, ভালো কথা, সমু, তোর লাভ স্টোরীটা এইবেলা শুনে ফেলি, মানে রাগেশ্রী আসার আগেই। তিনি এলে তো আর কাউকে কিছু বলতে দেবেন না।”
পল্লবীও সায় দেয়। দু’জনেই উৎসুক চোখে সমৃদ্ধার দিকে তাকায়। সমৃদ্ধার মুখের হাসিটা মিলিয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে আসে।
-“থাম তো, ওসব পড়ে হবেখন। তোরা বল, তোদের কি খবর…”
-“না না, ওসব কথায় ভুলছি না। আগে ফুল হিস্ট্রি শুনব।”
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে সমৃদ্ধা। তারপর বলে,
-“কাল রাতে আমাদের ব্রেক আপ হয়ে গেছে…”
পল্লবী আর সঞ্চারী দু’জনেই আঁতকে ওঠে…
-“মানে !!! কি করে হল? কে করল?”
-“আদিত্যই করল। আসলে…”
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সঞ্চারী বলে উঠল,
-“দ্যাট স্কাউন্ড্রেল… কেন? চাবকে লাল করে দিতে ইচ্ছে করে এসব ছেলেদের… যতসব…”
-“রঞ্জিত মল্লিক হয়ে ওঠার আগে আমার কথাটা শেষ করতে দিবি?
সঞ্চারী থেমে যায়। সমৃদ্ধা কয়েকমুহুর্ত চুপ করে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ বলতে শুরু করে;
-“বইমেলায় দেখা, জানিস তো; প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটা বইয়ের লাস্ট কপি পড়ে ছিল স্টলে, আমি বিলিং এ যেতেই একটা ছেলে পেছন থেকে এসে ঝগড়া শুরু করল; বলে ওটা আমার বই, আমি প্রথম দেখেছি। আমাদের ঝগড়ায় বিরক্ত হয়ে স্টলের লোকেরা বলল এ বই বিক্রি হবেনা…
দু’জনেই মুখ গোমড়া করে বেরিয়ে এলাম। তারপর ছেলেটি কফি অফার করল। কফি খেতে খেতে অনেক কথা হল। ছেলেটা জাস্ট চাকরীতে ঢুকেছে, মনের ইচ্ছে টাকা-পয়সা জমিয়ে একটা প্রকাশনা খুলবে, যাতে কেবল নতুন লেখকদের বই ছাপানো হবে।
কথায় কথা বাড়ল, আর বাড়তে বাড়তে প্রেম। এরকম ছেলে আমি কোনোদিন দেখিনি, জানিস; এত কেয়ারিং, এত সরল, এত ‘অন্যরকম’। কোনোদিন না…
গান শোনানো থেকে কবিতা লেখা… অনেক পাগলামী করত। কখনো মনে হত পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চার সঙ্গে প্রেম করছি, কখনো মনে হত একটা ম্যাচিওর্ড, গম্ভীর, সিরিয়াস লোকের সাথে, যার চিন্তাভাবনার, ইন্টেলেক্ট-এর স্তরে, আমি কোনদিনই পৌছতে পারব না।
তোরা জানিস, বাবা মারা যাওয়ার পড় থেকে মা কত স্ট্রাগল করে কাকা-জ্যাঠাদের সাথে লড়াই করে কিভাবে বড় করেছে আমাকে। অনেক ধরনের পুরুষ দেখেছি, কিন্তু এরকম নয়। আমার ভয় করত, ওর মা-বাবা, একটু কনজারভেটিভ টাইপের। ভাবতাম, মানাতে পারব তো? আমাকে অনেক করে বোঝাত, বলত, সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।
মা আমাকে বার বার করে বলত, কাউকে মা-বাবার থেকে আলাদা করে দিবি না কখনো, আর আদিত্যও, মা বাবাকে বাদ দিয়ে সংসার পাতার কথা ভাবতেই পারে না। তাই হয়তো অতবার করে বোঝাত, মা-বাবাকে, আমাকেও। এরকম করে বছর দেড়েক কেটে গেল। সম্পর্কের টালমাটাল ফেজটা কেটে যাওয়ার পর বেশ ভালই চলছিল, সুখে, শান্তিতে। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে ওকে খুব ডিস্টার্বড শোনাচ্ছিলা। কথা বলছিল না ঠিক করে।
পরশু মুখ খুলল। বলল, বাবা – মা দু’জনেই বিয়ে নিয়ে ঝামেলা করছে, তাদের বউমা সম্পর্কে নানান দাবী-দাওয়া, আর তার অধিকাংশই যুগোপযোগী নয়। আদিও ঝগড়া করেছে, বলেছে ওরকম বউ তার চলবে না, বা তাদের অনেকগুলো চিন্তাই অন্তঃসারশূন্য; ওর বাবা-মা ঝগড়ায় হয়তো হার মেনে গেছে, কিন্তু মনের পরিবর্তন কারোর তো আর একটা ঝগড়ার পড়ে আসতে পারে না;
আমি আবার বললাম… আমি কি করে মানাবো ???
চুপ করে গেল… বলল একটু একা থাকতে চায়… সেদিন সারাদিন আর কথা বলল না।
কাল আমাদের দেখা করার কথা ছিল। সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের একটা বেঞ্চে বসে, আমার হাত ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ওর সাথে আমার বিয়ে হলে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। ওর এতদিন মনে হয়েছিল যে বাবা-মা কে ম্যানেজ করে ফেলবে। কিন্তু আজ আর সে ভরসা নেই। ওর মা-বাবা, তাদের পরিত্যাগ করতে ও পারবে না, তাদের সব খামখেয়াল, রাগ, চিৎকার, সেটা ফেস করা, আর সহ্য করা ওর দায়িত্ব, ওর এসব সহ্য করতে বাধ্য, কিন্তু আমি বাধ্য নই। ও চায়না, আমি বিয়ের পর সারাজীবন সাফার করি। তাই ও সম্পর্কে ইতি টানতে চায়।
কাঁদতে কাঁদতে আমার হাত ধরে বলল, আমাকে ছাড়া আর কোনোদিন কাউকে ভালোবাসবে না। মা-বাবা যাই বলুক, যাই করুক, অন্য কাউকে বিয়ে করবে না।
দু’জনে খুব কাঁদলাম কাল। তারপর আমাকে বাড়ি ছাড়ার সময় ও অনেকটা নর্মাল হয়েছিল, কিন্তু আমি সারারাত…”
কান্নায় গলা বুজে এল সমৃদ্ধার। সে পার্স খুলে রুমাল বের করল, তার দু’দিকে পাথরের মত থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে সঞ্চারী আর পল্লবী। সঞ্চারী আস্তে আস্তে তার কাঁধে একটা হাত রাখল। পল্লবী কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠল।
-“হ্যালো! হ্যাঁ রে, আমরা ফুড কোর্ট-এ… হ্যাঁ, চলে আয়…”
ফোনটা রেখে পল্লবী বলল,
-“তাড়াতাড়ি চোখটা মোছ, সমু… রাগেশ্রী এসে পড়েছে… এখুনি হাজারখানা প্রশ্ন করবে…”
To be Continued…
<< Read Previous Installment… …Read Final Installment>>
I know… I’m late… So Very Very Late… But I promise to conclude this story by Next Week… I promise… Thank you For Sticking With Libberish….
By the way, how do you like the New Facelift of Libberish? Do Let me know in the Comments….
Peace…
Neel…
Pingback: Cherry Bomb – Fourth Installment – Libberish
Pingback: Cherry Bomb – Final Installment – Libberish