গিরিশ পার্কের কাছে ফ্লাইওভার ভেঙ্গে পড়াটা যে এক অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা, সেটা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু সেইসময় একটা জোক খুব জনপ্রিয় হয়েছিল;
“পশ্চিমবঙ্গে বাস করলে, রাস্তা পেরোনোর সময় ডানদিক আর বাঁদিকের সাথে সাথে ওপরেও একবার দেখে নেবেন; যেকোনো সময়ে উন্নয়নের বোঝা আপনার ঘাড়ে চাপতে পাড়ে।”
এ তো গেল উন্নয়নের কথা, এবার আসি বিশ্বায়নের কথায়।
প্রথম প্রশ্ন, সখি, বিশ্বায়ন কারে কয় ?
আমার ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, পাড়ায় পাড়ায় কাস্তে হাতুড়ি তারা। লাল পতাকা সাদা রঙে ভরা। মানে সে সময় রাজ্য সরকারের প্রতিভূ ছিল ঐ। তারপর পরিবর্তন (?) এল। লাল পতাকা ঢাকল সবুজ রঙে। কিন্তু, তারপর কি হল? উন্নয়নের বোঝা (পড়ুন ব্রীজ) চাপল আমাদের মাথায়। কিন্তু শুধু উন্নয়ন হলেই তো চলবে না, বিশ্বায়ন ও চাই। আমার মনে হয় বিশ্বায়ন ব্যাপারটাকে আমাদের রাজ্য সরকার বড় আক্ষরিক অর্থে ধরে নিয়েছেন; তা না হলে কি করে ওনার ধারনা হয় যে বাংলার আগে ‘বিশ্ব’ বসালে বাংলার বিশ্বায়ন হয়ে যাবে ? কারণ আমি তো এ ছাড়া বিশ্ববাংলা শব্দের কোনো মূলদ ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না আমি। আর সেই বিশ্ববাংলার লোগো ? বাপ রে বাপ !! গ্লোবের ওপর ‘ব’ লেখা। মানে একেবারে গ্লোবালাইজেশন। না না, ভুল হল; গ্লোবাংলাইজেশন। রাস্তায় ঘাটে একটা করে ‘ব’। সরকারী অফিসের মাথায় ‘ব’; সাইন্স সিটির মোড়ে ‘ব’; এখন এই ‘ব’ মানে বিশ্ব, না বাংলা, না শ-কার ব-কার এর ‘ব’ সেটা কিন্তু ভগা জানে। বাংলার বিশ্বায়নের চিহ্ন হল ‘ব’। আমি লিখে দিতে পারি, যেসব স্কুলপড়ুয়া ছেলেপুলে এইসব রাস্তা দিয়ে যায়, তারা ব্যা ব্যা এর বদলে ‘ব ব ব্ল্যাক শিপ’ আবৃত্তি করে।
ক’দিন আগে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ হল বাংলায়। ক্যাপশন ‘বিশ্ববাংলায় বিশ্বকাপ’! মরি মরি। মানে বিশ্ববাংলা হল সরকারি শিলমহর।
“বিশ্ববাংলা মে হো, তো জি রহে হো তুম…”

এবার আসি নিঊটনের কথায়। কপাল ভালো ভদ্রলোক আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে গাছতলায় বসে ভাবছিলেন; তাই মাথায় আপেল পড়েছিল। আজকের যুগে, যদি নিউ টাউনের ক্রসিং এ বসে গ্র্যাভিটির কথা ভাবতেন, তাহলে মাথায় আপেলের বদলে পড়ত বিশ্ববাংলার ‘ব’। আর তখন বুড়ো নিউটনের দুঃখে শেলডনের মতো আমরা কেঁদে কেঁদে বলতুম
Oh Gravity ! Thou A Heartless Bitch !!
যাক গে যাক। জনগনের (এবং নিউটনের) চোদ্দপুরুষের ভাগ্য যে এই বিশ্বায়নের বোঝা কারোর ঘাড়ে চাপেনি। কারণ, এভাবে যদি একের পড় এক ‘ব’ খুলে খুলে পড়ে যায়, তাহলে বিশ্ব বাংলা শেষে বুড়ো আংলা হয়ে যাবে (মানে বাংলা থেকে ‘ব’ খসে গেলে আংলা ই পড়ে থাকে কিনা)।
ভুলে যাবেন না, মাইকেল বলেছেন –
“প্রবাসে দৈব্যের বশে, জীব-তারা যদি খসে…”
এখন কথা হল, প্রবাসে তো আপনি যাননি, গেছেন বাজারে; আর হঠাৎ আপনার মাথায় একটা আধলা সাইজের ‘ব’ খসে পড়ল। আপনার জীব-তারা তো সেখানেই বাস্তু হারা হয়ে যাবে, তাই না? একে তো কলকাতায় লোকের মাথায় জিনিস পড়ার একটা বিচ্ছিরি ট্রেন্ড রয়েছে। এই তো বছর খানেক আগে তিলজলায় কোন এক ভদ্রলোকের মাথায় ছাদ থেকে বাছুর পড়ে গিয়ে কি কেলেঙ্কারি! তাই হে আমার বঙ্গবাসী, ‘ব’ হইতে সাবধান। আমার তো মনে হয় সব রাজ্য সরকারের অফিসের গেটেই লিখে দেওয়া উচিত; ‘ব’ হইতে সাবধান। কারণ কেউ বলতে পারে না গেটের মাথার ‘ব’ কখন পপাত চ হবে।
মোদ্দা কথা দিনকাল খুব খারাপ। সামনে এমন দিন আসছে, যেদিন আপনি মনের সুখে চপ ল্যাংচাও খেতে পারবেন না। খালি মনে হবে, এই বোধহয় ল্যাংচা/চপ হাবের গেটের মাথা থেকে ‘ব’ খুলে পড়ল মাথায়।
শান্তির আশায়
এবং
‘ব’ মাথায় না পড়ার প্রার্থনায়,
নীল
ব হইতে
সাবধান।😂😂😂
LikeLike
হক কথা…
LikeLike
বক্তব্য সঠিক…
LikeLike