[ যাঁরা ডিসি কমিক্স ফলো করেন, তারা জানবেন ‘ইনজাস্টিস – গডস অ্যামং আস’ -এর কথা। এই গল্পটি অনেকটা সেই স্টোরিলাইনের ওপর ভিত্তি করে লেখা, বাকিটা… বাকি ব্যাখ্যাটা না হয় আপনার ওপরই ছেড়ে দিলাম…]
হল ওফ জাস্টিসের বড় কাঁচের জানলাটার সামনে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে ছিল ক্রীপ্টনের ক্যাল-এল। পৃথিবীর মানুষ যাকে সুপারম্যান বলেই চেনে। চেনে ? না… চিনত… এখন সে এই ছোট্ট নীল গ্রহটার পি-এম অর্থাৎ প্রাইম মনার্ক। আজ প্রায় পাঁচ বছর হল, বিশ্বের সমস্ত গভর্নমেন্ট-এর পতন ঘটিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে ক্যাল-এল।

দরকার ছিল… এত বছর ধরে জাস্টিস লীগের ‘কোড’ মেনে যে কাজটা কেউই করতে পারেনি, সেটা ক্যাল করে দেখিয়েছে… কিন্তু অনেক দেরীতে। তার আগেই তার দূর্বলতার… না, শুধু তার নয়, ব্রুস, মানে ব্যাটম্যানের দূর্বলতার শিকার হয়েছে লোইস… লোইস লেন… এই পৃথিবীর যে মানুষটাকে সে সবথেকে বেশী ভালোবাসত। তাই হিট-ভিশন দিয়ে জোকারের মাথাটা গলিয়ে দেওয়ার সময় একবারও বিবেকে বাধেনি।
তাকে আটকাবার অনেক চেষ্টা করেছিল ব্রুস আর ডায়ানা। কিন্তু জোকারের প্রাণহীন দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সময় ক্যাল বুঝতে পেরেছিল, বিশ্বশান্তির চাবিকাঠি তারই হাতে আছে… ঠিক এরকম করেই সবার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব। লেক্স লুথর, টু-ফেস, মেটালো…
ডায়ানা আর ব্রুস তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। শেষে এই হল অফ জাস্টিসেই লড়াই হয় তিন মহারথীর। সেদিনও গলাটা মুচড়ে, তার প্রিয়তম বন্ধু ব্রুসের প্রাণহীন দেহটা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার সময়ও বুক কাঁপেনি ক্যাল-এর। ডায়ানা আর্তনাদ করে উঠে ব্রুসের দেহটা নিয়ে চলে যায়।

সুবিচারের পথে বাধাসৃষ্টিকারী যে কেউই ক্রিমিনাল। জোকারকে এতদিন ধরে আর্কহ্যাম-এ পুষে রাখার ফলাফলই হল লোয়িসের মৃত্যু…
দু’দিন পরে ইউনাইটেড নেশনস-এর মিটিং-এ সুপারম্যান সমস্ত ক্রিমিন্যালদের মৃত্যুদন্ড দাবী করে… ইউ এন ও সেটা নাকচ করে দেয়। কিন্তু এখন ইউ এন ও-এর কোনো দরকার নেই। কারণ ‘নেশন’-একটাই। গোটা পৃথিবীটাই এখন ‘নিউ ক্রীপ্টন’।
এরপর ক্যাল, তার মনস্থির মত, ক্রিমিন্যালদের এক এক করে মারতে শুরু করে। সবার আগে মরে মেটালো, তারপর হার্ভি ডেন্ট ওরফে টু-ফেস। কিন্তু তারপরই শুরু হয় একে একে আত্মসমর্পণ। ফায়ারফ্লাই, কিলার ক্রক, সবাই সুপারম্যানের ছত্রছায়ায় এসে নিউ ক্রীপ্টন কে আরও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে।
ক্যাল তাদের ক্ষমা করে দেয়। হ্যাঁ, এরা সবাই এককালে ক্রিমিন্যাল ছিল, কিন্তু ব্যাটম্যান ও মরার আগেই ক্রিমিনাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ব্যাটম্যান যদি এরকম পরিবর্তিত হতে পারে, তাহলে এরাই বা পারবে না কেন ? একে একে ফ্ল্যাশ, ক্যাপ্টেন কোল্ড, ভিক্টর জ্যাজ সবাই সুপারম্যানের ‘জাস্টিস ক্যাবিনেট’-এর সদস্য হয়ে ওঠে। ক্যাল-এর এই একনায়কতন্ত্রের পিছনে যেমন প্রচুর প্রতিবাদী লোকজন-এর শোরগোল ছিল, তেমনই ব্যাপক জনসমর্থনও ছিল। তবে ভিক্টর জ্যাজকে নিয়ে অনেক প্রতিবাদ জেগে ওঠে। গথামের কূখ্যাত সিরিয়াল কিলারকে হল ওফ জাস্টিসের চেয়ারে দেখে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। বিশেষত, প্রায় দশ বছর আগে কোস্ট সিটিতে একদল ইবোলা আক্রান্ত রোগীর সেবা করার সময় জ্যাজ বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর কার্ক ল্যাংস্ট্রমকে সপরিবারে হত্যা করার পরও, পি-এম এর ক্যাবিনেটে তাকে জায়গা পেতে দেখে অসন্তোষ শুরু হয়। এসব কথা নিয়ে ভাবেনি ক্যাল। জনসমর্থন ব্যাপারটা আসলে বিলাসিতা। সে জনসমর্থন পেতে সংস্কারের পথে নামেনি। ক্রিপ্টনেকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছিল ক্যাল-এর বাবা জোর-এল। তিনি পারেননি। কিন্তু নিউ ক্রীপ্টনকে তাঁর মত করে গড়ে তুলে, অপরাধ মুক্ত করতে চায় ক্যাল।

সে জনগন, এবং তার অনুগতদের মন্ত্র দিয়েছে… ‘অল হেইল জোর-এল’।
ডায়ানা থেমেসকেইরা ফিরে গেছে। সে জানিয়ে দিয়েছে সুপারম্যান-এর ক্যাবিনেট বা দয়া-দাক্ষিণ্যের দরকার তার নেই। এর উত্তরে কিছু করেনি সুপারম্যান। কারণ সে জানে, থেমেসকেইরা তেও প্রচুর লোক আছে, যারা রানী হিপোলিটার বদলে ক্যাল-এল কে দেবতা বলে মনে করে। আর আজকাল ডায়ানাও সেটা বুঝছে। তাই তো সেদিন রাস্তায় ‘অল হেইল জোর-এল’ শুনে কোমর থেকে তলোয়ার বের করে মেজাজ হারিয়ে বিশাল কান্ড করে বসে…
এসব ভাবে আর হাসে ক্যাল… এক এক করে সব তার অধীনে হবে। আর্থার, মানে অকুয়াম্যান… সম্মুখ সমরে চ্যালেঞ্জ করেছিল সুপারম্যানকে… ফলাফলে পসাইডনের ট্রাইডেন্ট হাতছাড়া করে সে অ্যাটলানটিসের গভীরে আত্মগোপন করে। ক্যাল বা তাঁর ক্যাবিনেটের কেউই, সমুদ্রের অত গভীরে গিয়ে অ্যাটলানটিস দখল করার ক্ষমতা রাখে না।

তবে এটাকে সে পরাজয় মনে করে না। পসাইডনের ত্রিশুল হারিয়ে আর্থার আজ অনেক দূর্বল। আর সারাজীবন মহাসমুদ্রের গভীর অন্ধকারে লুকিয়ে বসে থাকার মত লোক নয় অকুয়াম্যান। যেদিন আবার ক্যাল-এর সামনে আসবে আর্থার; সেইদিনই পতন হবে অ্যাটলানটিসের।
-“অল হেইল জোর-এল !!!”
পেছন থেকে আওয়াজ শুনে ঘুরে দাঁড়ায় ক্রীপ্টনের শেষ সন্তান। মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফ্ল্যাশ, ওরফে ইওবার্ড থন।
-“কি ব্যাপার, ফ্ল্যাশ ?”
-“গোথাম সিটিতে আবার একটা লোক ব্যাটম্যান সেজে হল্লা করছে, ইয়োর গ্রেস…”
-“আবার ? আচ্ছা, আমি যাচ্ছি…”
এই হয়েছে এক নতুন মুশকিল। ব্রুস ওয়েনের মৃত্যুর পর থেকে, গত পাঁচ বছরে অন্তত ১০-১৫ জন নকল ব্যাটম্যানের উদয় হয়েছে, আর তাদের সকলকেই শক্ত হাতে দমন করেছে ক্যাল। অ্যানার্কিকে সে কখনোই প্রশ্রয় দেবে না… মরার আগে পর্যন্ত ব্যাটম্যান ক্যাল-এর আদেশ অগ্রাহ্য করে গেছে; এরকম লোকের কোন চিহ্ণই নিউ ক্রীপ্টনে রাখা চলবে না…

আধঘন্টা পরে ওয়েন টাওয়ারের মাথা থেকে ১৬ তম ব্যাটম্যানের প্রাণহীন দেহটা ঝুলিয়ে দিয়ে আসার সময় একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখল ক্যাল। রাস্তায় লাখে লাখে লোক জমা হচ্ছে, আর তারা চিৎকার করছে
“ডাউন উইথ সুপারম্যান”…
ক্যাল চাইলে পারত, তার হিট-ভিশন বা ফ্রীজ-ব্রেথ এর এক ঝটকায় সব্বাইকে ধুলিস্যাত করে দিতে… কিন্তু না… তার সামনে এদের কোনো ক্ষমতাই নেই… সে রেগে মেগে নকল ব্যাটম্যানের মুখোশটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে গেলেই সেটার ভেতর থেকে একটা খাম বেরিয়ে পড়ে। এখন হল অফ জাস্টিসে দাঁড়িয়ে খামটা খুলে পড়তে শুরু করে সে…
তুমি হেরে গেছ, ক্যাল…
চিন্তা নেই, আমি ব্রুশ ওয়েন নই, তার ছেলে ড্যামিয়েন বা তার শিষ্য ডিক গ্রেশন নই। ব্যাট ফ্যামিলির কেউ নই আমি। তোমার হাতে আমার মৃত্যু এটা আমি এই পোশাকটা গায়ে চড়াবার আগে থেকেই জানি…
তুমি হেরে গেছ, ক্যাল…
কারণ ব্যাটম্যান কেউ না… ব্রুস ওয়েন নয়, ড্যামিয়েন ওয়েন নয়, এমনকি বারবারা গর্ডনও নয়…
বিনিথ দ্যা মাস্ক, দেয়ার ইজ অ্যান আইডিয়া, অ্যান্ড আইডিয়াজ আর বুলেটপ্রুফ…*
যতদিন তোমার স্বৈরাচার চলবে, ততদিন আমার মতই এক এক জন তোমার সামনে ব্যাটম্যান হয়ে দাঁড়াবে, তোমার বিরুদ্ধে… সঙ্গে থাকবে হাজার হাজার জনতা, যারা তোমার সত্যিটা দেখেছে… তুমি হল অফ জাস্টিসে বসে একদল ক্রিমিন্যাল-এর সাথে নতুন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখছ…
তোমার স্পর্ধা দেখলে হাসি পায় আমার…
তুমি হেরে গেছ ক্যাল… আমি তোমার সামনে ২ সেকেন্ড ও টেকার ক্ষমতা রাখি না, তাই যখন তুমি আমার লাশটাকে সবার সামনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য ডিসপ্লে করবে, তখন তুমি রাস্তার লাখ লাখ জনতার চোখে তোমার জন্য ঘৃণা দেখবে… কারণ ওরা এখনো সাদা আর কালোটা আলাদা করতে পারে… সুবিচারের দাবীতে একজোট হয়ে রাস্তায় নামতে পারে…
অল হেইল দ্য জাস্টিস লীগ…
শান্তির আশায়…
নীল…
বলাবাহুল্য, বেশি ভাববেন না… ইচ্ছা হল লিখলাম। যদি আরো কিছু জানতে চান, নিচে কিছু লিঙ্ক দেওয়া রইল, পড়ে দেখতে পারেন। তবে, হাবিজাবী লিখতে গিয়ে কিছু হাবিজাবী লিঙ্ক দিয়ে ফেলতে পারি… কিছু মাইন্ড করবেন না…
আর হ্যাঁ, *মার্কা বাক্যটি আমার লেখা না, ডিসি/ভার্টিগো কমিক্স থেকে প্রকাশিত অ্যালান মুরের লেখা ‘ভি ফর ভেনডেটা’ কমিক্স থেকে নেওয়া…
লিঙ্ক :
https://en.wikipedia.org/wiki/Injustice:Gods_Among_Us(comics)
প্রথমত – লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো…কারণ লেখাটা প্রবন্ধ হিসেবে ভালো…
দ্বিতয়তঃ – লেখাটা যদি ব্যঙ্গাত্মক হয় তাহলে আমি সেটা ভালো করে বুঝতে পারিনি…নিচের লিঙ্ক গুলো খুলে দেখলে হয়ত বুঝতে পারবো…
LikeLike
হয়তো একটা জিনিস একটু ভুল আছে। ডায়ানা সবসময়ই সুপারম্যান এর সাপোর্ট এ ছিলো। ব্যাটম্যান এর ব্যাপারে ভুল বলাটাও ডায়ানাই বলতো।
LikeLike
আমি বলিনি যে Injustice – Gods Among Us এর গল্পটাই এখানে লিখেছি… ‘অবলম্বনে’ কথাটা সেইজন্যই লেখা। অকারণে ভুল ধরলে তো বলতে হবে আপনার এই কমেন্টটাই অযৌক্তিক…
LikeLike