সতর্কিকরণ – প্রচুর গন্যমান্য ব্যাক্তিকে খিস্তি করা হয়েছে এই লেখায়। ‘ভাই’-এর ফ্যান আর গোমাতা-এর সন্তানরা সাবধান।
আসুন, আজ আপনাদের একটা গল্প বলি। আচ্ছা, আপনারা নিশ্চয় কর্ণি সেনার নাম জানেন?
জানেন তো?
আরে বাবা, পদ্মাবত(ই)-এর রিলিজের সময় টিভি চ্যানেল-এ যে হনুমানগুলোর লাফালাফি দেখাচ্ছিল, সেইগুলোর কথা বলছি;
এবার, বুঝলেন তো?
এ তো গেল কর্ণিসেনার কথা। পদ্মাবত-এর পর থেকেই বেশিরভাগ বাঙালির মুখে একটাই ডায়ালগ শুনেছি;
‘রাজস্থানী, মানেই ওই মেড়োগুলোর মত আনকালচার্ড আর দুনিয়ায় দুটো হয় না।”
আমার ফেবু ফ্রেন্ডলিস্ট-এর এক ভদ্রলোক তো সেইসময় রাজস্থান ট্যুরে বেরিয়ে পড়ে খোদ মাউন্ট আবুর পাদদেশে বসে মেড়োদের খিস্তি শুরু করে। প্রমাণ করে ফেলে যেসব নিয়ান্ডার্থালরা অভিযোজিত হয়নি, তারাই হল রাজস্থানী।
যাক গে যাক। এবার আর একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
বিশনয়ীদের নাম শুনেছেন?
শোনেননি না…?
বড়ই দুঃখের কথা; কিন্তু দুঃখটা কার? আপনার, না বিশনয়ীদের? আসুন তাহলে এই বিশনয়ী কি; খায় না মাথায় দেয়; সেটাই আলোচনা করি।
বিশনয়ীরা হল রাজস্থানের এক সম্প্রদায়, যাদের বাস থর মরুভূমির পশ্চিমাংশে। কিন্তু কথা হল, আমি আজ হঠাৎ এদের নিয়ে এত মেতে উঠলাম কেন? কারণ, বাঙালির রক্তে যেমন হুজুগ দৌড়ায়, তেমনি বিশনয়িদের রক্তে দৌড়ায় প্রকৃতিপ্রেম অদ্ভূতভাবেই। ইতিহাস এর সাক্ষী।
১৭৩০ খৃষ্টাব্দে, যোধপুর এর মহারাজা অভয় সিং-এর, নতুন প্রাসাদ তৈরীর জন্য অনেক কাঠের দরকার পড়েছিল। তা তিনি তার কাঠুরেদের পাঠালেন বিশনয়ীদের এলাকায় কাঠ কাটতে। কাঠ বলতে মূলত ‘খেজরী’ গাছ (Prosopis cineraria)
তা শান্তিপ্রিয় বিশনয়ীরা গাছ কাটার প্রতিবাদ করে। কাঠুরেরা কথা না শুনলে তারা গাছগুলোকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে, জনৈক অমৃতা দেবীর নেতৃত্বে। আর তাই রাজকার্যে বাধা দেওয়ার ফলস্বরূপ, প্রাণ যায় ৩৬২ জন বিশনয়ীর।
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। গাছের প্রাণের বদলে যায় ৩৬২টি মানুষের প্রাণ। ভাবতে পারছেন? আমার মত ল্যাপটপধারী প্রকৃতিপ্রেমীর তো এখনি প্যান্ট ভিজে যাওয়ার জোগাড় হয় ভাবলে। গাছকাটা আটকাতে গিয়ে আত্মবলিদান? তাও কবে ? প্রায় ৩০০ বছর আগে।
বিশনয়ীদের গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এই বিশনয়ীরা আর এক কারণে এখন ভারতবিখ্যাত। তাদের গ্রাম, তাদের এলাকা হল কৃষ্ণসারদের অভয়ারণ্য, বিন্ধাচল… মানে যা ইচ্ছে বলতে পারেন। এই বিশনয়ীরা, কৃষ্ণসারদের ভগবানজ্ঞানে পূজো, এবং সন্তানজ্ঞানে পালন করে থাকে। বিশনয়ী মায়েরা নিজের সন্তানের আগে একটা কৃষ্ণসার শিশুকে স্তন্যপান করিয়ে থাকে।

আর একটা কারণে বিশনয়ীরা বিখ্যাত। তারা গত ২০ বছর ধরে সলমন খান নামক একটি জন্তুর বিরুদ্ধে আদালতে আদালতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদি এখনো আপনার মনে প্রশ্ন থাকে ‘কেন ?’ তাহলে, আসুন একটা উদাহরণ দিই।
ধরুন, আপনি কুকুর বা বেড়াল খুব ভালোবাসেন। বাড়িতে অনেক কুকুর বেড়াল আছে; আর তাদের আপনি পরিবারের সদস্যদের মতই দেখেন। এখন ধরুন, কোনো এক ব্যক্তি আপনার বাড়িতে এল, আর শুধু শুধুই ইচ্ছে হল বলে, আপনার বাড়ির একটা কুকুর বা বেড়ালকে মেরে ফেলল।
আপনি, কি করতেন তার উত্তরে ? দেখতেন, লোকটা কত টাকা চ্যারিটি করছে? মানে গরু মেরে জুতোদান করছে, সেই গোরুর চামড়া দিয়েই জুতো তৈরী করে? নাকি সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করতেন যাতে লোকটার সর্বোচ্চ শাস্তি হয়?
যদি আপনার উত্তর হয় প্রথমটি, তাহলে প্লিজ এই ব্লগটা এক্ষুনি বন্ধ করে দিন। বিশনয়ীদের ইমোশন বোঝার চেষ্টা করলে আপনার লুজ-মোশন হয়ে যাবে।
সরকার থেকে প্রকৃতিরক্ষার পাঠ দেওয়া হয়, যাতে লোক নির্বোধের মত কাজ না করে। আমাদের মত শিক্ষিত লোকেদের পাঠের দরকার হয়, যারা ইট-কাঠ-পাথরের স্তুপের ওপর বসে প্রকৃতি রক্ষার বুলি ঝাড়ে। কিন্তু যারা প্রকৃতির কোলে বাস করে, তাদের শিক্ষার দরকার হয় না, এটা তাদের জন্মগত। শুধু বিশনয়ীদের কথা বলছি না, ভারতের যেকোনো অরণ্যনির্ভর লোকালয়ে যান; দেখবেন অক্ষরপরিচয়হীন মানুষগুলো কতটা প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন।
কিন্তু কাদের কি বলব। যে দেশের গা* প্রধানমন্ত্রী বলে কিনা ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ হয়নি, আমাদের মনের পরিবর্তন হয়ে গেছে’ সে দেশের থেকে আর কি আশা করা যায়? যে চামারটাকে ২০ বছর আগে চাঁদা তুলে গনজুতোপেটা করতে হত, সে আজ দন্তবিকশিত করে ‘বিইং হিউম্যান’ লেখা জামা পড়ে এসে আপনার সামনে দাঁড়ালে আপনি গদ গদ হয়ে জামিনের মালা যে তার গলায় ঝুলিয়ে দেবেন না, এতে আর আশ্চর্য কি ?
তার ভয়ে ফুটপাথে লোক ঘুমাতে পারবে না, বনে হরিণ চড়তে পারবে না…
আরে দূর মশাই, মানুষ মেরে জেলে গেল না, আর হরিণ মেরে জেলে যাবে? এটা কি চ্যাংড়ামি, না ‘আচ্ছে দিন’?
মাঝখান থেকে কিছু দুঁদে উকিলের পকেট ভরল, আর রাস্তায় গড়াগড়ি গেল বিশনয়ীদের ইমোশন, প্যাশন, দুঃখ। কিন্তু ওসবে পাত্তা দিলে কি আর চলে? দুদিন বাদে ‘ভাই’-এর সিনেমার পোস্টার লাগলে, টিকিট কেটে তো আমরাই দেখতে যাব…
সুতরাং, ওরকম কানের কাছে ওরকম ‘বিক গ্যায়ি হ্যায় গরমিন্ট’ বলে চেল্লাবেন না। গরমিন্টের আর দোষ কি? দেশের জনতাই তো বিক্রি হয়ে গেছে… এখন কান পাতলে আশে পাশে হাম্বা ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাই না…
পুনশ্চ – যারা গোটা রাজস্থানকে গালমন্দ করছিলেন, সেই এনলাইটেন্ড বঙ্গসন্তানরা এবার হাল্কা মুতে শুয়ে পড়ুন…
শান্তির আশায় (?)
নীল…
Fasting lekha.
I also support Nature saving.
LikeLiked by 1 person
Thank you, Sir…
LikeLike
Read “Daaroon”, in place of Fasting
LikeLiked by 1 person