ইরেক্টাইল ডিস্ফাঙ্কশন কাকে বলে, সবাই জানেন। শুধু শুধু এখানে অনর্থক যৌনতা বিশয়ক কথা লিখে টিআরপি বাড়ানো আমার কাজ না… আমি ব্লগ লিখি, হইচই-এর সিরিজ বানাই না… যাই হোক। আজ ফেসবুকে একটা কথা দেখতে পেলুম, ‘ইলেক্টাইল ডিস্ফাঙ্কশন’ (Electile Dysfunction)। আদপে এরকম কোন কথা ইংরেজি অভিধানে নেই, কিন্তু কথাটা যে পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়েছে, সেটা বেশ মজার। মানে ইরেকশন যেমন উত্তেজনার প্রকাশ, তেমনি ইলেকশন নিয়েও দেশে উত্তেজনার সীমা নেই। কিন্তু তার মাঝেই আসে আমার মত বালখিল্য, যারা আরকি… ওই… ভোট নিয়ে… মানে বিন্দুমাত্র উত্তেজনা অনুভব করে না…
তবে হ্যাঁ, ভোটের দিন বাড়িতে বসে থাকি না, নিজের ভোটটা দিয়ে আসি। তাহলেই লোকে প্রশ্ন করবেন, কাকে দিই ? এখন, আমার ভোট নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তা সেটা কাউকে জানানোর আমি প্রয়োজন বোধ করি না। অনেকেই আমাকে আরো মরিয়া হয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, তাহলে আমি ঠিক কোন মতবাদে বিশ্বাস করি ? মুশকিলটা হয় এইখানেই। যেকোনো সুস্থ, শিক্ষিত ঘরের সংস্কৃতিমনস্ক ছেলে-মেয়ে, কলেজ জীবনে মার্কসবাদ আর বামপন্থার সংস্পর্শে আসবে না, বা তার দ্বারা প্রভাবিত হবে না, এটা একেবারে অসম্ভব ব্যাপার। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার ব্যাপার হল, এরপর এই ছেলেমেয়েদের একদল মার্কসবাদ আর ‘কমিউনিস্ট পার্টি ওফ ইন্ডিয়া, মার্ক্সিস্ট’-কে এক করে ফেলে, আর অন্যদল, কিছুটা দেখা আর কিছুটা শোনা ৩৪ বছরের পরে, কিছুতেই মার্কসবাদ আর সিপিএম কে এক করতে পারে না, তাই খানিক নিহিলিস্ট আর খানিক অ্যানার্কিস্টের মাঝামাঝি জায়গায় ঝুলে পরে চোখে আঙুল দাদা-এর মত করে শাসকগোষ্ঠির ছিদ্রান্বেষণ করে দিন কাটায়।

আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, ভোটার কার্ড হওয়ামাত্র প্রথম রাজ্যসভা নির্বাচনে লাফাতে লাফাতে গিয়ে তৃণমূলকে তাই ভোটটা দিয়ে এসেছিলাম, সেই বহুকাঙ্খিত, পরিবর্তনের লোভে। তারপর সেই পর্বত যে কত ধেড়ে ধেড়ে মেঠো ইঁদুর প্রসব করল, সেটা আর বলার কথা না…
কমনওয়েলথ গেমস, ২জি-৩জি ঘাপলার পর, জনতা ক্ষেপে গিয়ে (?) মোদী সরকারের আমদানী করল। তাই মোদী সরকারই হল, ভারত সরকারই হল না। ভদ্রলোকের রহস্য উদ্ঘাটন করতেই পাঁচ বছর কেটে গেল। তিনি কি খান, কি পড়েন, কোন সাবানে স্নান করেন, তিনি বিবাহিত কি বিবাহিত নয়… সবই কেমন মেঘের আড়ালে রয়ে গেল…
যাক গে। সংখ্যাতত্ত্ব বলছে দেশের অবস্থা আপাত পতনশীল। দেশে, রাজ্যে রাজনীতি আর শাসনের নামে যা চলছে, সেটাকে ‘প্রহসন’ বললে গোপাল ভাঁড়ের অপমান হয়। আর আমরা এখনো ভেবে চলি, প্রতি ভোটের পর, কিছু না কিছু তো আলাদা হবেই! সর্বত্র যে একই ব্যাপার চলছে, তা বলব না, কিন্তু এই মুহূর্তে আমার রাজ্যের অবস্থা ভাঁড়ে-মা-ভবানী (এবার বোধহয় ভবানী পাঠকের অপমান হল)। এবং মাইরি বলছি, আমি বিশ্বাস করি না, কোন রাজনৈতিক দল এর অবস্থা বদলে সোনার বাংলা গড়ে দেবে (এবার বোধহয় ফাটাকেষ্ট…)। আর এর পেছনে পদার্থবিদ্যার একটা সোজা নিয়ম কাজ করছে; ‘এনট্রপি’। কোনো সিস্টেমের ‘অনুপস্থিত কার্য’ বা ‘Unavailable Work’-কে বলা হয় এনট্রপি। আর এই এনট্রপি সর্বদা উর্দ্ধগামী… বেড়েই চলেছে। তেমনি, ভোটের পরও দিন দিন বেড়ে চলবে ‘Unavailable Work’। মানে, অবস্থা অবনতি ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না আমি।
হ্যাঁ, অবশ্যই কাল ভোট দিতে যাব, ভোটের লাইনে জগন্নাথ বসুর সাথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো একটা অটোগ্রাফও চেয়ে নেব। আশ-পাশের পাড়ার লোকজনের সাথে একটু গল্পগুজব করে, ভোট দিয়ে বাড়ি চলে আসব। ব্যাস… আমার গনতান্ত্রিক কর্তব্য শেষ। তারপর ২৩ তারিখ কি হবে, আর কি না হবে, সে পরের কথা, কিন্তু ফলাফল একই, সত্যফল নয়, ডাউনফল…
শান্তির আশায়…
নীল…
পুনশ্চ – এতদুর যখন পড়েছেন, তখন বলি, দিদি, মোদী, কেউই কিন্তু গুডী গুডী পিপুল নন… তাই সামলে। আর ৩৪ বছরেও যদি শিক্ষা না হয়, আবার কাস্তের ওপর গলা দিন গিয়ে; তারপর মাথা হাতুড়ি পরে, চোখে তারা দেখলে আমায় দোষ দেবেন না যেন…