আস্তে আস্তে গ্রীপ ফিরে পাচ্ছি… কিন্তু সেটা কি ভাল ? ক’দিন আগে যে ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও মনোভাবটা ছিল, সেটা এখন অনেকটাই প্রশমিত। সেটা কি ভালো ? ডায়েরীতে কলম পিশে কি বদলাতে পারব আমি ? এভাবে দু’দিন অন্তর অন্তর মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাটা কি স্বাভাবিক ? নাকি ব্যাপারটা মানসিকতার না… ব্যাপারটা প্রায়রিটির…
যখন ঘটনাগুলো ঘটল, যখন দেখলাম স্বপ্নগুলো, তখন সবসময় ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবছিলাম, তাই ওরকম মনে হয়েছেল; কিন্তু এখন সেটা একটু প্রশমিত হয়ে যাওয়ার ফলে অতটা প্রভাবিত করছে না ব্যাপারগুলো… মানে একটা ভূতের সিনেমা দেখলে বা গল্প পড়লে, লোকে এক-দু রাত ঘুমাতে পারে না। সারাজীবন তো নয়। তাই এই ধরণের পরিবর্তন সত্যিই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝে মাঝেই যখন মনে হয়, আমার বাড়ির লোকগুলো রাস্তায় বেরোলে সুস্থ, অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরবে তো ?
সেদিন এই নিয়ে অপর্ণার সাথে বেশ কথা কাটাকাটি হয়ে গেল… আমি বার বার ফোন করে ওকে জিজ্ঞেস করি, বাড়ি ফিরলো কিনা, কলেজ পৌছোলো কিনা… এতবার এতকিছু জিজ্ঞাসা করায় ও বেশ বিরক্ত। আমি বোঝাতে পারছি না, ১০-১৫ মিনিট সময় এদিক ওদিক হলেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে…

এরপরে, খুব বিচ্ছিরি ভাবে, বেশ কয়েকটা পাতা ছেঁড়া… এর থেকে বিরক্তিকর কিছু হতে পারে না… গল্প হোক বা ডায়েরী, মাঝখানে এরকম ব্যাপার বরদাস্ত করা যায় না। যেখান থেকে আবার লেখা পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকে লেখাটার সাথে, আগের ঘটনা/লেখার কোনো সম্পর্ক নেই।
কি মনে হল, স্কুলের সমস্ত ছবিগুলো ফেসবুকের পোস্ট করে দিলাম। প্রচুর লোকজন নস্টালজিয়ার ছোঁয়ায় এসে হাজির হল; আর অনেকগুলো লাইকও পড়ে গেল। সেই সুত্রেই সৌগতর সাথে কথা হচ্ছিল। ও বলল
-“আস্তে আস্তে সবাই একতারা বা দোতারা হয়ে যাবে…”
হয়তো সত্যি, কিন্তু একতারা বা দোতারা হয়ে আমি বাঁচতে পারব না। সবাই মিলে, সবার সাথে মিলেই আমি বাঁচতে ভালোবাসি। হয়তো সেটা প্র্যাকটিক্যাল নয়, কিন্তু একা একা, আমি পারব না… একটু বেড়িয়ে এলে মন্দ হত না… একটু পাহাড়, একটু জঙ্গল… মনটা বড্ড খারাপ হয়ে আছে ক’দিন ধরে…
এরকম একটা বাক্যের জন্য আমি যেন কতকাল ধরে অপেক্ষা করছিলাম। হ্যাঁ বাবা, যা… একটু ঘুরে আয়… মাথাটা ঠান্ডা কর। আর নিজের মনটা যে ভালো নেই, এটা স্বীকার করার দরকারটাও ছিল এবং সেটার নিজেই রেমেডি করার চেষ্টা, সেটাও। আসলে সমাজের চিত্র নিয়ে ভেবে দীর্ঘস্বাস ফেলা আর মাথা দোলানো আমাদের অনেকের কাছেই বিলাসিতা; কেউ সেটা আমার মত খাটের ওপরে ল্যাপটপ কোলের নিয়ে করে থাকেন, আর কেউ কর্পোরেট পার্টিতে স্কচের গ্লাস হাতে। কিন্তু সমাজের অবস্থা নিয়ে ঘুমের সমস্যা, দিনের পর দিন নিজের জীবন নিজেই অতিষ্ট করে তোলা, এটা ক’জন করে থাকে। আসলে বয়স আর অভিজ্ঞতার ঘষা খেয়ে আমাদের গায়ে যে পালিশের আস্তরন পড়ে, সেটা আদতে “অবজ্ঞা”।
ভুলতে শেখা, এড়িয়ে যেতে শেখা, মুখ ফিরিয়ে নিতে শেখা… আমরা মনে করি এগুলো বড় হওয়ার অঙ্গ; আশ্চর্য্যের কিছু না… কিন্তু এরকম প্রতুলরা সেইসব বোকা লোকেদের মধ্যেই পড়ে, যারা হিতোপদেশের গল্পগুলোকে সিরিয়াসলি নিয়ে ডায়েরীর পাতায় মাথা খুঁড়ে মরে।
বোকা… বড্ড বোকা…
শান্তির আশায়…
নীল
Pingback: প্রতুলের ডায়েরী – শেষ কিস্তি – Libberish