ভূত মানে ‘অপদেবতা ‘ আছে না নেই, সেই বিষয়ে আমার মতামত অনেকটাই মহেশ মিত্তিরের মতো, অর্থাৎ ইশ্বর = ০, আত্মা = ভূত = √০। কিন্ত, আমি মনে করি মহেশ মিত্তিরের সাথে আমার যদি একটাই তফাত থেকে থাকে, সেটা হল আমি মুক্ত মনের (মানে Open Minded) মানে আমি অন্তত সেটাই বিশ্বাস করে থাকি। এবার ভূত বা ভগবানের পাল্লায় পড়ার সৌভাগ্য (বা দূর্ভাগ্য) আমার হয়নি। তবে লোকে জানে, আমি ভূতের গল্পের পোকা, এবং অনেকে দাবী করেন ‘ভূত ভূত’ করতে করতে অচিরেই আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে, বা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে।
এখন চারপাশে এরকম অনেক লোকই দেখতে পাবেন, যাঁরা হলফ করে বলতে পারেন তাঁরা অশরীরীর পাল্লায় পড়েছেন। এবার এখানে দুটো জিনিস সবার আগে মনে করতে হবে। এক হল চোখের ভুল, আর দুই হল গল্প বলার সময় আর্টের খাতিরে রঙ মেশানো। যেটা স্বয়ং তারিণী বাঁড়ুজ্জ্যেও করে এসেছেন। তা এই দু’টো জিনিসকে হিসেবের মধ্যে ধরলে হয়তো অনেক ভূতুড়ে ঘটনার অত্যন্ত সহজ সরল ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
কিন্তু এখানে মনে রাখার মত জিনিস হল আগের বাক্যের মধ্যের ওই এক বিঘত লম্বা ‘হয়তো’। এই হয়তো কথাটা বড্ড ছলনাময়ী। হয়তো কালক্রমে হ্যাঁ, না, নিশ্চিত, সবরকমই হতে পারে। তাই ওই হয়তো কথাটা নিয়ে দুনিয়ায় অনেক অনেক তর্ক। ওই হয়তো কথাটার জন্যই এত ভূতের গল্প, এত ভূতের সিনেমা। বাজি ধরে শ্মশানে আর কবরস্থানে রাত কাটানো।
তা ব্যাপার হল, এইরকম অতিপ্রাকৃত ঘটনা আমার পরিচিত অনেকের জীবনেই ঘটেছে আর তাই নিয়েই এই সিরিজ। তবে এটা প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে চলবে না। কারণ এরকম ঘটনা তো আর অফুরন্ত নয়; তবে যাদের থেকে শুনেছি, তাদের নাম গোপন রেখে, মাঝে মাঝে একটা দু’টো ‘অপ’-ঘটনার বিবরণ পেয়ে যাবেন এখানে।

রাতটা ছিল সব-এ-বরাত এর। তা এই সব-এ-বরাত ব্যাপারটা হল অনেকটা হিন্দুদের তর্পণের মত। মানেই ওই দিন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যের উপঢৌকণ নিবেদন করে থাকেন, তাঁদের কবরে গিয়ে। তা সেদিন একটু অ্যাডভেঞ্চারের নেশাতেই বশিরের সাথে গিয়েছিল সুমিত। দু’টো বাইক, একটায় সুমিত আর দেবব্রত অন্যটায় বশির আর ওর ভাই।
দু’ধারে কবরস্থান আর মাঝখান দিয়ে সরু চলাচলের রাস্তা। সেখান দিয়েই আগে বাইক নিয়ে যাচ্ছিল দেবব্রত, সুমিত ওর পিছনে। কিছুদুর চলতে চলতে, হঠাৎ একটু নড়ে চড়ে বসে একটু বিরক্ত হয়ে সুমিতকে ধমক দেয় দেবব্রত;
-“অ্যাই সুমিত ! এভাবে পা ধরে টানছিস কেন ?”
সুমিত বেশ অবাক হয়েই উত্তর দেয়,
-“আমি মরতে তোর পেছনে বসে পা ধরে টানবো কি ভাবে ?”
-“তাহলে কে টানছে ? আজব ব্যাপার তো ?
দেবব্রত আর সুমিতের তর্কাতর্কি আর বাইকের টলমল গতি দেখে পেছন থেকে বাইক ছুটিয়ে, তাদের ওভারটেক করে আসে বশির।
-“কি হয়েছে ?”
-“দেব বলছে, ওর পা ধরে কে টানছে…” -উত্তর দেয় সুমিত।
কথাটা শুনে বশিরের মুখের চেহারাটা একটু বদলে যায় যেন। সে বলে ওঠে;
-“সোজা বাইক টান, কোথাও দাঁড়াবি না, বড় রাস্তায় ওঠার আগে।”
তারপর রাতের অন্ধকারে গর্জে ওঠে দু’টো বাইক। বড়রাস্তায় উঠে গাড়ি থামায় দু’জনেই। দেবব্রত থেমে প্যান্ট গুটোতে গুটোতে বলে
-“পা টা জ্বলছে ভাই…”
মোজাটা নামাতে দেখা গেল, পায়ের গোঁড়ালির একটু ওপর দিকে পড়েছে চারটে আঁচড়ের দাগ। দেবব্রত, সুমিত, দু’জনেই হতভম্ব। সেটা দেখে শুধু বশির বলে,
-“বাড়ি গিয়ে ডেটল লাগিয়ে নিস ভাই… লেটস নট টক অ্যাবাউট দিস টুনাইট…”
কি মনে হল ? স্রেফ গাঁজা ? নাকি সরু রাস্তায় কাঁটাগাছ লেগে ছড়ে গেছে সব ? হতেই পারে, আমারও তাই মনে হয়েছিল। কিন্তু সেই ক্লীশে লাইনটা আছে না, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু…” তাই আমার কাজ জানানো, আমি জানিয়ে দিলাম। আপনারা আসুন, জানান আপনার মতামত, আর যদি মনে হয় ঘটনাটা বড্ড ছোট হয়ে গেল, তাহলে চিন্তা করবেন না, লম্বা লম্বা ঘটনাও আছে, আমার কাছে।
শান্তির আশায়…
নীল…
পুনশ্চ : আপনার জীবনেও যদি
কোনও ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে জানান আমাকে, যদি ইচ্ছে হয়… নিচের লিংক ব্যবহার করে…
এই এই আমিও ভুত দেখবো।
LikeLike