স্তুপ – দ্বিতীয় পর্ব

বিধিসম্মত সতর্কীকরন : গল্পটা একেবারেই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। গল্পের ভাষা অনেকের গাত্রদাহের কারণ হতে পারে, ভাষা নিয়ে ছুৎমার্গ থাকলে পড়বেন না। এ গল্প আপনার জন্য নয় তাহলে।

তিন – পরোয়ানা

শচীন দেয়ালটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। কালচে লাল, কমলা আর গেরুয়ার অদ্ভূত সংমিশ্রনে তৈরী ওই দেয়ালের রঙ। তার ঠিক মাঝে সাদা গোটা গোটা অক্ষরে লেখা “বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস…”। ঠিক চারদিন আগে এই রঙ করাটা শেষ হয়েছে… সমীর একা হাতে করেছে পুরো কাজটা। তাদের দলের সবথেকে কমবয়সী এবং সবথেকে উৎসাহী সদস্য সে। কথায় কথায় ‘চারুদা চারুদা’ করে মাথা খারাপ করে দেয়। কমবয়সে হয়তো শচীনও এরকম ছিল… হ্যাঁ সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান তার বেশীদিনের নয়, কিন্তু নীজের ভেতরের সেই উদ্দীপনাটার অভাব সে বড্ড বোধ করে আজকাল। আর তাই বোধহয় দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে, আজ নিজের আখেরের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে সে। তাদের এই ডেরার এগারো জন, যাদের পেছনে আদা-জল খেয়ে লেগে রয়েছে রনদীপ গুহ নিয়োগী। কলকাতার ‘নকশাল দমন বাহিনী’র প্রধাণ। লোকটা ধূর্ত, ক্লান্তিহীন এবং প্রচন্ড নিষ্ঠুর। আসলে নিষ্ঠুর বললে কম বলা হয়। ইংরেজীতে ‘স্যাডিস্টিক’ বলে যে কথাটা আছে, রনদীপ সেটারই প্রতিভূ।

শুধুমাত্র দলের আদর্শ মাথায় তুলে নাচবে, এত ছেলেমানুষও নয় শচীন। আর এখন দলের আদর্শ আর নিজের পিঠ বাঁচানোর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে গত সপ্তাহের ঘটনা। শচীনের অভিন্যহৃদয় বন্ধু বিশ্বনাথ। শচীন নিজে যেতে পারেনি, ধরা পড়ার ভয়ে। পরেশ কাঁপতে কাঁপতে এসে যেটা বলেছিল, সেটা হজম করা শচীনের পক্ষেও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। বিশ্বনাথের লাশের পোস্ট মর্টেম হয়েছিল কিনা জানে না, কিন্তু হয়ে থাকলে সেটার রিপোর্ট-এ লেখা থাকত পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে মারার আগে ভিক্টিমের দু’হাতের প্রতিটা নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, পায়ের আঙুলের প্রতিটা গাঁটে পোঁতা হয়েছে পেরেক। পিঠের চামড়া অনেকটাই ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে…

সবটা বলতেই পারেনি পরেশ; হড় হড় করে বমি করে ফেলেছে…

রাতে আজকাল আর ঘুম হয়না শচীনের। এক আধবার চোখটা লেগে গেলে একটা বীভৎস মুখ দেখে ঘুম ভেঙে যায়। বিশুর মুখ। ছোটবেলার বন্ধুকে বাঁচাতে পারেনি বলেই কি… কিন্তু না… তাকে বাঁচানোর দায়িত্ব তো কখনো নেয়নি শচীন; শুধু তাকে কেন, দলের কারোর সুরক্ষার দায়িত্বই সে নেয়নি। সবাই জানে, কি কি বিপদ আসতে পারে, শাসকদলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে নামলে। শুধু বিশ্বনাথের মৃত্যু তাকে মনে করে দিয়েছে সেই বীভৎসার কথা, যেটা শুধু কথায় শুনে এসেছে এতদিন। বিশুর সাথে যা হয়েছে, সেটা তার সাথেও হতে পারে। দলের যে কোনো ছেলের সাথেই হতে পারে। আর হলে কারোরই কিছু করার থাকবে না। এসব নিয়েই ভাবছিল সে, এমন সময় পরিমল এগিয়ে এসে, পেছন থেকে ডাকে।

-“কি ভাবছ, শচীন দা ?”

-“কিছু না রে… চিন্তা হচ্ছে… সবার জন্য…”

-“চিন্তা করে কি হবে, কমরেড ? সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কি ভয়…”

হেসে ফেলে শচীন। পরিমল আর সমীর এই ডেরার কনিষ্ঠতম দুই সদস্য, তাই দু’জনের এই একটা ব্যাপারে বেজায় মিল।

-“বাকিরা সব কি করছে ? সমীর কই, ওকে তো দেখছি না ?”

এবার একটু আমতা আমতা করে পরিমল…

-“বাকি সবাই ঠিকই আছে, সমীর…”

ভুরু কুঁচকে যায় শচীনের।

-“সমীরের কি হল আবার ?”

-“না, কিছু হয়নি, ও বাড়ি গেছে…”

এবার আকাশ থেকে পড়ার উপক্রম হল শচীনের।

-“বাড়ি গেছে মানে ? ও জানে না, ওর বাড়িতে পুলিশ নজর রাখছে ? কে যেতে দিল ওকে ? কেন গেল ?”

-“আসলে দাদা, ওর বাড়ীর কাজের লোকের সাথে নাকি বাজারে দেখা হয়েছিল, সে বলল, ওর মায়ের খুব শরীর খারাপ, তুমি ছিলে না তখন, ও বাড়ি এসে আমাকে বলতে… আমি বারণ করেছিলাম, শুনল না। মা এর ব্যাপার, তাই আমি আর বেশী কিছু বলতে পারিনি…”

-“তুই কি পাগল ? তুই জানিস, বাড়ির কাজের লোকগুলোকে হাত করা কত সহজ ? আর এভাবে পুলিস গোটা শহরে কত খোচড় ছড়িয়ে রেখেছে ?”

পরিমল চুপ করে থাকে। তার দুটো কাঁধ চেপে ধরে জোরে একটা ঝাঁকানি দিয়ে বেশ কড়া সুরে বলে ওঠে শচীন।

-“বিশুর কথা ভুলে গেলি ? ভুলে গেলি ? যদি গুহ নিয়োগীর হাতে পড়ে, তাহলে সেই থার্ড ডিগ্রী সহ্য করার ক্ষমতা ওর আছে বলে তোর মনে হয় ? আমাদের আর লুকোবার জায়গা নেই, জানিস তো সেটা ?”

পরিমল মুখ খোলে,

-“না, না, দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার মত ছেলে সমীর নয়…”

শচীন বিরক্ত মুখে মৃদু ধাক্কা দিয়ে পরিমলের কাঁধ ছেড়ে দেয়, তারপর প্রায় চিৎকার করে ওঠে।

-“ওই কশাইটা যখন হাতের নখ ওপরাবে আর পিঠের ছাল ছাড়িয়ে নেবে, তখন কোথায় দল থাকে, আমিও দেখব… সবাইকে ডাক, খবর জোগাড় করতে হবে।”    

সবাইকে ডাকার পর, পরিমল একটু অপরাধী অপরাধী মুখ করে বলে উঠল,

-“আমি কি একবার ওর বাড়ি গিয়ে দেখব ?”

সে কথার উত্তরে শচীন বলে ওঠে

-“ওর মত মরার ইচ্ছে আর কার কার হয়েছে এখনি বলে ফেল…”

কেউ তার উত্তরে মুখ খোলে না। শচীন আবার বলতে শুরু করে…

-“আর আধঘন্টার মধ্যে সমীর না ফিরলে, সবাই একসাথে বেরোবো… পরেশ, তুই ডেরার আশেপাশেই ঘোরাফেরা করবি, নজর রাখবি, আমরা কাল সকালে ঠিক সাতটার সময় ফিরব মাঠের পাশের বটগাছের নিচে। যদি ডেরায় পুলিস তার আগে এসে থাকে, তাহলে তুই গাছের গায়ে একটা সাদা রঙের ঢ্যাড়া দিয়ে রাখবি।“

এই বলে পরেশের দিকে একটা সাদা বড় চকের মত জিনিস ছুঁড়ে দিল শচীন।

-“কিন্তু শচীনদা, সারারাত আমরা কোথায় থাকব ? মানে কোথায় গা ঢাকা দেব ?”

দু’এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে আবার মুখ খোলে শচীন;

-“যে যার নিজের দায়িত্বে। এ ডেরাটা কম্প্রোমাইজড হলে, একসাথে পালাবার কোনো জায়গাই থাকবে না আর। আজ রাতে যদি এ ডেরার হদিস কেউ না পায়, তাহলে কাল একজোট হয়ে চিন্তা করা যাবে, কিন্তু আজ রাত, নিজের প্রাণ নিজে বাঁচাও।”

কথাটা শেষ হলে ঘরের মধ্যে একটা বিষণ্ণ স্তব্ধতার ছায়া নেমে আসে। সবাই এর ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, তারপর জিনিসপত্র গুছোনোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

ছবিস্বত্ব – SVF

চার – চোখের ভুল ?

-“সিরিয়াসলি তন্দ্রা ? আমি কাল সকালে বেসিনটা পরিস্কার করলাম, তুই এর মধ্যেই আবার এখানে আবার একগাদা চুল ফেলেছিস ?”

বেশ রেগেই বলে ওঠে অন্বয়। গত চারদিনে এটা তৃতীয়বার। সিঙ্ক এ একতাল দলা পাকানো কালো চুল, চটচটে কিছু একটা লেগে আছে তাতে। তন্দ্রার রোজ চুলে তেল না দিলে হয় না, আর তাই চটচটে ব্যাপারটা যে তন্দ্রার স্পেশ্যাল হার্বাল তেলের, সেটা অনুমান করে অন্বয়। তার কথা শুনে তন্দ্রা বাথরুম-এ ঢুকে সিঙ্কের চুলের গোছার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে, বেশ রাগত স্বরে বলে ওঠে তন্দ্রা;

-“আকাঠের মত কথা বলছিস কেন ? আমার মাথার চুলগুলো কি অতটা ছোট ? পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে কোনো ছেলের চুল…”

-“হ্যাঁ, নিশ্চয় প্রবাল মাথায় তেল মেখে এখানে চুল ফেলে গেছে।”

তন্দ্রা কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। অন্বয় আক্ষেপের সাথে মাথা নাড়তে নাড়তে চুলের গোছাটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাত ধোবার জন্য সাবানের দিকে হাত বাড়ায়। আর তখনই প্রথম ব্যাপারটা লক্ষ্য করে। চুলের মধ্যে লেগে থাকা চটচটে পদার্থটার রঙ, লাল… এর আগের দু’বার ব্যাপারটা খেয়াল করে দেখেনি, কিন্তু এবার ভালো করে হাতটার দিকে দেখে কি মনে হতে একবার হাতটা নাকের কাছে নিয়ে এসে শোঁকে।  গন্ধটা খুব চেনা, তবে তেলের নয়; তন্দ্রার মাথার তেলের গন্ধ সে চেনে, আর সেটা মোটেই লাল রঙের নয়। গন্ধটা রক্তের। অন্তত তাই মনে হল তার। এক মূহুর্ত থমকে তারপর নিজেকেই ধমক দেয় মনে মনে; কি সব আবোল-তাবোল ভাবছে ? আর না ভেবে সাবান দিয়ে হাতটা ধুয়ে ফেলে অন্বয়। ডেটলের কড়া গন্ধ নিমেষেই ঢেকে দেয় নাকে লেগে থাকা অস্বস্তিকর গন্ধটাকে।

নতুন বাসস্থানে শিফট করার পর থেকে, একদিনও একসাথে আড্ডা জমানোর সময় পায়নি চারজনে, প্রবালের অফিসের চাপ বেড়েছিল মারাত্মক, সে একদিন তো বাড়িই ফেরেনি এত দেরী হয়েছিল। অজেয়ার কাজ কল সেন্টারে, তার কপালেও পর পর নাইট শিফট জুটেছিল।  অফিস থেকে ফিরে দুটো চাল-ডাল ফুটিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে অন্বয়-তন্দ্রা। তাই শেষমেষ আজ তাদের বহুপ্রতিক্ষীত ‘হাউসওয়ার্মিং পার্টি’। প্রবাল জমজম থেকে প্রসিদ্ধ বিফ বিরিয়ানী নিয়ে এসেছে, অফিসের কাজে সল্টলেক গেছিল বলে অন্বয় করিমস-এর গালাওঠি কাবাব। আরো বিবিধ খাদ্যদ্রব্যের সমাহার আজকের নৈশাহারে।

কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলতে অজেয়া ঢুকে আসে, তার হাতে একটা রেড ওয়াইনের বোতল।

-“সরি সরি সরি, ভেরী সরি… কাউন্টার থেকে এটা তুলতে লেট হয়ে গেল।”

প্রবাল টেবল সাজাচ্ছিল, অজেয়া টেবলে বোতলটা বসিয়ে একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে।

-“আপাতত এক মাসের জন্য কোনো নাইট ডিউটি নেই, ওফফফ, রাতে না ঘুমোনোটা জাস্ট নিতে পারি না…”

তন্দ্রা তার কথায় সায় দেয় আর অন্বয় তন্দ্রিকার ঘুমের বহর নিয়ে রসিকতা করা শুরু করে, প্রবালও তার সাথে যোগ দেয়। তাদের কথার মাঝখানেই, মৃদু ক্যাঁচ শব্দে রান্নাঘরের দরজাটা খুলে যায়। চারজনেই চমকে সেইদিকে তাকায়। রান্নাঘরের ভেতরে জমাট বাঁধা অন্ধকার। একটিমাত্র জানলা দিয়ে আবছা আলো এসে পড়েছে ভেতরে। সেই আলোয় রান্নাঘরের বাসনপত্রের, গ্যাস স্টোভের একটা আবছায়া আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছিল। একটা ঘরের দরজা, সেটা আপনি আপনি খুলে যেতেই পারে, কিন্তু তারপরই ভেতর থেকে আসা ‘ঝণাৎ’ শব্দটা কাকতালীয় বলে মনে করতে অনেকেরই বাধে। অজেয়া সেই শব্দ শুনে মুখে একটা ‘আউচ’ শব্দ করে শিউড়ে উঠল। অন্বয় বিনা বাক্যব্যায়ে রান্নাঘরে আলো জ্বালিয়ে ঢুকে দেখল, মেঝেতে কিছু বাসনপত্র ছড়ানো। সেগুলো কুড়িয়ে রেখে বিরক্ত মুখে রান্নাঘরের আলো নিভিয়ে বেড়িয়ে বলল,

-“প্রবাল, এবার তোর নামের প্রথম অক্ষরটা কেটে দেব আমি। গাড়োল, বাসনগুলো ধুয়ে, অত ধারে কেউ রাখে ? সব পড়ল দুম দাম করে… আর মাইয়াগুলা ভাবসে ঘরে ভূত আইল বুজি…”

প্রবাল কিছু বলার আগেই তন্দ্রা রেগে মেগে বলল,

-“আমি মোটেও ভয় পাইনি… যত্তসব…”

-“ওই দেখো… আমি ভয় পাওয়ার কথা কখন বললাম ? আমি তো শুধু ভূত আসার কথা বললাম। ভয় পাওয়ার কথা তো তুই তুললি ?”

তন্দ্রিকা আবার রেগে মেগে কিছু বলতে যায়, কিন্তু প্রবাল তাদের থামিয়ে দিয়ে বলে…

-“ওকে ওকে ওকে ওকে… নো মোর চুদুরবুদুর… লেটস ইট।”

সবাই গুছিয়ে খেতে বসে, খাওয়া এবং আড্ডা চলতে থাকে। অফিস, সিনেমা, রাজনীতি সব নিয়ে কথা চলতে চলতে, হঠাৎই প্রবাল বলে ওঠে,

-“ভাই, আমি কিন্তু বাসনগুলো অতধারেও রাখিনি যে সব দুমদাম করে পড়ে যাবে।“

-“তাহলে বেড়াল-ফেরাল ঢুকেছিল হয়তো… মানে ‘ফেরাল বেড়াল’…”

-“পাঁচতলায় বেড়াল ?”

-“আরে বাবা বেড়াল তো, কুকুর তো নয়, ওদের সর্বত্র গতি।”

অন্বয় এ কথার কোনো উত্তর দেয় না, চুপচাপ ওয়াইনে একটা ছোট্ট চুমুক লাগায়। টেবলে তখনো একটা আস্ত বিরিয়ানীর প্যাকেট উন্মুক্ত এবং অভূক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। হঠাৎ প্রবাল সেটা দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে, আর বাঁহাতের দুটো আঙুল বিরিয়ানীর দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ভাতের মাঝখান থেকে বের করে আনে একগোছা চুল।

Photo by lalesh aldarwish on Pexels.com

সেটা দেখে অন্বয় প্রায় স্প্রিংয়ের পুতুলের মতো লাফিয়ে ওঠে। ভিজে চুলের গোছা থেকে টপটপ করে যে লাল তরলটা ঝড়ে পড়ছে, সেটা কি ? রক্ত ?

অজেয়া আর তন্দ্রিকা প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে… অজেয়া একবার ওয়াকও করে। প্রবাল দ্রুত ঝেড়ে ফেলে হাতটা, আর বাথরুমে দৌড়োয়, হাতটা ধুয়ে ফেলতে। অন্বয় কোনরকমে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে তন্দ্রা আর অজেয়াকে। অজেয়া চোখ বড় বড় করে বার বার একই কথা বলতে থাকে;

-“বাকি বিরিয়ানীতেও কি ছিল ? মানে আমাদের পেটে…”

তাকে একটু ধমক দিয়ে বলে অন্বয়,

-“কি আবোল তাবোল বকছিস ? না বুঝে চুল খেয়ে ফেলবি ?”

-“তুই প্লিজ আর মনে করাস না…” তন্দ্রা প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ওঠে।

-“আচ্ছা, আচ্ছা, চিল… চাপ নিস না… আমি ফেলে দিচ্ছি এটা…”

বিরিয়ানীর প্যাকেটটা হাতে করে ফেলতে গিয়ে অন্বয়ের মনে হল, ‘আবার চুল ?’ কিন্তু বিরিয়ানীতে চুল কোথা থেকে এল ? প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার পরই সে শুনতে পেল, বাথরুম থেকে খুব বিচ্ছিরি ভাবে কাশছে প্রবাল। ওরও বোধহয় ঘেন্নায় গা গুলোচ্ছে। তাড়াতাড়ি সে ছুটে বাথরুমে যায়, আর বেসিনে মুখ নামিয়ে যক্ষা রোগীর মত কাশতে থাকা প্রবালকে পিঠে হাত দিয়ে চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,

-“আরে ইয়ার… ডোন্ট প্যানিক… কিচ্ছু যায়নি পেটে।”

কাশতে কাশতে থুঃ করে এবার মুখ তোলে প্রবাল। কেশে কেশে চোখদুটো লাল, চোখে জল, আর সারা মুখে আতঙ্কের চিহ্ন।

-“রিল্যাক্স, চোখে মুখে জল দে…” প্রবাল কথা উত্তর না দিয়ে শুধু আঙুল দিয়ে বেসিনের দিকে নির্দেশ করে। অন্বয় মুখ বাড়িয়ে বেসিনের দিকে দেখে। বেসিনে পড়ে রয়েছে একদলা রক্ত। আর সেই রক্তে মাখামাখি অবস্থায় দুটো লোহার পেরেক।

একটা প্রশ্ন রইল… যদি কোনোদিন কাশির সাথে দুটো পেরেক বেড়িয়ে আসে, ঠিক তার পরের কাজটা কি করবেন ?

Advertisement

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.