এই গপ্পোটা অনেকেই জানে… আসলে স্কুলে পড়াকালীন বাংলা গানের ব্যান্ড করব, এই হুজুগটা অনেকেরই চাপে। আর এরকম ব্যান্ড নিত্য শ’খানেক তৈরী হয় আর ভেঙ্গেও যায়। আমাদের ভেঙ্গেছিল বলব না, তবে আমি সেই ব্যান্ড ছেড়ে বেড়িয়ে আসি, আর তারপর গোঁসা করে সেই বন্ধুদের সাথেও আর যোগাযোগ রাখিনি

হ্যাঁ, মেনে নিচ্ছি নাক-উঁচু ভাবটা আমার বেশীই ছিল, কিন্তু বন্ধুত্ব, ব্যান্ড, স্কুল… এই জিনিসগুলোকে যে কারণেই হোক আলাদা করতে পারিনি। জানি, আজকাল লোকে ডিভোর্স করার পড়ও ফেসবুকে দন্ত বিকশিত করে পোস্ট করে, ‘উই আর ফ্র্যান্ডসসসসসস’। আসলে, সেইসময় ব্যান্ডে নেই, বন্ধুত্বে আছি, এই ভাবনাটা ভাবার জটিলতাটাই আসত না, (অন্তত আমার না)। তা ব্যান্ড বন্ধুত্ব চুকে-বুকে যাওয়ার পড়, অনেক চোখের জল ভাসিয়ে, অনেক খাতার পাতা নষ্ট করে একখান ‘নোভেল’ লিখেছিলুম। সেটার নাম ছিল ‘একটি ছেলের গল্প’। মানে আমি রঞ্ছোরদাস জাতিয় একটি ছেলে, গল্পের ট্র্যাজিক হিরো, আর আমার ব্যান্ডমেটরা হল ভিলেন।

বলাই বাহুল্য, এরকম ভয়ঙ্কর ‘এপিক’ কেউ ছাপতেও রাজি হয়নি, আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও। যাকগে, সেই ব্যাথার কথা না হয় নাইবা বললাম। এবার আসি অন্য কথায়। ইংরেজিতে বলে না ‘টাইম হিলস অল উন্ড’ বা ওইরকম কিছু একটা ? তা স্কুল ছাড়ার এই ন’বছর পড়, আজ সেই ব্যান্ডমেটদের সাথে আবার বসলাম। আমার গানটা শখ কে শখই রয়ে গেছে, কিন্তু অন্যরা গান নিয়ে, গান করা নিয়ে রীতিমত একে অপরের সংষ্পর্শে থেকেছে। কিন্তু আজকের দুপুরটা যেন মনে অঞ্জন দত্তেরই সেই গানটা আবার করে বাজিয়ে দিল। “শুনতে কি চাও তুমি, সেই অদ্ভূত বে-সুর আ-সুর ?”

সেই স্কুলের স্মৃতি, সেই সেই ক্লাসের খুনসুটি, আর সেই একই বিষয় নিয়ে বার বার হেসে গড়িয়ে পড়া, এত বছর পড়েও…
এসব তো গল্পে ছিল না ?
গল্পে তো ছিল ছেলেটা, মানে আমি, হারিয়ে যাব… কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না…
কিন্তু… গল্পটার নাম ছিল ‘একটা ছেলের গল্প’…
আর সেই গল্প লিখতে গিয়ে, আমি একটা একটা করে যে কটা ছেলেকে ‘ভিলেন’ বানিয়েছিলাম; তাদের প্রত্যেকেরও একটা একটা করে গল্প ছিল, আর সেই গল্পে আনন্দ ছিল (সিকদার নয়), মজা ছিল, গান ছিল, প্রথম প্রেম ভাঙার ব্যাথাও ছিল।
তাই ‘দায়িত্ব’, ‘কর্তব্য,’ এইসব ভারি ভারি বোঝা রাখার তাই জায়গা ছিল না। তাই সবার গল্পে সবাই হিরো ছিল, আর সবাইকে ভিলেন বানাতে গিয়ে, ৯টা বছরের আরো অনেক অনেক স্মৃতি খুইয়েছি আমি।

তাই একটা ঘরে অতগুলো চেনা মুখ, চেনা নাম একসাথে পেয়ে… ‘এই শ্বেত !’, ‘ওই সাত্যকি !!!’ বা ‘বাজা, আনন্দ’ শুনতে পেয়ে বা বলতে পেরে, নিজের বয়স ৯ বছর কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে যেন…
তোকে মিস করলাম, অঙ্কুর…
সময় ফিরে আসে না, আর স্মৃতি ভোলা যায় না…
ইকুইলিব্রিয়াম !!!
শান্তির আশায়,
নীল…