সিজিদ্দার ‘গুমনামী’ ছবির স্পয়লার পাবেন এই পোস্ট-এ… আর কিছু বলব না…
সুভাষ চন্দ্র বসু কে নিয়ে আমাদের, মনে বাঙালিদের অনেক অনেক কৌতূহল| আর এই সুভাষ চন্দ্র এবং গুমনামী বাবা এক ব্যক্তি কিনা, এই নিয়ে এবার পুজোয় সিজিদ্দার নিবেদন| কারণ, পুজোর বাজারে সব চলে। আমি বিন্দুমাত্র আশা না নিয়ে (সিজিদ্দার ট্র্যাক রেকর্ডের জন্য) হলে গিয়েছিলুম।
কিন্তু আজ হলে গিয়ে বুঝলাম, সিজিদ্দা প্রচুর খেটে সিনেমাটা তৈরী করেছেন; মাইরি বলছি… তবে কারীগরি সহায়তায় টনি স্টার্ক এবং ব্রুশ ব্যানারের নাম না দেখে মনে বড় ব্যাথা পেলাম। সিজিদ্দার আনন্দযজ্ঞে এনারা গুমনাম হয়েই রয়ে গেলেন… কারণ এই ছবিতে টাইম ট্রাভেলের ব্যবহার ছবিটিকে অনবদ্য করেছে, এবং আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতেও টাইম ট্রাভেলের ব্যাপক ব্যবহার আমরা দেখতে পাব… কারন,
সিজিদ্দা হলেন পাইওনিয়ার…
২০০৫ সালে বেরিয়েছিল “নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস – দ্য ফরগটন হিরো” শ্যাম বেনেগল ছিলেন পরিচালক। যখন দেখতে পেলুম সেই সিনেমা আর গুমনামীর প্রথম দৃশ্য (এমনকি অনেক ডায়ালগ পর্যন্ত) হুবহু এক, তখন বুঝতে পারলুম, সিজিদ্দাই অতীতে গিয়ে শ্যামদাদুকে আইডিয়াটা দিয়ে এসেছিলেন।
যাক গে… গল্পের শুরুতে মানে ১৯৯৯ সালে যখন চন্দ্রচুড়রূপী অনির্বাণ দা নেতাজিতে অবসেসড হয়ে যাচ্ছেন, পড়ে পড়ে চোখের কোলে কালী, মুখে নোংরা দাড়ি, তা সেই সময় বিবাহবার্ষিকীতে বৌ তনুশ্রীর সাথে টাইম ট্রাভেল করে ২০১৩-এর পর “অউধ ১৫৯০” তে খেতে যাওয়ার প্ল্যান করেন, কিন্তু তনুশ্রীদি সেখানে পৌছে গেলেও দাদা পৌছোন না, ফলে বৌদি ফের ১৯৯৯-এ ফিরে এসে দাদার সাথে হেব্বি বাওয়াল দেন। দাম্পত্য কলহে টাইম ট্রাভেলের ব্যবহার ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এই প্রথম।
যাক গে, গল্প চলতে থাকে, বৌদি দাদাকে তালাক দিয়ে দেন। ওদিকে দাদার তখন মনে প্রাণে নেতাজী। তাই আমরা নেতাজীর গল্পও দেখতে থাকি, চলতে থাকে মুখার্জি কমিশনের শুনানি। শুনানির মাঝে (কত সাল জানি না, তবে ১৯৯৯ এর পরে আর ২০০৬-এর আগে) বৌদি দাদার সঙ্গে ভাব করবেন বলে আবার ২০১৪ সালে টাইম ট্রাভেল করে একখানা ওলা / উবের করে আবার অতীতে ফেরত এলেন দাদাকে পিক আপ করতে ঠিক সময়ে যখন দাদা মহাজাতি সদন থেকে বেরোচ্ছেন। আহা ! টাইম ট্রাভেলে কলহ, আবার টাইম ট্রাভেলেই সন্ধি ! সিজিদ্দা দেখালেন বটে…

আমি এতটা দেখেই মুগ্ধ ! কিন্তু তখনো দেখার বাকি ছিল। ছবির শেষে যখন অনির্বাণদা ঘর ঢুকে কাচের দরজা লাগিয়ে ঘরে আগুন লাগাচ্ছিলেন, বৌদির হেব্বি কান্নাকাটি, হঠাৎ করে হাতে চলে এল মোবাইল ফোন, যেন ডক্টর স্ট্রেঞ্জের হাতে টাইম স্টোন ! দিদি ফোন, কান্নাকাটি সব করলেন, কিন্তু এর মধ্যে ঘরে খুঁজে হাতুড়ি / শিল-নোড়া / শাবল, নিদেনপক্ষে একটা ডিলডোও খুঁজে পেলেন না যেটা দিয়ে কাচের দরজা ভাঙ্গা যায়। লোকজন দৌড়ে এসে ঠিক সময় মত হাতুড়ি কিন্তু পেয়ে গেল ! আহা ! হাতুড়ি তো নয়, যেন ইনফিনিটি গন্টলেট… সব মিলিয়ে জমে ক্ষীর…
তা মোটের ওপর বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ‘গুমনামী’ হল সেরকম একটা সিনেমা, যেটা এর আগে হয়নি, ভবিষ্যতে হবেই না, কারণ সিজিদ্দা আস্তে আস্তে যা খেল দেখাচ্ছেন, এর পর আরো উঁচু স্তরে উঠে যাবেন। ‘’ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ড’ ছবিতে অল্টারনেট রিয়ালিটির গল্পে টারানটিনো হিটলার কে মেরে ফেলেছিলেন। সিজিদ্দা বোঝালেন একটা ছবিতে টাইমলাইন আর ডিটেল কতটা গুরুত্বহীন। এবং প্রমাণ করে ছাড়লেন তিনি টারানটিনোর বাবা, আর স্করসেসী ওনার মামা…
যাকগে, সিজিদ্দা সাধুসঙ্গ করতে হেব্বি ভালো বাসছেন আজকাল। এক বছর ভাওয়াল, আর এক বছর গুমনামী, সামনের বছর না “ইউ আর মাই লাভ চার্জার” বানিয়ে বসেন… হলে আমি সিজিদ্দার ছবি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হরির লুট দেব…
জয় থ্যানোস ! দাদার আমি চরম ভক্ত…
বেশ ভালো লিখেছিস…
LikeLike