কোনো একটা বিখ্যাত বিদেশী ম্যাগাজিন সমীক্ষা করে বলেছিল; যে বইটি সবচেয়ে বেশী বিক্রী হয় সাজিয়ে রাখার জন্য; সেটা হল ‘এ ব্রীফ হিস্ট্রী অফ টাইম’। সত্যি বলতে কি, আমি নিজেও বইটা পুরো শেষ করিনি। কারণ অনেকগুলোই, কিন্তু আজ সেসব কথা থাক। আজ বলব, কেন আদতে আমার ওই বইটা পড়ার ইচ্ছা জেগেছিল। আর কেনই বা আমি সবার বারণ সত্ত্বেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স অনার্স পড়ার জেদ ধরেছিলাম, আর তারপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে মাঠ ময়দান করি।
বাড়িতে আমার ছোট থেকেই পড়াশোনার পরিবেশ, ঠাকুর্দা ডাক্তার (এবং পি এইচ ডি), কাকা আইনজীবি, আর বাবা সরকারী চাকরীর সাথে সাথে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের অতিথি অধ্যাপক, আর দিদি এই মুহুর্তে জে এন ইউ সংলগ্ন একটা ইনস্টীটিউটের অধ্যাপক (যখনের কথা বলছি, তখন দিদির পি এইচ ডি হয়ে গেছে)। তা বাড়ির লোকজন এরকম হেভিওয়েট হলে, বাড়ির কনিষ্ঠতম বাঁদর ছেলের প্রতি একটু হলেও প্রত্যাশা থাকে, আমার বাড়ির লোকজনেরও ছিল, কিন্তু সে প্রত্যাশার চাপ আমাকে নিতে হয়নি কখনো।
বিজ্ঞান আমার ছোট থেকেই ভালো লাগত, তবে ভৌত বিজ্ঞানের দিকে আমি ঝুলতে শুরু করি মাধ্যমিক থেকেই। ক্লাস ইলেভেন আর টুয়েলভ এ ফিজিক্সটা যতটা না পড়তাম, তার চেয়ে বেশী উপভোগ করতাম আমি। ক্লাস ইলেভেন এর শেষের দিকে, চালু হল এল এইচ সি। লার্জ হেড্রন কোলাইডার। হিগস বোসনের সন্ধানে। গড পার্টিকল ! সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লীয়ার ফিজিক্স একটা প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিল; স্কুল ছাত্রদের জন্য; তাদের জানাতে, কি এই কর্মকান্ড। রাণা স্যার, মানে আমাদের সল্টলেক বি ডি-এর শ্রী রাণা খান স্যার বলেছিলেন, প্রোগ্রামে যাওয়ার আগে, একটু দেখে যাস ইন্টারনেট থেকে।
তা ইন্টারনেট খুলে পড়তে পড়তে কোথায় হারিয়ে গেলাম, নিজেও জানি না। একটা একটা করে রেফারেন্স ঘাঁটতে ঘাঁটতে মাথা ঢুকে পড়ল ফের্মিয়ন, বোসন, হেড্রন, লেপ্টন, ইলেক্ট্রোউইক ইন্টার্যাকশন থেকে কোয়ার্ক-গ্লুয়ন প্লাজমা অবধি। ‘ফ্যাসিনেটেড’ কথাটার মানেটা আবার নতুন করে উদ্ধার করেছিলাম সেদিন। সেদিন থেকেই মনে ভেবে নিয়েছিলাম, পড়তে হলে ফিজিক্স পড়ব।
তবে আমাদের সি ইউ-এর তিন বছরের সিলেবাস গলাধঃকরণ করতে করতে সেই ফ্যাসিনেশন শেষমেষ তিন বছরের তিনটে মার্কশিট-এর রূপান্তরিত হয়। সিলেবাসের চাপের মাঝে পপুলার সায়েন্সের বই পড়া ছাড়িনি আমি; আর সেই সুত্রেই হাতে পড়ে হকিং সাহেবের ওই বই।
মানলাম বইটার প্রতি আমি সুবিচার করতে পারিনি; মানলাম, আমিও এখনো হকিং রেডিয়েশনের আগে সাসকিন্ড সাহেবের হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপ্যালকে রাখি, তবু…
তবু,
বাঁচা কাকে বলে দেখিয়ে গেলেন তিনি। শুধু এক বিজ্ঞানী হিসাবে মনে রাখতে পারবো না তাকে; প্রতিবন্ধকতাকে কিভাবে জয় করে, বছরের পর বছর লড়াই করে কাটিয়ে দিলেন তিনি, সেটাও কি ভোলার মতন? একজন লোক তার জীবনের শেষ দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন একটা হুইলচেয়ারে, কথা বলতে কম্পিউটারের সাহায্য লেগেছে… ভাবলেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। জানি আজ আমার কাছে দেখাবার মতো কিছু নেই; মানে নিজেকে পদার্থবিদ বলে দাবী করার একফোঁটা অধিকারও আমার নেই; তবু মনে হচ্ছে খুব কাছের কাউকে হারালাম…
আর জানি না কি লিখবো… প্রথম খবরটা পেয়ে দুঃখ হয়েছিল; কিন্তু এখন যত ভাবছি, তত আরো গভীর ভাবে মনে দাগ কাটছে ব্যাপারটা… ফিজিক্সের প্রতি আমার যে প্যাশন নামক বস্তুটা ছিল, সেটা পরীক্ষার যাঁতাকলে হয়তো অনেকদিন পিশে গেছে, তবু আজ আবার যেন মনে হচ্ছে, একদিন, আমিও চেষ্টা করেছিলাম… পারিনি; সেটা অন্য কথা…
ভালো থাকবেন, স্যার… আপনার থিওরি ঠিক হলে, একদিন পৃথিবী আপনাকে ভুলে যেত; কিন্তু যাবে না; সাসকিন্ড সাহেব ঠিকই বলেছেন, তাই আপনাকে হারালেও, আপনার স্মৃতি কোনোদিন হারাবে না…
অমৃতলোকের পথে যাত্রাকালে-
শান্তির আশায়,
নীল…
ভাই, দারুন লিখেছিস।
LikeLike
ধন্যবাদ… 😊
LikeLike
You have enjoyed physics in some part of your journey. I think you are fortunate.
LikeLike
I think so too, Sir… Thank you…
LikeLike
লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো…
LikeLiked by 1 person
Well written……brings back memories of CU days …..RIP SH…..Physicists will miss you!
LikeLiked by 1 person
Touching note on a fighting genius 👍
LikeLike
Thank you, Sir…
LikeLike