সপ্তাহ খানেক আগে প্রথম পর্ব লেখার পর, মনটা নিজেরও খুঁত খুঁত করছিল, মনে হচ্ছিল ‘ লেখাটা বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হতে গেল ‘ অনেক ‘ ফ্লারিশ ‘ করার জায়গা ছিল, যেগুলো বাদ পড়ে গেল; আর আমার এক বোন শ্রেয়া, WhatsApp এ মেসেজ করে অত্যন্ত ডিটেলে অভিযোগ জানিয়েছিল। বলা যেতে পারে, এ লেখাটা সেই অভিযোগ আর নিজের অসন্তুষ্টির যুগ্ম ফলাফল; কিন্তু আমার মনে হয় না এ লেখাটা পড়ে আমি ছাড়া আর কেউ সন্তুষ্ট হবে। কারণ লেখাটা আমি শুরু করে কেবল আমার মনের বয়সের সাপেক্ষে গোয়েন্দা গল্প পড়া আর উপভোগ করার একটা তুলনামূলক আলোচনা করব বলে; কিন্তু লেখাটা একেবারেই অন্যদিকে চলে গেছে;
এবার লেখায় আসি;
কালবেলা, আর কালপুরুষের আগে আমি সমরেশ মজুমদার কে চিনেছিলাম গোয়েন্দা অর্জুনের হাত ধরে, শিলিগুড়িবাসী এই যুবকটি বাইক চালাতে পোক্ত, এবং তার এক গুরু আছেন, যার নাম ‘অমল সোম’। যদিও অর্জুনের গল্পগুলো মূলতঃ কল্পবিজ্ঞানধর্মী, তবুও সে বয়সে পড়তে মন্দ লাগত না। এখন পড়লে কেমন লাগবে বলতে পারব না।

ফেমাস ফাইভ থেকে ‘অনুপ্রাণিত ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের পান্ডব গোয়েন্দা ছেলেবেলায় খাসা লাগত; এখন ভাবলে বড় অবাস্তব মনে হয়; স্কুলবয় বাবলুর হাতে পিস্তলটা এখন আর বরদাস্ত হয় না।
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের জগুমামা আর টুকলুর রহস্যকাহিনী আমি একটাই পড়েছি; তবে আমার ব্যাপারটাকে বড্ড ‘জোর করে কাকাবাবুর মত, কিন্তু কাকাবাবুর থেকে আলাদা’ করার চেষ্টা করা হয়েছে… (আবার বলছি, এটা ব্যক্তিগত মতামত)।
আর এক গোয়েন্দার গল্প আমি পড়েছি খুব কম, কিন্তু এখন পড়তে চাই। মুশকিল হল, এনার গল্প বড়োই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে, সেটা যে কারণেই হোক না কেন… তিনি হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘পরাশর বর্মা’। আমার যতদূর মনে পড়ছে, মাত্র একটাই গল্প পড়েছি আমি ‘পরাশর বর্মা ও ভয়ঙ্কর ভাড়াটে’। পরাশর বর্মার প্রতি আমার এত আগ্রহের কারণ হল, শরদিন্দুর পর, আমি যদি আর কারোর লেখার ‘ফ্যান’ হই, তিনি হলেন প্রেমেন মিত্তির।
যারা বাংলা সাহিত্যের খুঁটিনাটির খোঁজ রাখেন, তাঁরা অবশ্যই জানেন যে পানিং এর রাজা শিবরাম চক্রবর্তীর একটি কমিক গোয়েন্দা চরিত্র আছেন, যার নাম ‘কল্কে কাশি’।
গত সপ্তাহে আর এক গোয়েন্দাপ্রবরের নাম বলতে ভুলে গেছিলাম, কারণ ইদানিংকালে তাঁর লেখা পড়া হয়নি, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ মারা যাওয়ার পর থেকে; বলাই বাহুল্য তিনি হলেন কর্ণেল নীলাদ্রী সরকার। কর্ণেল কাহিনীর তো আবার দুটো ভাগ; বয়স্কদের আর কিশোরদের। সত্যি বলতে বয়স্কদের জন্য লেখা গল্পগুলো আমার একদম পড়া নেই; কিন্তু কিশোর ভারতী আর আনন্দমেলা মিলিয়ে কর্ণেল কাহিনী নেহাত কম পড়া হয়নি। অনেকদিন ধরে শুনছি কর্ণেল নাকি রূপোলি পর্দার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন; কবে যে এসে পৌছোবেন, সেটাই ভাবছি।
আগের পর্বে, পি কে বাসু কে নিয়ে অনেক বক বক করেছিলাম তাই এ পর্বে শার্লক হেবোর নাম না নিলে মহাপাপ হয়ে যাবে; কারণ কিশোর সাহিত্যের এই কিশোর গোয়েন্দাটির স্রষ্টাও হলেন একমেব্যদ্বিতীয়ম নারায়ণ সান্যাল। একটা সিরিও কমিক অ্যাপ্রোচ এই গোয়েন্দাটিকে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে।
অনেক গোয়েন্দা কাহিনীই পড়েছি, যেখানে গোয়েন্দার চেয়ে কাহিনীটাই বড় হয়ে উঠেছে, মানে এসব গোয়েন্দাদের নিয়ে কোন ‘সিরিজ’ লেখা হয়নি। যেমন গৌতম রায়ের ‘সোনার ঈগল’। হলফ করে বলতে পারি, বইটা পড়ে দেখলে বুঝবেন, এরকম গ্রীপিং গোয়েন্দা উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে সত্যিই দূর্লভ, যেটা ছোট-বড় সকলেই উপভোগ করতে পারবে।
এবারে লেখার যে অংশে চলে এসেছি, তাকে বলে ‘অনারেবল মেনশন’। আর সেখানে অদ্রীশ বর্ধনের ইন্দ্রনাথ রুদ্র-র নামটা না করা অন্যায় হবে।
শুধু বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দাদের কথা লিখতে গেলে অনেক দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে অনেক অনেক তথ্য দেওয়া যায়, কিন্তু আমার তো ঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য লেখাটা শুরু করিনি, কারণ আমি কখনোই দাবী করি না যে গোটা পৃথিবী তথা বাংলার গোয়েন্দা গল্প আমার চষা; বরং উল্টোটাই; এরকম অনেক গোয়েন্দা নামজাদা গোয়েন্দা আছে, যার কোনো গল্পই আমার পড়া নেই; যেমন বিমল করের কিকিরা বা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের হুকা-কাশি। আর আমার মানসিকতার সাথে মেলে না বলেই আমি আজ অবধি কাকাবাবু বা মিসির আলি কে ঠিক গোয়েন্দা মানতে পারলাম না; যেমন পারলাম না ল্যাংডন সাহেবকে স্বীকৃতি দিতে। তাই শেষবারের মত বলছি, এটা কেবল আমার মতামত; তোপ দাগবেন না প্লিজ।
শান্তির আশায়,
নীল…
পুনশ্চ – লেখাটা শেষ করে কেনেথ ব্র্যান্যাগ-এর ‘মার্ডার ইন দ্য অরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’ দেখতে বসব।