হঠাৎ মনে হইল, বহুদিন গালি খাই নি! শুদ্ধ, কাঁচা খিস্তি… যা লোকের আঁতে ঘা লাগলে বর্ষিত হয়ে থাকে… তাই এই পোষ্টের অবতারণা। কাদায় নেমেছি যখন, লাথি খেতে রাজি, তবে পা সামলে, কখন কি হয় বলা যায় না…
এক যে ছিল কবিতা। তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কে তুমি, কেন তোমার অস্তিত্ব, সে উত্তর দিত, আমি মনের কথার ধারক ও বাহক; গদ্য যদি বাড়ি হয়, আমি তাহলে সাতমহলা স্বপ্নপুরি। গদ্য যে কথা বলতে পাতার পর পাতায় কালি লাগায়, আমি সেটা অনায়াসে বলি, দু এক পংক্তিতে।
আর তাই কবিতাকে ভয় পেত সবাই, সবাই ভালোও বাসত; আসলে বলা ভাল, সবাই সমীহ করে চলত তাকে। কারণ একলাইন রূপকের ফাঁকে কত হাজার উপাখ্যান যে সে লুকিয়ে রাখতে পারত, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। কবিতা ছিল চিরশৌখিন, অনেকটা দামী সুরার মত। হালকা হালকা নেশা, মাদকতার লোভেই কিছু লোক কবিতার দ্বারে এসে দাঁড়াত।
এই কবিতা লেখার গুরুদায়িত্ব ছিল কবিদের হাতে। তাদের লেখনীর জোরেই কবিতা কখনো হয়ে উঠেছে প্রেয়সীর কোলের সুখশয্যা, আবার শোষিতের হাহাকার। কবিতা হয়েছে কবির কৈফিয়তের হাতিয়ার, আবার কখনো কবিতা মেতেছে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে।

কবিতা চির আধুনিক, চিরনবীন; তাই যুগের আগে এগিয়ে চলতে, তার পা কাঁপেনি। কাঁপেনি কবিদের হাঁটুও। নতুন কবি আর নতুন কবিতা নিয়ে দ্বিগুন গতিতে এগিয়ে চলেছে তার জয়রথ।
তারপর হঠাৎ… একদিন কবিতা সস্তা হয়ে গেল। যারা কবিতার ভাব বোঝেনা, তারা জোর করে নতুন নামে কবিতাকে বেজন্মা করেছে, আর তার সাতমহলা বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে তাকে বাজারে টেনে এনেছে, বিক্রি করবে বলে। তাই যে কবিতা একদিন মনে ছুঁয়ে যেত গভীরতা দিয়ে; সেই কবিতা আজ দূর্বোধ্য হয়েছে। তাই আজ কবিতা মনকে ছোঁয় না, আঘাত করে। অনেক কথা বলে, কিন্তু সে কথার অন্তর-বাহির, কোনো অর্থই থাকে না।
কিন্তু, এসব কবিতা যারা লেখে, তাদের স্তাবকের অভাব কোনোদিনই হয় না। কারণ হুজুগে মেতে যা নতুন তাই ভালো এই কথায় বিশ্বাসী লোকের তো আর অভাব নেই পৃথিবীতে! তারা তাই দূর্বোধ্যতা কে অন্যের মেধার অভাব বলে উড়িয়ে দেয়, কারণ কবিতা মানে তাদের কাছে ‘যা বোঝা যায় না’। আর যত বোঝা যায় না, ততই কদর সেই কবিতার।
আমি কবি নই। আমার গদ্যতেই গভীরতা নেই, তাই আমি নিজেকে কবি বলে কবিতার অমর্যাদা করতে পারব না। হ্যাঁ, মানছি মাঝে মাঝে আমি ‘কবিতা’ নাম দিয়ে কিছু লিখি বটে, তবে সে নেহাতই ছেলেখেলা। কেউ সিরিয়াসলি নেবেন না, প্লিজ… আমিও নিই না। কিন্তু ব্যাপার হল, মাঝে মাঝে প্রচুর স্বঘোষিত কবিরা এমন চারধারে মাছির মতো ভ্যানভ্যান করে, মাথাটা কেমন ভেবলে যায়।
কবিতা সবার জন্য নয়। সবার পড়ার জন্য যেমন নয়, লেখার জন্যও নয় তেমন। তাই ফের যদি কেউ বলেন ‘পেচ্ছাব করে প্যান্টের চেন আটকানোকে কবিতা বলে’;
ভদ্রতা আশা করবেন না, প্লিজ…
(তবুও) শান্তির আশায়…
নীল…