‘A poem begins as a lump in the throat, a sense of wrong, a homesickness, a lovesickness.’
Robert Frost
সব লেখা যে লেখার দরকার আছে, এরকম মাথার দিব্যি কেউ দেয়না, এমনকি সত্যি করে কোনও লেখা লেখার জন্যই কেউ কাউকে… যাক গে সে কথা…
সব লেখাই সাহিত্য হয় না, অর্থহীন লেখাকে আমরা ইংরেজিতে আদর করে নাম দিয়েছি ‘gibberish’ আর সেই gibberish-এ পাতা ভরাতে, আমার থেক পটু বোধহয় কেউই নেই… ভালো করে ভেবে দেখলে, আমার গোটা এই ব্লগটারই কোনও অর্থ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না…
সারাদিন অফিসের পর, মেট্রোতে বসে লেখা শুরু করার বাতিকটা শুধু আমার মধ্যেই দেখা যেতে পারে, এ ব্যাপারে আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত; কিন্তু প্রশ্নটা হল, ঠিক কি নিয়ে লেখাটা লিখতে শুরু করলাম আমি?
একটি মেয়েকে আমি ভালোবাসতাম… সে মেয়েটার মুখে হাসি ছিল, গলায় ছিল রবীন্দ্রসংগীত, আর দু’চোখে অনেক অনেক স্বপ্ন… সেই স্বপ্নে মিশে যেত আমার কল্পনা, আমার উচ্চাশা; আর আমি কথা বলার শব্দ হারিয়ে ফেলতাম; সেই স্বপ্নভরা দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হাসতাম।
কিন্তু কথা হল, এসব অতীতকাল কেন? কেন হঠাৎ এত আনন্দের কথা আমি পাস্ট টেন্স এ বলছি?
এ প্রশ্নের উত্তর বেশ জটিল, বেশ গোলমেলে…
অনেকেই হয়তো ভাবতে শুরু করেছেন, এ আর নতুন কি? ভালোবাসা তো ফুরোতেই পারে একদিন; আর আজকালকার ছেলেমেয়েদের তো কোনও কিছুরই ধৈর্য্য নেই; সবকিছুকেই নস্যাৎ করে, সবকিছুকেই ‘টেম্পোরারি’ মার্কা দিতে যুবসমাজের থেকে ভালো আর কে পারে?

কিন্তু না, ভুল ভাবছেন সমাজপতিরা, যাঁরা সমাজ সমাজ নাম দিয়ে একটা খাঁচা তৈরী করেছেন, আর নিজেদের সুবিধামত, সেই খাঁচার গারদ করেছেন সরু, আর একট একটা করে নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করে, সেই খাঁচাকেই দিন দিন করে তুলেছেন আরও আরও সংকীর্ণ।
আপনাদের জন্য নয়; আপনাদের ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো, এই হতভাগা যুবসমাজের জন্য…
তাই আমি আর মেয়েটা নিজেদের ভালোবাসাকে নিয়ে, এরকমই একটা খাঁচায় বাস করি, সে খাঁচায় আলো বাতাসের অভাব নেই এখনো অবধি, কিন্তু কি জানেন তো, এখন সেই মেয়েটার চোখের দিকে তাকালে আমি আর একটা খাঁচা দেখতে পাই, আর একদিনের ডানা মেলা স্বপ্নগুলো, সেই চোখের খাঁচায় অসহায়ের মত ডানা ঝাপটে চলে…
তাই না, ধৈর্য্যের প্রশ্ন এটা নয়… আমি বুক ঠুকে বলতে পারি সমাজপতিরা, আপনাদের থেকে অনেক বেশি ধৈর্য্য আমাদের আছে, অনেক বেশি সাহস আমাদের আছে, আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারি না বলে, অপ্রিয় হওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে, অনেক অনেক বেশি…
ভুলবেন না, আপনাদের এই খাঁচাগুলোর মধ্যে আমদের গড়ে উঠতে হয়েছে, তাই খাঁচাকে আমরা ভয়ও পাইনা মোটে; আর সেই অর্থহীন খাঁচার দরজা ধরে বেশ কয়েকবার জোরে জোরে নাড়া দিলেই, অর্থহীন ঠুনকো নিয়মে তৈরী সেই খাঁচা কিন্তু ভেঙ্গে পড়বে ধড়ফড় করে…
কিন্তু, নাড়াটা দিতে হবে… সেখানেই সমস্যা; কারণ ছোট থেকে যাদের এক এক করে এইসব খাঁচায় পালছেন, তাদের কেউ কেউ আপনাদের পোষ মেনে গেছে, সমাজপতিরা; কেউ বা ভয়ে, কেউ জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পেয়ে, কেউ বা অনন্যোপায় হয়ে, আর কেউ বা স্রেফ মাথানত বশ্যতায়, চিৎকার করে বলতে চায়,
‘আমাদের খাঁচাই ভালো! আমাদের মতো আমাদের স্বপ্নগুলোও খাঁচায় বড় হবে, আর আমাদের খাঁচার মধ্যেই আমরা তৈরী করব অনেক অনেক খাঁচা…’
আর তাই মনে হয়, কি লাভ হবে? সব ভেঙ্গে দিয়ে, সব নিঃশেষ করে দিয়ে যখন এই অচলায়তন থেকে বেরিয়ে পড়ব, তখন তো দেখব, চারপাশে শুধু খাঁচা আর খাঁচা, সমাজের চিড়িয়াখানায়, আমরা দুই দর্শক; যারা স্বপ্ন দেখে বাঁচতে চেয়েছিল, ভালোবেসে…
শান্তির আশায়,
নীল…