হেডিং এর সাথে কন্টেন্ট কি ভাবে যুক্ত, সেটা একটু বাদেই বোঝা যাবে।
আজ দুপুরে পদ্মাবত(ই) দেখে এলাম। আর এটাকে তার একটা রিভিউ বলে ভাবা যেতে পারে। প্রথমে একক ভাবে অভিনয়ের কথা বলি, তারপর নাহয় সিনেমার কথা বলা যাবে; রণবীর সিং, শাহিদ কাপুর এবং জিম সারভ, তিনজনেই যথেষ্ট ভালো, তবে মনে দাগ কাটা অভিনয় বলতে যেটা বোঝায়, সেরকম কিছু দেখলাম না। বরঞ্চ রনবীর সিং কে বেশী স্ক্রীণ টাইম দেওয়ার দৌলতে শাহিদ কাপুর জায়গাটা একটু কম পেয়েছেন। অন্যান্য পার্শ্বচরিত্র নিয়েও কোনো অভিযোগ আমার নেই; মানে এক কথায়, এটি একটি ‘ওয়েল অ্যাক্টেট মুভি’।
এবার আসি পরের কথায়, গোটা সিনেমাটাই আমার কাছে একটা আদ্যান্ত ‘ক্লীশে’ বলে মনে হয়েছে। ২০১৫ সালের ‘বাজিরাও মস্তানি’-এর প্রতিটা সিনেমাটিক মোমেন্ট যেন পদ্মাবতীর গল্পে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা এলিগেন্ট ক্লাসিক্যাল নাচ (পিঙ্গা ও ঘুমর), একটা খ্যাপাটে অথচ এনার্জেটিক গান (মালহারি ও খালিবালি), একটা রোমাক্টিক গান (আয়াত এবং এক দিল, এক জান) ছকে বাঁধা, বাজিরাও-এর মতই পদ্মাবতীতে, রনবীর সিং এর একটি ইম্পালসিভ, ইসেন্ট্রিক চরিত্র। এমনকি বাজিরাও এর সাথে মস্তানির প্রথম দেখা আর রাওয়াল রতন সিং এর সাথে পদ্মাবতীর প্রথম দেখা হওয়াটাও বড্ড একরকম। রাণী পদ্মাবতীর সৌন্দর্য্যের কিংবদন্তীর মর্যাদা(?) রাখতে গিয়ে দীপিকা পাড়ুকোনের মুখে ভিএফএক্স দিয়ে এত ‘স্কীন সফনিং’ করা হয়েছে, দেখে মনে হচ্ছিল অপো বা ভিভোর সেলফির অ্যাড দেখছি।
লোকে সিনেমার জন্য সেট বানায়, আর বনসালী সেট-এর জন্য সিনেমা বানান। তাই সেট, ডিটেলিং নিয়ে আঙ্গুল তোলার আমার বাবার সাধ্য নেই; কিন্তু বার বার মনে হচ্ছে সেট এর আড়ালে কেমন সিনেমা হারিয়ে যাচ্ছে; শুধু সেট ডিজাইনের লোভে লোভে ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে সিনেমা করতে গিয়ে ডিরেক্টর বনসালী আড়াল হয়ে গিয়ে ডিজাইনার বনসালী বড্ড বেশি সামনে চলে আসছেন (এটা আমার মনে হয়েছে)।
যাই হোক, আমার সত্যি সত্যিই মনে হচ্ছিল, বাজিরাও এর শুটিং শেষ করেই সবাই মেক আপ বদলে আবার পদ্মাবতীর শুটিং করতে চলে এসেছেন।
এবার আসি বিতর্কের কথায়… কর্নি সেনা যে ছ্যাঁচড়ামো করেছে এই সিনেমা নিয়ে, তারপর থেকে গোটা দুনিয়াই দেখছি রাজপুতদের ওপর খর্গহস্ত। মানে আমার তো মনে হচ্ছিল বুকে বোর্ড ঝোলাই, ‘আই অ্যাম এ রাজপুত, অ্যান্ড আই ডু নট সাপোর্ট কর্নি সেনা’ আর যে যে আছে, কাউকেই না। তবে বনসালী বাবু যখন ‘দেবদাস’-এ পারো আর চন্দ্রমুখীকে নাচিয়েছিলেন, তখন সেটা কিন্তু বাঙ্গালি দর্শককুল/পাঠককুল মোটেও সেটা সোজা ভাবে নেননি। তবে আমরা তো ক্ষ্যামাঘেন্না করতেই অভ্যস্ত… না হলে হর হর ব্যোমকেশে ব্যোমকেশ আর সত্যবতীর বেডসীন… যাক গে যাক।
এবার যারা দাবী করছেন, এই সিনেমার ‘পয়েন্ট’ টা কি; এটা তো সতীদাহ বা জোহরব্রত কে ‘গ্লোরিফাই’ করছে… কোন আনকোরা আঁতেল নাকি এর সঙ্গে তুলনা টেনে বলেছেন, তার মানে কি এই দাঁড়ায় যে সমাজে ধর্ষিতার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই? আমার হাসি পেল। হ্যাঁ, আত্মহত্যা কখনোই গ্লোরিফাই করার জিনিস নয়, আর সম্মান রক্ষার্থে আত্মহত্যা করতে হলে, ওরকম সম্মান চুলোয় যাক। কিন্তু সমাজ আর ধর্ষিতা কথাদুটো এক বাক্যে ব্যবহার করার আগে টাইমলাইন্টার কথা ভাবুন; সমাজ কথাটার অস্তিত্ব কতটা ছিল? মানে আমরা যে সমাজে আমরা ধর্ষনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি, আর যে সময়ের গল্প জায়াসি লিখে গেছেন, সে সময় যুদ্ধ, লুটপাঠ, ধর্ষন, এসব তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল।
তবে আমি আগেই বলেছি, শুধু ডিজাইন দেখানোর জন্য একটা সিনেমা তৈরীর কোনো পয়েন্ট দেখিনা; আর কর্নি সেনার ছ্যাঁচড়ামো তো ছ্যাঁচরামোই। লোকের খেয়ে দেয়ে কাজ কাম না থাকলে যা করে… কিন্তু অনেক লোকজন আমার ফ্রেন্ডলিস্টেই আছেন, যারা গোটা রাজপুতের গুষ্টির তুষ্টি করতে উঠে পড়ে লেগেছেন… তাদের বলি,
“সব ক্ষারই ক্ষারক, কিন্তু সব ক্ষারক ক্ষার নয়…”
গালি খাওয়া বন্ধ হবে এই আশায়
নীল (রাজপুত, কিন্তু কর্নি সেনা নয়…)
Movie ta dekhar ichchei chole gelo…
LikeLiked by 1 person