প্রতিবারের মত সাবধান করে দি, মোদি/বিজেপি/আর এস এস ভক্তরা দূরে থাকুন, বদহজম হয়ে গেলে আমার কোনো দোষ নেই।
একটু ভেবে দেখুন তো, শেষ কবে গোটা পৃথিবীতে কোনো মানুষের বিরাট মূর্তি তৈরী করা হয়েছে, ধুম ধাম করে ? জানি, মা-মাটি-মানুষের সরকার পাড়ার মোড়ে মোড়ে গাদা গাদা আবক্ষ মূর্তি আর ‘ব-গ্লোব’ বসাচ্ছে ফি-হপ্তা; কিন্তু সেটা বাদ দিলে শেষ কবে ?
একটু সার্চ করে দেখুন, আমি বলব না, একটু গুগল করে দেখুন… বুঝতে পারবেন।
লোকে অজন্তা, ইলোরা, খাজুরাহো দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে এসেছে, এবং এখনো তা মানুষকে অবাক করে, পাগল করে দেয় যে কোন মান্ধাত্বার আমলে দলে দলে শিল্পী, ভাস্কর গুহার গায়ের পাথর কুঁদে কুঁদে তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছে; প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেগে গেছে সেই ভাস্কর্যের পেছনে; কারণ সেই সময়, সেটা সহজ কাজ ছিল না, সেটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটা অসম্ভব ছিল। তাই আজও অক্ষরধাম মন্দিরের চেয়ে তাজমহলে বেশী ভীড় হয় (হয়তো ভুল বললাম, ধর্মের ব্যাপার তো…)।
যেখানে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উন্নতি এমন জায়গায় পৌছেছে, সেখানে চ্যালেঞ্জ ব্যাপারটা অনেকটা নখ-দাঁত-হীন সিংহের মত হয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জ এখনো আছে যেমন চিকিৎসাক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেতত্রে… যাই হোক, যেখানে সীয়ার্স টাওয়ার থেকে বুর্জ খালিফা এক একটি বিল্ডীং ‘স্কাইস্ক্রেপার’ কথার অর্থটাকে আক্ষরিক অর্থে নিয়ে গেছে, সেখানে স্থাপত্য একেবারেই ‘চ্যালেঞ্জ’ নয়; যদি না সেটা পশ্চিমবঙ্গের ব্রীজ না হয়।
তবে ব্রীজের ব্যাপারটাও আর কি বলব? যেখানে ডক্টরেট করে মড়া পোড়াতে হয় আর ইঞ্জিনিয়ারিং এর কনভোকেশনে হাতে একটা কড়া-খুন্তি ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় চপ ভাজো, সে রাজ্যে কলুর দুএকটা বলদ পাওয়া গেলেও, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া যাবে বলে তো আমার মনে হয় না।
যাক গে যাক। ব্রীজের কথা থাক বরং। কাজের কথায় আসি। স্থাপত্যের কথা বলছিলাম। স্থাপত্যে এখন মেহনত অনেক কম, পয়সা বেশী লাগে। তা লেগেছে… ৩৬০০ কোটি টাকা খরচ করে ১৮২ মিটার লম্বা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি তৈরী হয়েছে।
তো? আমি কি করব? স্লো ক্ল্যাপ দেব ? না বিজেপি কে ভোট দেব?
আচ্ছা, ওই দেড়ে ভদ্রলোক নিজেকে কি ভাবেন? জুলিয়াস সীজার? না… ভুল হল; ক্লদিয়াস সীজার নীরো… না ১৯ সালে ভোট আসছে, নীরব মোদী থেকে বিজয় মালিয়া টাকা মেরেছে, ডিমনিটাইজেশন করে ঘোড়ার ডিম হয়েছে, উলটে নতুন কারেন্সি ছাপিয়ে আবার খরচ। এস বি আই ৫৯ টাকা করে কাটছে, গোরু খেলে লোক খুন হচ্ছে, মানে আর কত বলব।
রোম পুড়িতেছে, আর সম্রাট বেহালা বাজাইতেছেন।
রোমান সাম্রাজ্যের একনায়করা যখন দেখতেন জনগনের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে, তখন একটা বড় করে সার্কাসের আয়োজন করতেন। লোকে সার্কাসে মন দিতে গিয়ে রাজার দোষ ভুলে যেত।
কিন্তু এসব তো খৃষ্টজন্মের আগের ঘটনা। সেসব স্ট্রাটেজি কি এখন চলবে?
অন্তত চলা উচিত নয়…
কিন্তু ভুল করে যদি চলেও যায়… তাহলে বুঝতে হবে ‘ইয়ে বিক গ্যায়ি হ্যায় জনগন’…
না, একটু ভেবে দেখুন। ৩৬০০ কোটি টাকা খরচ করে যে মূর্তিটা তৈরী হল, সেটা তৈরীর টাকা কিন্তু আমাদের পকেট থেকে, আমাদের ট্যাক্সের টাকা থেকে এসেছে। ৩৬০০ কোটি !!!
আর সেই মূর্তি দেখার জন্য, আপনাকে ৩৫০/- টাকার টিকিট কাটতে হবে…
ছোটবেলার কথা মনে আছে? ধরুন আপনি আপনার বাবার পকেট মেরে, বাবাকেই একটা ক্যামেরা উপহার দিলেন। আর সেই ক্যামেরার ফিল্মের খরচও কিন্তু আপনার বাবাকেই বহন করতে হবে। তবু ছোট ছেলেটার মুখ চেয়ে, বাবা হাসি মুখে সেটা মেনে নিলেন…
কিন্তু
জনগন সরকারের বাবা নয়, আর সরকার তথা দেশের প্রধানমন্ত্রীও পাঁচ বছরের বাচ্চা নন, যে তিনি পকেট মেরে গেলে আমাকে হাসি মুখে মেনে নিতে হবে।
‘ডেডীকেটেড টু দ্যা নেশন…’
ছ্যাবলামো হচ্ছে?
না, শিক্ষাখাতে দিন দিন খরচ কমানো হচ্ছে, তেলের দাম যেন রেকারিংয়ের ডেসিম্যাল… ওদিকে হাইপারলুপ চাই। মাথামোটা অশিক্ষিত হনুমানের দল গদিতে বসে পা দোলাচ্ছে, আর বিজ্ঞানীরা উপবাস করে মরছে। ধর্মীয় বিদ্বেশ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে ভুল করে লোকের মুখ খুলে গিয়ে অনেক সত্যি কথা বেড়িয়ে পড়ছে।
এবার কথা হল, এরপরও কি এই সরকারকে আরো পাঁচটা বছর দিতে চান? মনে হচ্ছে দেবেন না, তাইতো? কিন্তু মুশকিল হল কি বলুন তো? আমাদের মত ‘নিশ’(niche) লোকজন শুধু ফেসবুক-এ পোষ্ট আর নোটায় ভোট, এই দিয়েই খুশি। সশস্ত্র বিপ্লব-টিপ্লবের(?) কথা ভাবলেই আমাদের গায়ে জ্বর আসে। তাই আমাদের ভোটে, সরকার বদলায় না। তাই আবার যদি পাঁচ বছর এই সরকার ফিরে আসে, দুঃখ পাবেন না। মানে পেয়ে তো কোনো লাভ নেই… নিজেকে শান্তনা দেবেন…
-“হ্যাঁ, তেলের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু মূর্তির মাথায় কাকে হাগেনি…“
-“হ্যাঁ, শ’খানেক চাষী মরেছে ঠিকই, কিন্তু এন্ট্রী টিকিটের দাম বাড়েনি…”
আর যদি আপনি মনে করেন যে এটা আমাদের দেশের একটা চূড়ান্ত উন্নতি, তাহলে…
তাহলে আপনি এ লাইনটা পড়তেই পারেন না! তাহলে আপনি বিজেপি একটু গালি খাওয়ার পরই সাইড হয়ে গেছেন। আর যদি আপনি এই লাইন অবধি পৌছেই থাকেন, তাহলে ভেতরে রাগ-গালি সব বার করে দিন কমেন্ট সেকশনে। তবে হ্যাঁ, বাপ মা তুলে গালি দেবেন না, কারণ এমনিতেই আমার বাজারে দূর্মুখ বলে খুব বদনাম… তাই দয়া করে আমাকে মুখ খোলার সুযোগটা দেবেন না…
শান্তির আশায়,
নীল…
তুই অনেকের মনের কথা লিখে দিয়েছিস এখানে। মানে, ভদ্র ভাবে ধৈর্য্য নিয়ে যে ভাবে বলা হয়ে সে ভাবে। পাবলিক ব্লগ যেহেতু। কিন্তু ঠিকই। ব্যাপার টা অরণ্যে রোদন। যেখানে দেশের অত্যাধিক মানুষ এই বিজেপি সরকার কেই আবার পশ্চাদ্দেশে হাত বুলিয়ে গদি তে তোলার চেষ্টা করবে। যতক্ষণ না নিজের ঘরে আগুন লাগছে ততক্ষণ মানুষ বোঝে না আগুন কি জিনিস। অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে আলাদা করে ব্লগ নোংরা করা ঠিক না। কিন্তু রাজনীতি কথাটি নিজেই এমন অশ্লীল হয়ে গেছে যে ব্যবহার করলেই যে কোনো কিছু নোংরা করে দেবে। যতদিন এই এত রাজনৈতিক দল থাকবে, ততদিন এই দেশের জাহান্নামেও জায়গা হবে না। কাগজে কলমেই শুধু “socialist, secular, democratic, republic” দেশ আমাদের। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বুক ঠুকে ইন্ডিয়ান আর্মির শুধু প্রশংসা করলেই হয়ে যায় না। যা করার ওরা করছে। আপনি কে ওদের কাজের ক্রেডিট নেওয়ার? ওরা বর্ডার এ গিয়ে বছর এর পর বছর শুধু শুধু এই পোড়া দেশের জন্যে প্রাণ দিচ্ছে। যেখানে দেশের মধ্যেই এত অরাজকতা। যাই হোক, আর বেশি কিছু লিখলে আবার স্প্যাম কমেন্ট বা রিপোর্ট করে দেবেন আবার কোন সম্মানীয় ব্যক্তি। যাই করুন, আগে চোখ খুলে দেখতে শিখুন, তফাৎ করতে শিখুন ঠিক আর ভুল এর মধ্যে। And good job on your article neelotpal. Enjoyed reading it.
LikeLiked by 1 person
Excellent post, very necessary. Whether this changes anything or not is a good question, but that does not mean that we stop speaking or commenting. We need such posts.
LikeLiked by 1 person
Thank you, Sir…
LikeLike