এ প্রশ্নটা অনেকের মনেই থাকতে পারে, মানে নভেম্বরের পর থেকেই তো লিবারিশের পাতা শুন্যি, তাই আমি লেখা ছেড়ে দিলাম কিনা, এ নিয়ে অনেকে সন্দেহ করছেন, আর অনেকের হয়ত সেটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে। যাকগে যাক, ক্ষমা চাওয়ার কোনও মানে হয় না, কিন্তু কিছু কৈফিয়ত তো দিতে হয় বটেই, কারণ অফিস নামক যাঁতাকলটির সাথে আমার পরিচয় এই হালেই, তাই অফিসের পর পর সাহিত্যচর্চা আপাতত ডুমুরের ফুলের পর্যায়েই আছে, আর তাছাড়া, গত বছরের শেষ থেকে আমাকে কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও ব্যাস্ত হয়ে পড়তে হয়েছিল, আর তাই লেখা হয়ে ওঠেনি। আর আমার ইউটিউবের চ্যানেল, যেটা লিবারিশের থেকে একটু বেশি সময় দাবী করে, সেটা চালাতেও অনেকটা সময় বেড়িয়ে যাচ্ছিল আমার।
তবে তার আগে থেকেই একধরণের লেখা আমার ব্লগে অনেক কমে এসেছিল, যেটা হল পলিটিক্যাল র্যান্ট। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে করে (পড়ুন খিস্তি করে), নিয়মিত পোস্ট দিয়েছি আমার ব্লগে, আর বার বার এ ও স্বীকার করেছি যে বালিশে হেলান দিয়ে ফেসবুক আর ব্লগে লিখে নিজের ‘ইগো’-মৈথুন ছাড়া আর কিছুই করা যায় না। আর আগের ভোটের (মনে নেই, আমার এখনো লোকসভা আর বিধানসভার মধ্যে গুলিয়ে যায়) সময় লিখেছিলুম আমার ইলেক্টাইল ডিস্ফাঙ্কসান আছে।
তবে ভোট আবার এসেছে, এই তো লিখছি, আর কেউ একটা বিগ্রেড যাওয়ার আহ্বান করে মাইকে তারস্বরে চিল্লাচ্ছে। ফেসবুকেও ক’দিন ধরে দেখতে পাচ্ছি, ব্রিগেড , টুম্পা, বিজেপি, তৃণমূল, কোকেন, চালচুরি, বেকার, কর্মসংস্থান, মোদী, মমতা সব নিয়ে বিস্তর ক্যাচরা চলছে।

ফলাফল কি হবে? ভোটের আগে এই বাকবিতন্ডা চলবে, ভোটের পরে বাঙালি সুনীল গাঙ্গুলির মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবে, ‘কেউ কথা রাখেনি’। কারণ, আমি সত্যি বলছি, আমার কি আসে যায়? আমি সত্যিই সেই পর্যায়ে চলে গেছি; যেখানে সব কিছি ভাবলেই আমার একটাই উত্তর আসে, ‘আমার কি?’
না, মানে ধরে নিলাম, এবার ভোটে তৃণমূল জিতল, -আমার কি?
বা বিজেপি জিতল, – তাতে আমার কি এল গেল?
না হয় ৩৪ বছরেও যদি বাঙালির শিক্ষা না হয়ে থাকে, তাহলে আবার বামফ্রন্টও না হয় ফিরে এল, -তাতেও আমার ‘কালেকটিভ অবস্থার’ কি পরিবর্তন হবে?
না, আমাকে রোজ অফিস যেতে হবে, আমাকে আমার পরিশ্রমের পরিবর্তে আমার জীবনের অন্য জিনিসগুলো অর্জন করতে হবে, মহাকরণ বা পার্লামেন্টের ভেতরে যে রঙের আধিক্যই হোক না কেন। যারা মনে করছেন, সরকার পরিবর্তন হলে, অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে, তাঁরা সত্যিই মূর্খের স্বর্গে বার করছেন।
আরে মশাই, ব্যাপারটা পলিটিক্যাল পার্টির নয়, ব্যাপারটা থার্মোডায়নামিক্স। একটা সিস্টেমের, (মানে এখানে আমাদের সমাজের) এন্ট্রপি, কখনো নেগেটিভ হতে পারে? পারে?
আমার মনে হয়, এবার ডক্টর স্ট্রেঞ্জের মতো আমাদেরও বোঝার সময় এসেছে, যে আমরা “just another tiny momentary speck within an indifferent universe”…
এটাই সত্যি। “দলের আদর্শ”, “দলের সমর্থক” এই ধরনের খেলো আর লোকদেখানো কথাগুলো তাদেরই শোভা পায়, যাদের পেটের চিন্তা করতে হয় না, যাদের হাতে প্রচুর সময়, আর যাদের একদিন অফিস না গেলে ক্যাজুয়াল লিভের হিসেব কষতে হয় না, যাদের মাসের শেষ এলে শেষ ১০০ টাকাটা কোথায় খরচ করতে হবে ভাবতে হয় না।
বেকারত্ব, কোভিড, উম্ফুন, গত বছরে এতকিছু সয়ে এসেই বলছি, বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে মাথা নষ্ট করা আমার শোভা পায় না, আমাদের শোভা পায়না, যারা ওপরের এই সামাজিক ভাগের মধ্যে বর্তমান…
তাই, আর না… লিখব না… গল্প লিখব, কবিতা লিখবে, যা মনে হয় তাই লিখব, কিন্তু দেশের কি হল, বা দেশের কি হবে, এই নিয়ে মাথা আমি ঘামাব না, আমার সময় নেই। গোল্লায় যাক দুনিয়া, গোল্লায় যাক দেশ…
শান্তির আশায়…
নীল…