কপাল গুনে জীবনে দু-একবারের বেশী ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়নি আমায়। তাই ডাক্তারের চেম্বারের ভীড়, অ্যাপয়েন্টমেন্টের সমস্যা, সবই এড়ানো গেছে। যাই হোক, কয়েকদিন আগে এক ডাক্তারের চেম্বারে যেতে হয়েছিল, একজনকে ডাক্তার দেখানোর জন্য। ডাক্তার বা রোগীর নাম উহ্য রাখলাম, কারণ সেটা প্রয়োজনীয় নয়। তবে এই ডাক্তারবাবু একজন সাইকায়াট্রীস্ট। রোগীটি আমি না, যদিও অনেকে মনে করেন সেটা আমারই হওয়া উচিত- যাকগে; চেম্বারে বসতে গিয়ে আমার চক্ষু চরকগাছ। আরিব্বাবা! কি ভীড় রে মাইরি! যেন গোটা কলকাতার তামাম পা… মানে মনোরোগী এই ডাক্তারখানায় এসে জুটেছে। বসে রইলাম, আমাদের ডাক আসার আগে, অনেক রোগী এল… গেল… ব্যাপার হল, তাদের বয়স ৮ থেকে ৮০; স্কুলপড়ুয়া বাচ্চা থেকে রিটায়ার্ড প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া। এসব দেখতে দেখতে, হঠাৎ কেমন গুলিয়ে গেল।
স্কুলপড়ুয়া বাচ্চা ? তারও মনোরোগ ??
দেখেই কেমন দুম করে মনে হয় সবই মা-বাবার দোষ, চিরাচরিত হিসাবে। স্কুল-কোচিং-ক্রিকেট-গান-নাচ সব কর। তারপর রেজাল্ট খারাপ হলে বকুনি; আর যদি ডিপ্রেশন এসেই যায়, চিন্তা নেই বাবা! সেরা ডাক্তার দেখাবো; কিন্তু চাপ কমানো তো যাবে না ! কারণ সেখানেও সেই ‘শর্মাজি কা বেটা’ সিচুয়েশন।
পাশের বাড়ির পল্টুর তো রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে না! তোমার কেন হবে? মেধা? টিউটরের ওজনে আমরা মেধার পাল্লা উলটে দেব। এইসব কথাগুলো কেমন ঝরঝর করে মনের মধ্যে ঝরে পড়ল। আর তারপরই মনে হল,
কে আসলে অসুস্থ ?
চেম্বারে যারা ভীড় করেছে তারা, নাকি আমি, যে মেনে নিতে পারছি না, যে কর্পোরেট যুগের ইঁদুর দৌড়ে শরীর মন মন নষ্ট হবে, সেটাই স্বাভাবিক, সেটাই নতুন বাস্তব; আগামী প্রজন্মের শিশুরা মাতৃদুগ্ধে গুলে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাবে, সেটাই ভবিষ্যৎ।
মানতে পারলাম না। তাহলে কি ভবিষ্যতে এভাবেই বেড়ে চলবে মনোরোগীর সংখ্যা? তাহলে কি আমাদের আগামী শুধুই ‘সাপ-লুডো খেলবে বিধাতার সঙ্গে’ ?
জানি, পুজো শেষের ডিপ্রেশন পোস্টে ফুটে ফুটে বেরোচ্ছে, তবু, আমি অপারগ। কথাগুলো জমানো ছিল, উগড়ে দিলাম।
শান্তির আশায়
নীল
পুনশ্চ ঃ পোস্টের হেডিংটা কবির সুমন (সুমন চট্ট্যোপাধায়)-এর ‘পাগল’ গানের লাইন। নীচে ইউটিউব লিংক রইল…
Osadharon
LikeLike
হ্যা বেপারটা এখন খুব বেড়েছে…
সবাই প্রথম স্থান দখল করতে চায়…
LikeLike