হ্যাঁ, ওপরের শিরোনামটা দেখলে মনে হবে বাসি খবর বা পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটতে বসেছি। কিন্তু আজ যে কথাটা বলতে চাই, তার জন্য অন্য কোনও ভাবে লেখাটা শুরু করা সম্ভব নয়।
অনেকের অনেক বক্তব্য ছিল এই #MeToo মুভমেন্ট নিয়ে। অনেক জায়গায় অনেক নোংরা বাস্তব সামনে এসেছে, অনেক জায়গায় অনেকে খবরে আসার জন্য সার্কাস করেছে; কিন্তু মোদ্দা কথা একটাই। এবং সেটা ‘ফ্যান্টম’ প্রোডাকশান হাউস ভেঙ্গে যাওয়ার পর, একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ।
আমাদের চারদিকে সমাজের পরিবর্তন অনেক ঘটেছে দিনে দিনে, মানে গত দশ বছর আগে মেয়েরা যে অবস্থায় ছিল, বা যে প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হত, সেটা অনেকটাই বদলেছে। কিন্তু একটা ব্যাপার রয়েই গেছে। ছেলেদের ইগো আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বসবাসের ফলাফল হিসাবে, একটা ছোট্ট নারীবিদ্বেষের বীজ সবার মধ্যেই থাকে, আর সেটা অনেকক্ষেত্রেই মহীরুহের আকার নেয়। আর, তাই আমরা অজান্তেই মানসিক বা শারিরীক অত্যাচারের পথে হেঁটে ফেলি।
একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে তাকে প্রোপোজ করলেন। মেয়েটি আপনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। আপনি কিন্তু হাল ছাড়লেন না। ভাবলেন আজ না কাল তার হৃদয় পরিবর্তন হতেই পারে। আপনি পেছনে ঘুরঘুর করতে শুরু করলেন, তাকে ডেডিকেট করে গান-কবিতার ফোয়ারা ছোটালেন। রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে হাত ধরার চেষ্টা করলেন… মেয়েটি বারণ করলে ছেড়েও দিলেন, কিন্তু রাতে হৃদয়বেদনা-জনিত স্ট্যাটাস দিলেন আবার… হয়তো মেসেজ করলেন ‘একবার হাতটা ধরতে দিলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত…’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
চেনা চেনা লাগছে ? এরকম কাজ অনেকেই করছেন/করেছেন। সত্যি কথা বলতে, এরকম ‘পশ্চাতদেশীয়’ কাজকর্ম আমিও করেছি এককালে।
একটু ভেবে দেখুন তো, আপনার এই নাছোড়বান্দা প্রেম নিবেদনের জন্য মেয়েটার কি হাল হচ্ছে? ভেবে দেখেছেন কখনো? সেটা কি মানসিক অত্যাচার নয়?

তবে হ্যাঁ, সব জিনিসেরই দু’টো দিক আছে। আপনার এই ঘ্যানঘ্যানানির সুযোগ নিয়ে, অনেক মেয়েই নিজের আখের গুছিয়ে নেয় (হ্যাঁ, সেরকম ঘটনাও আমার সাথে ঘটেছে)।
এইরকম ঘটনা নিয়ে একটু তলিয়ে ভাবলেই দেখবেন, কত আপাত-নিষ্পাপ ঘটনার ভেতরে মিসোজেনি আর মেয়েদের ছোট করার হাজারটা ছোট ছোট ঘটনা লুকিয়ে আছে। কিন্তু সমস্যাটা হল, আমাদের ভেতরের সেই বীজটা আমাদের তলিয়ে ভাবতে শেখায় না। আমাদের মনে হয় ‘মেয়েটার পেছনে এত সময় (অনেকক্ষেত্রে পয়সা) খরচ করছি… একটু পাত্তা দিতে কি হয় ? এত দেমাক কিসের ?’
এখানে একটাই কথা উত্তর হয়… ‘না মানে না’। ‘পিঙ্ক’-এ অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, ‘না একটি বাক্য’…
তাই, তলিয়ে ভাবার সময় এসেছে। তাই অজানা মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর আগে দু’বার ভাবুন…
একটি মেয়েকে চ্যাট-এ ‘হাই’ লিখে পাঠাবার আগে তলিয়ে ভাবুন…
কারণ ওই ভাবার ক্ষমতাটা আছে বলেই আমরা এখনো মানুষ। ঠিক আর ভুলের পার্থক্য করতে পারি বলে, জান্তব প্রবৃত্তি গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি বলেই আমরা মানুষ…
শান্তির আশায়…
নীল…
পুনশ্চ – গত সপ্তাহে লেখা হয়নি। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আবার ল্যাপটপ ধরা। শনিবার থেকে আবার নিয়মানুবর্তিতা রক্ষা করার চেষ্টা করব…