আজ হঠাৎই, মনে হল অনেকদিন আগে লেখা একটা গল্প, শোনাই। গল্পটি আমার মৌলিক লেখা নয়, মূল গল্পটি কার, সেটা জানতে গেলে শেষ অবধি পড়তে হবে। এ জন্মে এই গল্প অন্য কোথাও ছাপানোর আশা করি না; তাই এখানেই দিলাম। কমেন্টে জানাবেন, আপনাদের মতামত।
ছেলেটাকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিল মন্মথ। বছরতিনেক বয়স হবে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক চাইছে, কাউকে খোঁজার ভঙ্গিতে। দু-চার পা এদিক ওদিক হেঁটে আশেপাশে দেখার চেষ্টা করল। লোক চারধারে প্রচুর। কিন্তু যাকে খুঁজছে তাকে যে পেল না, সেটা মুখের ভঙ্গি দেখেই বোঝা যায়। এবার ছেলেটা দাঁড়িয়ে পড়েছে। চুপ করে। মুখটা নীচু। বোঝা যাচ্ছে, ফোঁপাচ্ছে। এক্ষুণি কেঁদে ফেলবে হয়তো। এবার এদিক ওদিক ভালো করে দেখে নেয় মন্মথ। হতচ্ছাড়া সিকিওরিটি গার্ডগুলোর কেউ আশেপাশে টহল দিচ্ছে না তো? চারদিক দেখে শুনে, আস্তে আস্তে ছেলেটার দিকে এগোয় মন্মথ।
প্রথম যেদিন একটা বাচ্চাকে এনে বিটুবাবুর সামনে হাজির করেছিল মন্মথ, সেদিন নিজেকে বড় অপরাধী বলে মনে হয়েছিল। হাজার হোক একটা বাপ-মায়ের কোল খালি করে দিল তো? এটা চলেছিল অনেকদিন। অনেক পরে সে বুঝেছে সত্যিটা কি। বা নিজের মনকে সেরকম-ই বুঝিয়েছে। একটা ছেলেমেয়ের মূল্য, তার বাপ-মায়ের কাছে অনেক। তা বাপু সে ছেলেকে সাবধানে রাখতে পারো নে কেন? ছেলেধরাকে সুযোগটা দাও কেন? তাই আজকাল মনে সে অপরাধ বোধটা আর কাজ করে না। একটা ছেলেকে বিটুবাবুর কাছে দেওয়া মানে আজ কারোর কোল খালি হওয়া নয়, তার মানে তার পকেটে আসছে কড়কড়ে দশটি হাজার টাকা। বিটুবাবুও খুশি! মন্মথ যদি দশহাজার পায়, তাহলে বিটুবাবুর পকেটে দশ লাখ আসাও আশ্চর্য কিছু না।
-“কি খোকা? কাকে খুঁজছ?”
কোমরে দুটো হাত দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে ছেলেটাকে প্রশ্নটা করে মন্মথ। ছেলেটা একটু চমকে উঠে তার মুখের তাকায়। চোখ থেকে দুটো জলের সরু ধারা নেমে এসেছে গালে। এখনো সমানে ফুঁপিয়ে চলেছে।
-“বাপি! আমার বাপি কোথায় গেল?”
-“বাপি কোথায় ছেড়ে গেল তোমায়? বাথরুমে?”
-“হ্যাঁ। আমার তেষ্টা পেয়েছিল। বাপি আমাকে বলল এখুনি আসবে, বলে ওইদিকে চলে গেল।”
এই বলে ছেলেটা আঙ্গুল দিয়ে মলের একটা জনবহুল অংশের দিকে দেখিয়ে দিল।
-“ও! তোমার বাপি কি পড়েছিল গো? কালো…”
কথাটা পুরো শেষও করতে পারে না মন্মথ। ছেলেটা উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে,
-“তুমি বাপিকে দেখেছ? কোথায় আছে বাপি?”
মন্মথ দেখল, সোনায় সোহাগা! সে বলল,
-“হ্যাঁ, দেখেছি তো! তোমার বাপি তো ওইদিকের দরজা দিয়ে বাইরে গেল দেখলাম। তুমি যাবে, বাপির কাছে?”
-“হ্যাঁঅ্যাঅ্যা! তুমি নিয়ে যাবে আমায়?”
দ্রুত এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নেয় মন্মথ। নাহ! কোনও সিকিওরিটি গার্ড-এর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। তাই মুচকি হেসে সে মৃদু গলায় বলে ওঠে,
-“এস! চল তোমায় বাপির কাছে নিয়ে যাই।”
ছেলেটা অম্লান বদনে মন্মথর হাত ধরে তার সাথে হাঁটা লাগায়। দরজার দিকে। এই দরজার বাইরেই পার্কিং লট, আর তার বাইরে একটা যত সম্ভব অন্ধকার কোণে রাখা আছে মন্মথর গাড়ি। অভ্যাস! তাই অন্ধকার কোন না পেলে গাড়ি রাখতে পারে না মন্মথ।
কথায় বলে না, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’; মন্মথর হয়েছে সেই দশা। শেষ মাসে বিটুবাবু পকেট টাকায় টাকায় ভর্তি করে দিয়েছিল মন্মথ। তারই ফলস্বরূপ বিটুবাবু কিছু ‘বোনাস’ দিয়েছিল মন্মথকে। সেই টাকাটার সদগতি করতে বা বলে উচিত স্রেফ ওড়াতে সাউথ সিটি এসেছিল মন্মথ। আর সেখানেও একলা বাচ্চা। এ সুযোগ কেউ ছাড়ে?
-“কৈ? বাপি কৈ?”
মন্মথ এবার একটু অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
-“হ্যাঁ, তাইতো! এদিকেই তো আসতে দেখলাম! আবার গেল কোথায়!”
এদিক ওদিক দেখে সে বলে,
-“আচ্ছা, একটা কাজ করি, আমার গাড়িটায় ওঠো, তারপর দুজনে চারধারে একবার চক্কর দিয়ে দেখি, বাপি কোথায় গেল।”
ছেলেটা একমুহুর্ত কি যেন ভাবে। তারপর বলে, আচ্ছা, চল।
মন্মথ ছেলেটাকে নিজের গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। কালো রঙের মারুতি ভ্যান। বিটুবাবু কিনে দিয়েছেন গতবছর। আগে তাঁরই একটা অ্যাম্বাস্যাডর চালাতো মন্মথ। পিছনের দরজাটা টেনে খোলে মন্মথ। ছেলেটা উঠে পড়ে। ব্যাস! এবার তুমি আমার জিম্মায়, খোকা! গাড়ির ড্রাইভারের সীটে উঠে ড্যাসবোর্ডটা খুলে, তার বহু পরিচিত হাতকড়াটা বের করে পেছন দিকে মুখ ঘুরিয়ে মন্মথ বলে,
-“তোমার মাথার কাছে আলোর সুইচটা আছে। একটু জ্বালিয়ে দেবে, খোকা?”
ছেলেটা হাত তুলতেই, সীটের ওপর দিকের একটা লোহার মজবুত রডের সাথে ছেলেটার হাত অভ্যস্ত হাতে হাতকড়া দিয়ে লাগিয়ে দিল মন্মথ। বাপরে বাপ! কি চিল চিৎকার করল ছেলেটা! এটা পার্কিং লটের ভেতর হলে এক্ষুনি হাজারটা লোক ছুটে আসতো। মন্মথ হাতটা আবার ফেরত আনার সময় ছেলেটা জোরে কামড়ে দিল মন্মথর হাতে। কি তার দাঁতের জোর! যন্ত্রনায় আঃ বলে এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিল মন্মথ। বাইরের আবছা আলোয় দেখতে পেল হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে কোনরকমে হাতে বেঁধে, গাড়িতে স্টার্ট দিল মন্মথ। ওদিকে ছেলেটা হাতকড়াটা খোলার বৃথা চেষ্টা করছে, ঝড়াং ঝড়াং শব্দে সেটা ধরে টানাটানি করে। কোনও কথা না বলে আগে ঠান্ডা মাথায় গাড়িটাকে বের করল বড় রাস্তায়, সাউথ সিটির গ্যাঞ্জাম থেকে দূরে। সোজা বিটুবাবুর গুদামে যাবে। তারপর নিজের হাতের দিকে মন দিতে হবে। বড় যন্ত্রনা হচ্ছে। ওদিকে কানের কাছে একটানা শব্দ হয়েই চলেছে। এবার পেছনে ঘোরে মন্মথ। কড়া চোখে তাকিয়ে বলে,
-“অ্যাই ছোকরা! এ শব্দ বন্ধ করবি?”
ছেলেটা কান্নাভরা, রাগমেশানো এক অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-“না, করব না! কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমায়? বাপি তোমায় মারবে কিন্তু। বাপির গায়ে খুব জোর।”
মন্মথ এ কথার কোনও উত্তর দেয় না। শব্দও থামে না। সে এবার ড্যাসবোর্ডটা খুলে বহু পুরোনো হাইপোডার্মিক সিরিঞ্জটা বের করল। বেশ কিছু বেয়াড়া বাচ্চাকে এটা দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়েছে। তবে বেশিরভাগ সময় এটা দেখালেই কাজ হয়। সেটাকে এগিয়ে ধরে মন্মথ বলল,
-“অ্যাই! এটা দেখেছিস তো? ফুটিয়ে দেব, ভালো হবে? তাহলে চুপ করে বোস।”
ছেলেটা এবার সত্যিই ভয় পেল। হাতকড়া ধরে টানাটানি বন্ধ করে দিল। কিন্তু মুখটা আবার সামনে ঘোরানোর আগে একটা জিনিস দেখে বেশ চমকে উঠল মন্মথ। লোহার যে রডে হাতকড়া দিয়ে আটকানো আছে ছেলেটার হাতটা, সেটা একটু বেঁকে গেছে। কি করে হয়ে সেটা? একটা বাচ্চা ছেলে যতই টানাটানি করুক, অত মোটা সলিড লোহার রড কি করে বেঁকে যেতে পারে? আর তাছাড়া, এ গাড়িতে অনেক বাচ্চাকে ওইভাবে নিয়ে গেছে মন্মথ। যে যা খুশি করুক না কেন, রড তো আজ অবধি বেঁকাতে পারেনি! তাহলে? একটু চিন্তিত হয় মন্মথ। এ ছেলের গায়ে অত জোর কি করে আসে? তারপরই ব্যাপারটা বুঝে নিজের মনেই হেসে ওঠে মন্মথ। সেই যে একদিন, ডিসকভারি চ্যানেলে দেখিয়েছিল, কি যেন বলে? এড্রিনালিন রাস না কি যেন একটা? ভয় পেলে লোকজনের শক্তি বেড়ে যায়। সেই হয়েছে। ছেলেটা বড় বেশী ভয় পেয়েছে আসলে। এভাবে মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, পরক্ষণেই মনে হয়, ঢের ঢের ছেলে দেখেছে সে, কেউ কেউ ভয় পেয়ে অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে গেছে, কিন্তু আজ অবধি কাউকে রড বেঁকাতে দেখেনি সে। ব্যাপারটা মনে কেমন খচ্ খচ্ করতে থাকে তার। কিন্তু সেসব ভাবনা আপাতত ধামাচাপা দিয়ে আবার গাড়ি চালানোয় মন দেয়। বিটুবাবুর গুদামে পৌঁছতে আরও ঘন্টা খানেক। বাঁহাত দিয়ে চেপে স্টেয়ারিংটাও ধরা যাচ্ছে না। আর গীয়ার বদলাতে তো রীতিমত কষ্ট হচ্ছে।
-“বাপি কিন্তু আমার গায়ের গন্ধ পায়।”
মন্মথর বেশ হাসি পেয়ে গেল। গায়ের গন্ধ! তাও আবার তিন মাইল দূর থেকে? মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে পেছনে না তাকিয়েই মন্মথ বলল,
-“বটে? তোর গায়ের গন্ধ পায়?”
ছেলেটা তার কোনও উত্তর দিল না। মন্মথও আবার গাড়ি চালানোয় মন দিল। হঠাৎ একবার গীয়ার দিতে গিয়ে হাতে বাঁধা রুমালটা খুলে গাড়ির পাদানিতে পরে গেল। মুখে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করে সেটা তুলতে যাবে এমন সময় হাতের ক্ষতটার দিকে চোখ পড়ল তার। পাশাপাশি দু’টো গভীর ফুটো। সে দুটোর মধ্যে দূরত্ব মোটামুটি ছেলেটার চোয়ালের দৈর্ঘ্যের। ছেলেটার কি আর দাঁত নেই নাকি? নাকি ধারের ওই দাঁতদু’টো, ওই যে, ইংরেজীতে ক্যানাইন না কি যেন একটা বলে, সে দুটো কি বড়? রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে সেটা দেখার চেষ্টা করে মন্মথ। সত্যিই তাই বলে মনে হয়। ছেলেটার ঠোঁটের দুধার থেকে উঁকি মারতে চাইছে দু’টো দাঁত। মন্মথ-এর মাথা গুলিয়ে যায়। এরকম জিনিস সে ইংরেজী বইতে ছাড়া দেখেনি কোনদিন। একটু ভয়ও পেয়ে যায়, একটু রাগও হয় তার।
-“বাপি কিন্তু উড়তে পারে।”
এবার মেজাজটা বেদম খিঁচড়ে যায় মন্মথর। তখন থেকে বাপি বাপি… ওফফফফ এবার ধমক দিয়ে বলে,
-“অ্যাই! তোর চিল্লামিল্লি থামাবি এবার? নাহলে ধরে ঠেঙ্গাবো।”
ছেলেটা আবার চুপ করে যায়। কিন্তু মন্মথর মনটা বড় অশান্ত হয়ে পড়ে। লোহার রড বেঁকে গেল! মুখের দুধারের দু’টো দাঁত বড়। এ কাকে তুলেছে সে তার গাড়িতে? এসব ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে উঠল সে। ফাঁকা রাস্তা, গাড়ি ছুটছে বেশ জোরে। হঠাৎ প্রচন্ড জোরে দড়াম করে একটা শব্দ হয় গাড়ির ছাদের ওপর। আর সমস্ত গাড়িটা কেঁপে ওঠে তাতে। মন্মথর মনে হয় কিছু ভারী জিনিস বোধহয় তার গাড়ির ছাদে পড়েছে। এমন সময় ছেলেটা দু’হাতে হাততালি দিতে দিতে আনন্দে চেঁচিয়ে ওঠে,

-“বাপি এসে গেছে! বাপি এসে গেছে!”
মন্মথ কি করবে ভাবার আগেই, দেখতে পায় একটা বিরাট বড় কালো রঙের ডানার মত জিনিস তার গাড়ির সামনের কাঁচটাকে প্রায় পুরোটাই ঢেকে ফেলেছে। বাধ্য হয়ে জোরে ব্রেক কশে মন্মথ। গাড়িটা পুরোপুরি থামার একটু আগে, তার ডানপাশের জানলার কাঁচ ভেঙ্গে একটা মজবুত হাত ভেতরে ঢুকে আসে। সেটা তার কলারটা চেপে ধরে। তারপর অমানুষিক শক্তিতে তার ডানদিকের দরজাটাকে ভেঙ্গে দরজা সমেত মন্মথকে রাস্তার উল্টোদিকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। রাস্তায় জোরে আছড়ে পড়া মন্মথ। দরজা আর রাস্তার সঙ্গে ধাক্কা লেগে সে সাংঘাতিক ভাবে জখম হয়। কোনরকমে উঠে বসতে চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না, কোমরের নীচ থেকে কোনও সাড় নেই দেহে। একটা চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে না, বোধহয় ভাঙা কাঁচ ঢুকে গেছে। ডানহাতটা ভেঙ্গে হাড় বেরিয়ে আছে। সারা গা, হাত, পা, রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার। সেই অবস্থায়ই সে দেখতে পেল, ‘বাপিকে’। একটা কালো, লম্বা ঝুলের কোট পড়া লোক, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির থেকে বাচ্চাটাকে নামাল। ছেলেটার হাতে হাতকড়া আর নেই। কি বাপি এবার মন্মথর দিকে ফেরে। লম্বা ঝুলের কালো কোট পড়া। চোখদু’টো টকটকে লাল। আর মুখের দুধার দিয়ে বেরিয়ে আছে দুটো বড় বড় দাঁত। যন্ত্রনায় শরীর ভেঙ্গে যাচ্ছে, তবু, কোলকাতায় এসে প্রথম দিকে দেখা একটা ইংরেজী বই-এর কথা মনে পড়ে যায় মন্মথর। ড্রাকুলা। মানুষরূপী রক্তচোষা। ভ্যাম্পায়ার!
-“বাপি দেখো, এই লোকটা আমাকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল।”
বেশ রাগী রাগী মুখে মন্মথর দিকে তাকিয়ে একটা আঙ্গুল দেখাচ্ছিল ছেলেটা। বাপি এগিয়ে এসে অবলীলাক্রমে একটিমাত্র হাতে মন্মথর গলা চেপে ধরে তাকে বেড়ালছানার মত শূন্যে তুলে ফেলল। তারপর তার চোখে চোখ রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
-“ছেলেটা একটা খেলনা চেয়েছিল, তাই নিয়ে এসেছিলাম মলে। সহ্য হল না সেটা? কেন আর লোক পেলি না?”
মন্মথর জবাব দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই। কোমরের নীচে শরীরের কোনও অংশ আছে বলে মন হচ্ছে না। ডানহাতটা ভেঙ্গে ঝুলছে, আর ধারালো পাঁচটা নখ তার গলায় ছুরির মত কেটে বসেছে। তার মুখ দিয়ে গোঙানিটাও বেরোচ্ছে না ঠিক মত। আবার মন্মথকে মাটিতে আছড়ে ফেলে বাপি। শরীরের ব্যাথা সহ্য করার কোনও ক্ষমতাই আর নেই। মন্মথ দেখতে পায়, ছেলেটা এগিয়ে এসে তার মাথার কাছে বসল।
জ্ঞান আর প্রাণ হারাবার আগে সে শুনতে পেল বাপি তার ছেলেকে বলছে,
-“কি রে? তোর তেষ্টা পেয়েছে তো?”
..
..
..
..
..
স্টীফেন কিং-এর ‘পপসি’ গল্প অবলম্বনে রচিত