বহুকাল আগে, মানে যখন ওই যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে শ্লীলতাহানী, সেই উপলক্ষে ধর্ণা, সেই উপলক্ষে ছাত্র পেটানো ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছিল, সেইসময় আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়তে একটা শিরোনাম বেরিয়েছিল ‘তালোত্তমা’। মানে তিল কে তাল করা যার স্বভাব, তিনিই তালত্তমা। এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে, আশাকরি তিলোত্তমার তালোত্তমার পরিচয় নতুন করে দিতে হবে না। যাই হোক। তিল কে তাল করে করে তিনি এখন এমনই অবস্থায় পৌছে গেছেন, যে’টা তার পোঁদ (পোমোদ) পোধান ফেজ মনে করা যায়।
–“আমি হাঁক মাল্লেই গোটা এলাকায় কার্ফ্যু লেগে যায়…”
লাইনটা মনে পড়ছে ? তা তিনিও এখন সেই পর্যায়ে; গাড়ি থেকে নেমে চেঁচাচ্ছেন “আয় শালা ক্রিমিন্যাল…” ঘটনা ঘটল নীল রতন সরকারে, আর উনি এস এস কে এম এ গিয়ে বললেন “চার ঘন্টার মধ্যে কাজ শুরু না করলে…”
যেদিন রাতে ঘটনা ঘটল, উনি তার পরের দিন ভাঙা বিদ্যাসাগর জোড়া লাগিয়ে তার পরের দিন এলেন নাটক করতে… নাটক করতে না, মোদ্দা কথা হল, একদল গুন্ডা নিয়ে এসে বললেন, কাজ শুরু না করলে আবার পেটানো হবে। আর মিডিয়ার কথা তো ছেড়েই দিলাম; তারা পারলে প্রমাণ করে ছাড়ে যে ডাক্তাররা নিজেরা মারামারি করে বিক্ষোভ করছে।
আমি ডাক্তারদের এই কর্মবিরতি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি। সরকারি হাসপাতালে সামান্য পরিকাঠামোয়, সামান্য মাইনেতে চিকিৎসা করবেন, আবার পেশেন্টের “বাড়ির লোক”(?)-এর কাছে ঠ্যাঙ্গানিও খাবে, এত চাপ তো নেওয়া যায় না মশাই। এবারে একটা কথাই অনেকে দাবী করছেন। ‘বাকি পেশেন্টরা কি দোষ করেছে ?’ আমি তার উত্তরে বলতেই পারি, যার খুলি ভাঙল, সে কি দোষ করেছিল ? এছাড়া, আর একটা বক্তব্য শোনা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘ডাক্তার মানেই কি ভগবান ?’ ‘কত ডাক্তার মরা রোগীর চিকিৎসা করে টাকা কামায়…’
এ সেই ‘তুই জল ঘোলাস নি, তোর বাবা ঘুলিয়েছিল তত্ত্ব…’
আসলে সেটাও কিন্তু ভাবার বিষয়; সমাজের যেকোনো জীবিকার কথা যদি ধরে, দূর্নীতি সব জায়গাতেই আছে… ঘুষখোর পুলিস আছে, নেতা আছে, অসৎ ডাক্তার আছে, এমনকি যেটা শুনলে লোকে দেশদ্রোহী বলে পেটাতে আসবে, মানে, অসৎ অর্থলোভী আর্মি অফিসার ও আছে। ডাক্তারি ম্যালপ্র্যাকটিশের উদাহরন আছে ভুরি ভুরি। কেউই ধোয়া তুলসিপাতা নয়…

কিন্তু, এবার প্রশ্ন করুন, এখানে কি ম্যালপ্র্যাকটিশ ঘটেছে ? সরকারি হাসপাতালে জেনেরিক ওষুধ, নামমাত্র বা বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য ভীড় অনেক, পরিচ্ছন্নতার বড়ই অভাব, কিন্তু তার সাথে পরিকাঠামোরও ততটাই অভাব। তারমধ্যে ডাক্তাররা হাজার হাজার রুগী সামলাতে ব্যস্ত, সেখানে একজন ৮৫ বছরের বৃদ্ধের হার্ট অ্যাটাকের পর, চিকিৎসা করার পড়েও যদি তিনি না বাঁচেন, আর তাতে বাড়ির লোকেরা ‘রাগ’ করে শ’য়ে শ’য়ে লোক এনে যদি ডাক্তার ঠ্যাঙ্গায়, আর তারপর শুধু নিজের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবীতে ডাক্তাররা কর্মবিরতি (এমার্জেন্সি আর পেডিয়াট্রিক বিভাগ ছাড়া) ঘোষণা করলে, তারা পিশাচ হয়ে যাবেন, তাইতো ?
কাল থেকে আর একটা সুন্দর যুক্তি শুনছি; ‘ইস্তফা দিল তো কি হল ? চেম্বার কি বন্ধ হবে ?’ ওমুক ডাক্তার ৫০০ টাকা ১০০০ টাকা ফিজ নেয়, এটা কি ঠিক ?
এইসব ঢঙ্গের কথা বন্ধ করুন, দিনরাত এক করে যাঁরা এন ই ই টি, তারপর এম বি বি এস পাশ করেছেন খেটে, নিজের শারীরিক মানসিক অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে, সে যোগ্যতা আপনার নেই, আমার তো নেই-ই। তারপর কি করবেন ? বিনা পয়সায় চিকিৎসা করবেন ? আর আপনি ‘বখাটে’ ছেলে হয়ে তার সামনে দিয়ে গাড়ি হাঁকাবেন ? চ্যাংড়ামো হচ্ছে ?
ওনার যোগ্যতা আছে, উনি ডাক্তার; তাই উনি ওনার বিদ্যা ভাঙিয়ে খাবেন। (এবার অতি লোভে তাঁতির কি হবে, সেটা পরের কথা…) আপনার আমার যোগ্যতা নেই, আমরা চপ বেচব। আমাদের তাঁদের সমালোচনা করারও যোগ্যতা নেই।
আমার ঠাকুর্দা ডাক্তার ছিলেন, আর জি করের, এখনো সিনিয়র ডাক্তারদের কাছে ডক্টর কমল কৃষ্ণ সিংহরায়ের নাম করলে চিনতে পারবেন। আমার বাবা সবসময় বলেন ‘ডাক্তারির মত নোবেল প্রফেশন আর হয় না’। কিন্তু যাঁরা সরকারি হাসপাতালে আছেন, তাঁরা যদি সামান্য নিরপত্তাটুকু না পান, তাহলেও তাঁদের কাজ করে যেতে হবে, তাই তো ? হাসপাতালটা কুস্তির আখড়া করে তুলতে হবে, তাই তো ? আবার ভাবুন। কতগুলো বাজারি লম্পট নিউজ চ্যানেলের কথা ছেড়ে, নিজে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করুন। মুখ্যমন্ত্রী গলায় স্ট্রেথো নিয়ে আবার বড় নাটক করবেন কিনা, সেটা পড়ের ব্যাপার। কিন্তু আজ প্রায় গোটা দেশে যে স্বাস্থক্ষেত্রে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার দায় অনায়াসে তালোত্তমার ঘাড়ে ফেলা যায়। এবার তাঁকে বোঝানো দরকার, হাসপাতালগুলো সরকারী, তাঁর দলের তেজারতি কারবার না, আর ডাক্তাররা তার কেনা গোলাম না…
শান্তির আশায়…
নীল…
Ei darun likhechi.
LikeLiked by 1 person